এক দিকে বুনো দামালেরা। অন্য দিকে জোরালো আলো, মাইক আর শিকল নিয়ে সাক্ষাৎ ‘ঐরাবত’!
অর্থাৎ এক অর্থে হাতিদের সঙ্গে ‘হস্তিসম্রাট’-এর লড়াই। হস্তিকুলের মহাভারতে এটা মুষল পর্ব না-হলেও এই দুইয়ের লড়াইয়ে মনুষ্যকুলের কিছুটা হলেও সুরাহা হচ্ছে। কেননা শেষমেশ কিছুটা হলেও পিছু হটেছে বুনোরা। তাতে গত এক বছরে এ রাজ্যে বুনো হাতির হামলায় প্রাণহানি অনেকটা কমেছে, বলছে বন দফতর।
ওই দফতর সূত্রের খবর, ২০১৫ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৬ সালের মার্চ পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে হাতির হানায় প্রাণ হারিয়েছেন ১১২ জন। সেই তুলনায় ২০১৬ সালের এপ্রিল থেকে চলতি মাস পর্যন্ত হাতির হানায় মৃত্যু হয়েছে ৬৫ জনের। অর্থাৎ ফারাকটা সাতচল্লিশের। বনকর্তারা বলছেন, সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর— এই সময়েই হাতির হামলার ভয় বেশি। মার্চে মৃতের সংখ্যা আর বাড়বে না বলেই আশা করছেন তাঁরা।
কী এই ‘ঐরাবত’?
এই ঐরাবত দেবলোক থেকে নেমে আসা ইন্দ্রের বাহন নয়। এই ঐরাবত আসলে একটি বাহিনীর নাম, জানাচ্ছে বন দফতর। একটি ম্যাটা়ডর ভ্যানে বনকর্মীদের সঙ্গে জোরালো আলো, মাইক, ঘুমপাড়ানি বন্দুক, শিকল থাকে। কোনও এলাকায় এক বা একাধিক গুন্ডা হাতি ঢুকলেই এই ঐরাবত সেখানে গিয়ে তাদের খেদিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। প্রয়োজনে হাতিকে পাকড়াও করে শায়েস্তা করা হয়। বন্যপ্রাণ শাখার এক পদস্থ কর্তা জানান, গোটা রাজ্যে, বিশেষ করে দক্ষিণবঙ্গে হাতির হামলায় নাজেহাল হতে হচ্ছিল বন দফতরকে। হাতির হামলা ঠেকাতে না-পেরে বারবার বিক্ষোভের মুখে পড়ছিলেন দফতরের কর্মীরা। একের পর এক মৃত্যুর জেরে প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তর থেকেও ক্রমাগত তিরস্কৃত হচ্ছিল বন বিভাগ। সেই সময়ে দামালদের সামাল দিতে এই ঐরাবত-বাহিনীকে নামানো হয়। মূলত দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতেই এদের মোতায়েন করা হয়েছে।
‘‘এর বাইরে পশ্চিম মেদিনীপুরে এখন হাতি রয়েছে বলে আরও একটা বিশেষ গাড়িকে নামানো হয়েছে,’’ বললেন রাজ্যের বন্যপ্রাণ শাখার বনপাল (সদর) শুভঙ্কর সেনগুপ্ত।
বন দফতরের অনেকে বলছেন, হাতির পাল সামলাতে ঐরাবতের কৃতিত্ব তো রয়েছেই। সেই সঙ্গে গ্রামাঞ্চলে যে-ধরনের সচেতনতার প্রচার ও প্রসার চলছে, গুরুত্ব রয়েছে তারও। পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকু়ড়ার মতো হাতি-উপদ্রুত জেলার কোন এলাকায় কখন হাতির হানার আশঙ্কা আছে, গাড়ি নিয়ে তা নিয়মিত ঘোষণা করা হচ্ছে। হাতি ঢুকলে কী করতে হবে, কী কী জিনিস এড়িয়ে চলতে হবে— জানানো হচ্ছে তা-ও। এসএমএস করে হাতির যাতায়াতের পূর্বাভাসও দেওয়া হচ্ছে।
বন দফতরের এক কর্তা জানান, অনেক সময়েই গ্রামের মানুষ অজান্তে বুনো হাতির সামনে পড়ে যান। তাতে বিপদ বা়ড়ে। আবার কখনও কখনও অত্যুৎসাহীরাও বিপদে পড়ে যান। ‘‘গত বছর একটি লোক তো বুনো হাতির সঙ্গে সেলফি তুলতে গিয়ে পায়ে পিষ্ট হয়ে গিয়েছিল,’’ বললেন বন দফতরের এক অফিসার।