গ্রাফিক তিয়াসা দাস।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার যুব তৃণমূল সভাপতি অনিরুদ্ধ হালদারের গাড়ি আটকে তাঁর উপর হামলার অভিযোগ উঠল। শুধু তাই নয়, ওই নেতার দেহরক্ষীর রিভলভার ছিনিয়ে নেওয়ারও চেষ্টা করে দুষ্কৃতীরা। মঙ্গলবার রাতের ওই ঘটনায় দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাঁদের এক জনের বাড়ি উত্তরপ্রদেশের মুজফ্ফরনগরে। ঘটনায় জড়িত আরও দু’জনের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ।
অনিরুদ্ধ এমনিতে যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত। গোটা ঘটনার কথা তিনি অভিষেককে জানিয়েছেন বলে দাবি করেছেন। প্রায় এক বছর ধরে সরকারি দেহরক্ষী পাচ্ছেন অনিরুদ্ধ। তাঁর দাবি, ‘‘এর আগেও একাধিক বার হুমকি ফোন পেয়েছি। তার পরেই প্রশাসন আমাকে দেহরক্ষীর বন্দোবস্ত করে দেয়। কিন্তু, তার পরেও এমন হামলা হবে বাবতে পারিনি।’’
মঙ্গলবার রাতে গড়িয়া স্টেশনের কাছে ঘটনাটি ঘটেছে। সোনারপুর থানায় এই বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করেছেন অনিরুদ্ধর দেহরক্ষী সঞ্জিৎ হালদার। পুলিশকে তিনি জানিয়েছেন, ওই দিন রাত সওয়া ১০টা নাগাদ অনিরুদ্ধ গড়িয়া স্টেশনের কাছে তাঁর শ্রীনগরের বাড়িতে যাচ্ছিলেন। গাড়িতে সঞ্জিৎও ছিলেন। সেই সময়ে গড়িয়া স্টেশনের কাছে একটি মিষ্টির দোকানের সামনে তাঁদের রাস্তা আটকে দাঁড়িয়ে পড়ে একটি অ্যাপ-ক্যাব। মুহূর্তেই গাড়ি থেকে নেমে আসে জনা চারেক যুবক। তার পর অনিরুদ্ধের গাড়ির দরজা খুলে তাঁর সামনে যাওয়ার চেষ্টা করে। সেই সময় সঞ্জিৎ তাদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন। তাঁর সঙ্গে আততায়ীদের ধস্তাধস্তি শুরু হয়। তাঁকে ব্যাপক মারধর করা হয়। এমনকি, সঞ্জিতের রিভলভারও কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে ওই আততায়ীরা।
আক্রান্ত তৃণমূল নেতা (বাঁ দিকে) ও তাঁর দেহরক্ষী। —নিজস্ব চিত্র
বুধবার অনিরুদ্ধ বলেন, “গাড়ির পেছন থেকে দু’জন এবং সামনে থেকে এক জন দৌড়ে আমার গাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায়। কিছু বোঝার আগেই ওই যুবকরা গাড়ির দরজা খুলে ফেলে। তখন তাদের আটকানোর চেষ্টা করেন আমার দেহরক্ষী। সঞ্জিতকে ওরা ব্যাপক মারধর করে। তার মধ্যেই সঞ্জিতের সার্ভিস রিভলভার ছিনতাই করার চেষ্টা করে।” তাঁর দাবি, ধস্তাধস্তির মধ্যেই আশপাশের কিছু লোক জন জড়ো হয়ে যায়। তাঁরাই হামলাকারীদের মধ্যে দু’জনকে ধরে ফেলেন। বাকি দু’জনকে নিয়ে চম্পট দেয় ওই অ্যাপ-ক্যাবের চালক। অনিরুদ্ধের দাবি, “যে দুই যুবককে পাকড়াও করা হয় তারা মদ্যপ অবস্থায় ছিল। তাদেরই এক জন অবিনাশ কুমার সিংহ। ছেলেটির ফেসবুক প্রোফাইল থেকে আমরা জানতে পারি সে উত্তর প্রদেশের মুজফ্ফরনগরের বাসিন্দা এবং সেখানকার সক্রিয় বিজেপি কর্মী।” হিন্দিভাষী ওই যুবকদের হাতে আক্রান্ত হওয়ার পেছনে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র আছে বলে দাবি করেছেন অনিরুদ্ধ।
আরও পড়ুন: গোয়েন্দাদের ঘোল খাইয়েই পালিয়েছিল খাগড়াগড়ের কওসর
ওই রাতেই অবিনাশ এবং তাঁর সঙ্গী অভিষেক সিংহকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। ধৃতদের জেরা করে তাঁদের সঙ্গীদের নাম জানতে পেরেছে পুলিশ। সবাই গড়িয়া এলাকাতেই থাকেন। অনিরুদ্ধের আশঙ্কা, এর পেছনে রাজনৈতিক কোনও আক্রোশ থাকতে পারে। তিনি বলেন, “আমার দেহরক্ষী পুলিশের উর্দিতে ছিলেন। তার পরেও আমাদের উপর যে ভাবে হামলা হল, তাতে স্পষ্ট ওরা কতটা বেপরোয়া ছিল।”
আরও পডু়ন: খাগড়াগড় কাণ্ডের চক্রী কওসর কব্জায়
পুলিশ ধৃতদের জামিনঅযোগ্য ধারায় গ্রেফতার করেছে। সোনারপুর থানার এক আধিকারিক বলেন, “বাকিদের হদিশ পেতে আমরা আদালতে ধৃতদের নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন করেছি। এটা কোনও পরিকল্পিত হামলা না অন্য কিছু তা বাকিদের গ্রেফতার করলেই স্পষ্ট হবে।”