অনুব্রত মণ্ডল
অভিযোগ ছিল, প্রকাশ্য সভায় পুলিশের উপরে ‘বোম’ মারতে বলেছেন তিনি। কিন্তু, সেই তিনি-ই যে ওই মন্তব্য করেছেন, আদালতে তা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হল পুলিশই!
অতএব উস্কানিমূলক বক্তব্য মামলায় বেকসুর খালাস পেলেন বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। বুধবার সিউড়িতে জেলার মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট নিরুপম কর এই রায় শোনান। গত ১৫ ডিসেম্বর চূড়ান্ত শুনানিতে তাঁর মক্কেলকে খালাস করার পক্ষে পুলিশি গাফলতির যে দিকগুলি যুক্তি হিসাবে তুলে ধরেছিলেন অনুব্রতর আইনজীবী, এ দিন বিচারক রায় দানের সময় সেগুলির উল্লেখ করেন।
দিনের শেষে বোলপুর শহরের নীচুপট্টিতে নিজের বাড়িতে বসে অনুব্রত বলেন, ‘‘আদালতের প্রতি আমার আস্থা আছে। আইনকে আমি প্রচণ্ড শ্রদ্ধা করি। প্রথম থেকেই বলে আসছিলাম, এটা মিথ্যা মামলা। বিচারক তাই বেকসুর খালাসের নির্দেশ দিয়েছেন। আমি খুশি।’’ ওই ধরনের হুমকি দেননি দাবি করেও বলে দিলেন, ‘‘আর যদি বা বলেছি, তবে স্লিপ অব টাং!’’
কী ছিল সেই ‘স্লিপ’?
২০১৩ সালে পঞ্চায়েত ভোটের ঠিক আগের সময়। অভিযোগ, দলের প্রচারে পাড়ুই থানার কসবার সভায় অনুব্রত মাইক হাতে বলেন, ‘‘যদি কোনও প্রশাসন ভাবে, নির্দলকে সমর্থন করবে, সেই প্রশাসনের পুলিশের উপরে বোম মারুন। আমি বলছি, বোম মারতে!’’
ঘটনাপ্রবাহ বলছে, ওই বক্তৃতার পরেই কসবা অঞ্চলে একাধিক নির্দল প্রার্থীর (বিক্ষুব্ধ তৃণমূল) বাড়িতে হামলা, বোমাবাজি হয়। খুন হন নির্দল প্রার্থী হৃদয় ঘোষের বাবা সাগরচন্দ্র ঘোষও। হৃদয় অবশ্য এখন অনুব্রতর শিবিরেই। প্রথমে পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে লঘু ধারা দিলেও আদালত জামিন-অযোগ্য ধারায় মামলা করতে বলে। তার পরেও জামিনযোগ্য ধায়ায় চার্জশিট দেওয়া হয়। বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয় গত বছর ডিসেম্বরে। অনুব্রতর আইনজীবী মৃদুল দে-র দাবি, ‘‘যে বক্তব্য নিয়ে এই মামলা, তা যে আমার মক্কেলই রেখেছিলেন— তা প্রমাণ করতে পারেনি পুলিশ।’’
গোটা মামলায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন বিরোধীরা। ওই বিতর্কিত বক্তৃতার ফরেন্সিক রিপোর্ট এসেছিল দু’বছর আগেই। অথচ তা আদালতে জমা পড়ে চলতি নভেম্বরে। সেই রিপোর্টেই দেখা যাচ্ছে, অনুব্রতর গলার স্বরের নমুনাই ল্যাবে পাঠায়নি পুলিশ। ফলে বক্তৃতার স্বর তাঁরই কিনা, পরীক্ষা করা যায়নি! এ দিন বিচারকেরও পর্যবেক্ষণ, ‘‘ল্যাব জানিয়েছে বক্তৃতার সিডি বা ডিভিডি আসল। কিন্তু, তাতে এটা প্রমাণ হয় না যে, কণ্ঠস্বর অভিযুক্তেরই। তদন্তকারী এজেন্সি সঠিক ভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করেনি।’’
বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী যেখানে সহায়, সেখানে কোন পুলিশের ক্ষমতা আছে, অনুব্রতকে দোষী প্রমাণ করার!’’ বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তীর অভিযোগ, ‘‘উনি দক্ষ সংগঠক। দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীর হাত তাঁর মাথার উপরে আছে। পুলিশ-প্রশাসন তাই তাঁকে দোষী প্রমাণ করতে উদ্যোগী হয়নি।’’