Ajay River

Flood: ‘গাছ ডুবছে, বাঁচার চেষ্টায় মগডালে আমরা আর তিনটি সাপ, চোখের সামনে গরুগুলো ভেসে গেল’

একটায় আমি আর আমার মামা সামসুল খান, অন্য গাছে গ্রামেরই ফতেপুরের রাইফেল মণ্ডল। অজয় নদের এমন চেহারা দেখিনি!

Advertisement

শাজাহান খান (অজয়ের চরে আটকে থাকা আউশগ্রামের ফতেপুরের এক বাসিন্দা)

শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০২১ ০৬:৫৭
Share:

অজয়ের তোড়ে ভেঙেছে বাড়ি। ছবি: কল্যাণ আচার্য

জল বাড়ছে বুঝেই ফিরতে চেয়েছিলাম। কিন্তু গরুগুলো ভয়ে চর থেকে নড়তে চাইল না। ওদের বাঁচাতে গিয়েই ডুবতে বসেছিলাম! অজয় নদের এমন চেহারা দেখিনি!

Advertisement

জিলিপি গাছের মগডালে বসেছিলাম। একটায় আমি আর আমার মামা সামসুল খান, অন্য গাছে গ্রামেরই ফতেপুরের রাইফেল মণ্ডল। কাঁটা গাছের খোঁচায় হাত-পা ছড়েছে আমাদের। যন্ত্রণা, খিদে-তেষ্টাও ভুলেছিলাম। শুধু অপেক্ষা, কেউ না কেউ আসবে।

রোজই আউশগ্রামের সোন্দলপুরে অজয়ের চরে গরু চরাই। বৃহস্পতিবার সকালে বাড়ি থেকে খাবার, জল নিয়ে তিন জন রওনা দিই। বাঁধ থেকে চর কিলোমিটার খানেক ভিতরে। বেলা ১১টা থেকে জল বাড়ছিল। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই চর ডুবতে থাকে। রাইফেলের কাছে মোবাইল ছিল। বাড়ির লোককে সব জানায় ও। জল বাড়ায় প্রাণ বাঁচাতে কাঁটা গাছে উঠি। গরুগুলো ভেসে যায়। জল বাড়ে, আমরাও ডাল ধরে উপরে উঠতে থাকি। সন্ধ্যা নামে। মোবাইলের ব্যাটারিও শেষ। বারবার বউ, ছেলে-মেয়ের মুখ ভেসে উঠছিল।

Advertisement

জলের ধাক্কায় গাছ নড়ছে। কাঠপিঁপড়ে কামড়াচ্ছে হাতে। রাইফেলের চিৎকার, ‘‘গাছে তিনটে সাপ উঠেছে।’’ পাঁচন (গরু চরানোর লাঠি) দিয়ে সাপ সরায় ও। শেষ বার যখন গ্রামের লোকের সঙ্গে কথা হয়েছিল, শুনেছিলাম, প্রশাসন উদ্ধারের ব্যবস্থা করছে। আর কত ক্ষণ! একটা আলো দেখতে পাই। কিন্তু কিছুটা এসে ফিরে যায় সেটা। পাঁচ-ছ’ঘণ্টা পরে ফের আলো। এ বার স্পিডবোট আসে। রাত ২টো নাগাদ পাড়ে ফিরি। কিন্তু এত দেরি কেন?

পরিবারের কাছে শুনলাম, মঙ্গলকোট আর আউশগ্রাম ব্লক প্রশাসন চরের এলাকা কার, তা নিয়ে ‘ঠেলাঠেলি’ করছিল। তা ছাড়া, জেলায় না কি তিনটে স্পিডবোট আছে। তার দু’টো সকালে আসানসোলে য়ায়। অন্যটা বিকেলে এখানে আসে। কিন্তু রওনা দেওয়ার দশ মিনিটের মধ্যে প্রপেলারে ভেসে আসা গাছপালা জড়ানোয় বোট ফেরাতে হয়। রাত ১১টা নাগাদ ফের রওনা হয় বোট। আর একটু তাড়াতাড়ি করা যেত না!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন