Flood Situation in Bengal

মাইথন, পাঞ্চেত থেকে ছাড়া হল ৫৭ হাজার কিউসেক জল! জলের তলায় হুগলির খানাকুল, হরিপাল, বাঁকুড়ায় মৃত ১

বিপুল পরিমাণ জল দামোদর নদ বেয়ে পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুর ব্যারেজ হয়ে হাওড়া, হুগলি এবং পূর্ব বর্ধমানের দিকে প্রবাহিত হচ্ছে। সঙ্গে গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি। ফলে সব মিলিয়ে ওই জেলাগুলিতে বন্যার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০২৫ ১৫:১৮
Share:

জলমগ্ন বিস্তীর্ণ এলাকা। ছবি: পিটিআই।

আরও জল ছাড়ল দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন (ডিভিসি)। বুধবারের পর বৃহস্পতিবার সকাল থেকে এখনও পর্যন্ত পাঞ্চেত ও মাইথন জলাধার থেকে প্রায় ৫৭ হাজার কিউসেক জল ছাড়া চলছে। এর মধ্যে পাঞ্চেত থেকে প্রায় ৩৮ হাজার কিউসেক এবং মাইথন থেকে ১৮ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। ফলে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে দামোদর তীরবর্তী এলাকায়।

Advertisement

এই বিপুল পরিমাণ জল দামোদর নদ বেয়ে পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুর ব্যারেজ হয়ে হাওড়া, হুগলি এবং পূর্ব বর্ধমানের দিকে প্রবাহিত হচ্ছে। সঙ্গে গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি। ফলে সব মিলিয়ে ওই জেলাগুলিতে বন্যার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ডিভিসি-র জল ছাড়ার ফলে ইতিমধ্যেই হুগলির খানাকুল, আরামবাগ, হাওড়ার আমতা, উদয়নারায়ণপুরের মতো এলাকাগুলি প্লাবিত হওয়ার মুখে। আশঙ্কা রয়েছে বাঁকুড়া ও পশ্চিম বর্ধমানেও। লাগাতার বৃষ্টির জেরে বাঁকুড়ায় বাড়ি চাপা পড়ে মৃত্যু হয়েছে এক ব্যক্তির।

হুগলি

Advertisement

জল ছাড়ার জেরে ইতিমধ্যেই আরামবাগের খানাকুলে বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়ে গিয়েছে। খানাকুল ২ নং পঞ্চায়েত সমিতির সুন্দরপুর এলাকায় ধসে গিয়েছে একাধিক ঘর। কয়েকটি বাড়িতে বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। কোথাও হেলে পড়েছে বাড়ির একাংশ। রীতিমতো আতঙ্কে রয়েছেন এলাকাবাসী। কয়েক জন আবার জলমগ্ন দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে বিজেপির পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি রুম্পা মণ্ডলের দ্বারস্থ হন। তিনিও জল পেরিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন। দ্রুত পরিস্থিতির সুরাহা করার আশ্বাস দিয়েছেন রুম্পা। একই দৃশ্য আরামবাগের পান্ডুগ্রামেও। এলাকার একটি খাল দিয়ে হু হু করে জল ঢুকছে। পাল্লা দিয়ে জল বাড়ছে এলাকায়। স্থানীয় সূত্রে খবর, পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে এলাকায় যান সরকারি আধিকারিক ও জন প্রতিনিধিরা। তবে জলযন্ত্রণা চলছেই!

হরিপাল ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকার কৃষিজমি জলের তলায় চলে গিয়েছে। আমন ধানের মরসুমে বিঘার পর বিঘা জমিতে জল উঠে যাওয়ায় মাথায় হাত পড়েছে চাষিদের। কৃষকদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে ব্লক প্রশাসন। কিন্তু তাতে উদ্বেগ কমছে না। উল্লেখ্য, হরিপাল ব্লকের একাংশ দিয়েই বয়ে গিয়েছে দামোদর নদের সঙ্গে সংযোগকারী ডাকাতিয়া খাল। বৃষ্টি এবং ডিভিসি-র জল ছাড়া মিলিয়ে ফি বছর ডাকাতিয়া খাল উপচে গিয়ে জলমগ্ন হয়ে যায় হুগলির বিস্তীর্ণ এলাকা। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছরের অন্যান্য সময়ে এই খালের জলস্তর কম থাকলেও এখন সেই খাল দিয়ে নদীর স্রোতের মতো জল বইছে। সেই খালের জল উপচে জলমগ্ন হয়ে গিয়েছে হরিপাল ব্লকের সহদেব, দ্বারহাটা ও কৈকালা গ্ৰামপঞ্চায়েতের বিস্তীর্ণ এলাকার কৃষি জমি। কলুবাটি, ভগবতীপুর, খাজুরিয়া, কনকপুর, পার্বতীপুর, কৃষ্ণবল্লভবাটি-সহ একাধিক গ্ৰামের কৃষিজমি জলের তলায়। ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, হরিপাল ব্লকের ১০ হাজার হেক্টরেরও বেশি চাষের জমি জলমগ্ন। ফলে মাথায় হাত পড়েছে ধান চাষিদের। খাল সংস্কারের পাশাপাশি ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

