পাত পেড়ে। শুক্রবার বইমেলার ফুডকোর্টে বিশ্বনাথ বণিকের তোলা ছবি।
লেখালেখির লোকেদের নাকি একটু ভাল চা না-হলে চলে না! টি ব্যাগে সুগন্ধী ক্লোনাল বা উলং সাজিয়ে সুভদ্র দম্পতি বলছেন, ‘‘পাঁচটা মিনিট, চা-টা জুড়োতে দিন! হড়বড়ালে ভাল চায়ের মজা নষ্ট।’’
ডুয়ার্সের মিশন হিল চা-বাগিচার কর্তা শুভদীপ রায় ও তাঁর স্ত্রী অপালা ভদ্র রায়ের সঙ্গে ‘চায়ে পে চর্চা’ জমেছে বইমেলায়। বইমেলার সাহিত্য উৎসবে দেশি-বিদেশি অতিথি থেকে আম কেতাবপ্রেমী— কাত এই ‘চাঙ্গায়নী সুধা’য়। ভাল কফি বরং বড় একটা মিলছে না, বলতে বলতে বিবেকানন্দের কফি-প্রীতির গল্প বলছিলেন শঙ্কর। তাঁর নতুন বই ‘আহারে অনাহারে বিবেকানন্দ’ (দে’জ) এখন গপগপিয়ে খাচ্ছে বইমেলার বাঙালি। চা-বিষয়ক ভাল বই কিছু দেখলেন? নিয়োগী বুক্স-এর ‘চায়ে’ কিংবা ‘ফ্যামিলি বুক স্টোর’-এর ‘টি’ উল্টেপাল্টে অপালার মন্দ লাগেনি।
বইয়ের আখড়ায় পেটুকদের নোলাবাজি নিয়ে সাধারণত নাক সিঁটকোন অনেক জ্ঞানীগুণীই। তবে শুধু ফুডকোর্ট বা ইতি-উতি মাছভাজা, বিরিয়ানির স্টল নয়। ছোট-বড় প্রকাশকের ঘরেও দিব্যি মিলছে সুখাদ্যের সুগন্ধ। দিঘার মাছভাজার স্টলটিতে ইলিশ পাতুরি-র বিজ্ঞাপন ঝুললেও ইলিশ আসেনি। তাতে দুঃখ নেই, শুক্রবার কৃষ্ণনগর থেকে আসা প্রবীণ মৎস্যপ্রেমী সমীর চৌধুরীর। খোয়াবনামা-য় নতুন করে মুদ্রিত দিগেন বর্মণের গবেষণালব্ধ ‘ইলিশ-পুরাণ’ পেয়ে বিগলিত তিনি। ‘‘এ বইটায় নাকি মাঝিদের ইলিশ রান্নার গল্পও আছে... এই বয়সে শুধু পড়েই সুখ!’’ হাসতে হাসতে বলে গেলেন।
একদা শিলচরে কর্মরত অঞ্জন দাসও ফলের আশা না-করেই শুঁটকি রান্নার বই কিনেছেন। এখানে আর কে ও-সব রাঁধবে? তবু বাংলাদেশের মূর্ধন্য প্রকাশনীর বইটিতে বিচিত্র শুঁটকির ফিরিস্তি তাঁর কাছে মলাট-বন্দি স্বাদু অভিধান। দে’জ-এর বই, মিলন দত্তের ‘বাঙালির খাদ্যকোষ’ও বাঙালির এ কাল-সে কালের হেঁসেল থেকে স্বাদজগতের বর্ণানুক্রমিক অভিধান খাড়া করার চেষ্টা করেছে।
নিছকই রান্নার বই নয়, ইন্টারনেটে বিচিত্র ফুড ব্লগ আর রেস্তোরাঁ-কিস্সার অ্যাপের জমানায় খানাপিনার গালগল্পও মেলার আকর্ষণ। সুবর্ণরেখা-য় সমীর দাশগুপ্তের ‘সুখাদ্যের সন্ধানে’ অনেক দিন বাদে ফের পাওয়া যাচ্ছে। গাজিয়াবাদবাসী রান্নাপটু বঙ্গযুবা সৌরাংশু স্বহস্তে শুক্তো থেকে বিরিয়ানি রাঁধেন। দেশ-বিদেশের রান্না-আবেগে ভরপুর তাঁর নেটের নানা লেখা জুড়েই সৃষ্টিসুখ ‘ফিসফাস কিচেন’ বইটি ছেপেছে।
নিন্দুকেরা যা-ই বলুন, নির্লজ্জ নোলাবাজদের কাছে আগরা মানে মোরব্বা, সুন্দরবন মানে কাঁকড়া আর বইমেলা মানে বেনফিশ! জম্পেশ অ্যাডভেঞ্চারের মেজাজে লেখা দামু মুখোপাধ্যায়ের ‘খ্যাঁটনসঙ্গী’তে (লিরিকাল) পুরোদস্তুর খাদ্য পর্যটনের মেজাজ। ওই প্রকাশকদেরই বই সামরান হুদার ‘স্বাদ-সঞ্চয়িতা’! তাতে গত শতকের শেষ দিকে বাংলার গ্রাম-শহরের ভোজ-ইতিহাসের স্বাদু বিবরণ।
স্বাদ ও সাহিত্যের জোড়া টানেই মিলনমেলায় পড়ে আছেন ঢাকার রজতকান্তি রায়, নেটপাড়ায় যাঁর নাম হল অনার্য তাপস। কলকাতার রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য সান্যাল ও তাঁর সম্পাদনায় ‘নুনেতে ভাতেতে’ এ বার বইমেলায় এসেছে। ‘দ্য কাফে টেবল’ প্রকাশিত খাদ্যসংস্কৃতি বিষয়ক সংকলনটিতে পার্সি-কাশ্মীরি থেকে ত্রিপুরা-চাটগাঁয়ের ভোজের খবর।