বাঁকুড়া, পুরুলিয়া

মুকুটমনিপুর জলাধার থেকে জল ছাড়ার পরিমাণ কমানোয় বাঁকুড়ার নদীগুলিতে জলস্তর নামতে শুরু করেছে। বুধবার থেকে বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ায় সে ভাবে ভারী বৃষ্টিও হয়নি। ফলে বুধবার বেলা ৩টে থেকেই জলাধার থেকে ছাড়া জলের পরিমাণ কমিয়ে আনে সেচ দফতর। ছাড়া জলের পরিমাণ এক ধাক্কায় পাঁচ হাজার কিউসেক কমিয়ে ২২,৫০০ কিউসেকে নামিয়ে আনা হয়। এর পর থেকেই ধীরে ধীরে জলস্তর কমতে শুরু করেছে কংসাবতী নদীর নিম্ন অববাহিকায়। জলস্তর নামছে বাঁকুড়ার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া দ্বারকেশ্বর, গন্ধেশ্বরী, শিলাবতী, শালী ও ভৈরোবাঁকি নদীতেও।

বৃষ্টিতে বাড়ি ধসে পড়ে বুধবার সন্ধ্যায় এক প্রৌঢ়ের মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম সাধন বাউরি (৬১)। বাঁকুড়ার বড়জোড়া ব্লকের হাট আশুড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন সাধন। রোজকার মতো জমিতে ধান রোপণের কাজ সেরে সন্ধ্যায় বাড়িতে ফিরেছিলেন ওই প্রৌঢ়। ঘরে ছিলেন তাঁর স্ত্রীও। দু’জনে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। আচমকাই হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে বাড়ি। শব্দ পেয়ে পরিবারের অন্য সদস্যেরা ছুটে এসে দেখেন, মাটির বাড়িটি ধসে পড়েছে। স্থানীয়েরাই তড়িঘড়ি ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে গুরুতর আহত সাধন ও তাঁর স্ত্রীকে বার করে আনেন। তাঁদের বড়জোড়া সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা সাধনকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন সাধনের স্ত্রী সারথি।

পশ্চিম বর্ধমান

বৃহস্পতিবার জল ছাড়ার পরিমাণ আরও বাড়িয়েছে ডিভিসি। মাইথন ও পাঞ্চেত— দুই জলাধার থেকেই জল ছাড়া শুরু হয়েছে। বুধবার ৪৮ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছিল। তবে বৃহস্পতিবার জল ছাড়ার পরিমাণ বেড়ে প্রায় ৫৭ হাজার কিউসেক হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে মাইথন থেকে ৩৮ হাজার এবং পাঞ্চেত থেকে প্রায় ১৮ হাজার জল ছাড়া হয়েছে। ফলে বৃহস্পতিবারও সতর্কতা জারি রয়েছে নদী তীরবর্তী এলাকায়।

ডিভিসির এই পদক্ষেপ নিয়ে আবারও রাজ্য সরকারের সঙ্গে পূর্ব আলোচনা না করার অভিযোগ উঠেছে। উল্লেখ্য, অতীতে একাধিক বার ডিভিসির এ ভাবে জল ছাড়ার সমালোচনা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই বন্যাকে ‘ম্যানমেড’ বলেও অভিহিত করেছিলেন তিনি। যদিও ডিভিসির তরফে জানানো হয়েছে, ঝাড়খণ্ডে হাজারিবাগ, ধানবাদ, বোকারো-সহ দামোদর নদের উচ্চ অববাহিকায় বৃষ্টির পরিমাণ বেড়ে গিয়েছে। ফলে জলাধারে জলের চাপও বেড়েছে। সে কারণেই জল ছাড়ার এই সিদ্ধান্ত। ডিভিসির তরফে এক কর্তা জানিয়েছেন, তাঁরা যে পরিমাণ জল ছাড়ার জন্য নির্দেশ পান, সেটুকু জলই ছাড়া হয়। যে কমিটি এই নির্দেশ দেয়, তার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ সরকার, ঝাড়খণ্ড সরকার এবং ডিভিসি কর্তৃপক্ষ-সহ কেন্দ্রীয় জল কমিশনের প্রতিনিধিরা রয়েছেন। এই কমিটি জলাধারে জলের পরিমাণ এবং বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বিচার করে সিদ্ধান্ত নেয় কোন জলাধার থেকে কতটা জল ছাড়া হবে। সেই সিদ্ধান্তের কথা ডিভিসিকে জানালে ডিভিসি শুধুমাত্র জল ছাড়ার কাজ করে। ফলে এই ভাবে দোষারোপের কোনও যুক্তি নেই। তবে আসন্ন পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে রাজ্যের সেচ দফতরের তরফে সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলির বাসিন্দাদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। সেচ দফতরের এগ্‌জ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়াররা জানিয়েছেন, দুর্গাপুর ব্যারেজে জলের চাপ বাড়লে সেখান থেকেও জল ছাড়ার পরিমাণ বাড়তে পারে। ফলে আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে পরিস্থিতি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement