মাটি কামড়ে থেকে দিল্লির পথে মহুয়া

এক সময়ে বহুজাতিক সংস্থার উঁচু পদ ছেড়ে রাহুল গাঁধীর ‘আম আদমি কা সিপাহি’ হন তিনি। পরে ‘দিদি’র দলে এসে গত বিধানসভা ভোটে জেতেন করিমপুরের মতো শক্ত আসন।

Advertisement

সুস্মিত হালদার 

শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৯ ০৪:১৩
Share:

গণনা কেন্দ্র থেকে বেরোচ্ছেন মহুয়া মৈত্র। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

এ ছিল তাঁর মর্যাদার লড়াই।

Advertisement

এক সময়ে বহুজাতিক সংস্থার উঁচু পদ ছেড়ে রাহুল গাঁধীর ‘আম আদমি কা সিপাহি’ হন তিনি। পরে ‘দিদি’র দলে এসে গত বিধানসভা ভোটে জেতেন করিমপুরের মতো শক্ত আসন। এ বার তাঁকে আরও বড় মাঠে খেলতে ডেকেছিলেন তৃণমূল নেত্রী। গোটা প্রচার পর্ব তুমুল দৌড়ে কৃষ্ণনগর কেন্দ্রে জয় হাসিল করলেন সেই মহুয়া মৈত্র। লোকসভা তো বটেই, দিল্লির অলিন্দে প্রতিনিধিত্বের মতো আরও একটা ঝকঝকে মুখ পেল তৃণমূল।

পাশের কেন্দ্র রানাঘাটে গেরুয়া ঝড়ে উড়ে গিয়েছে তৃণমূল। কৃষ্ণনগর কেন্দ্রে অবশ্য তাদের বড় ভরসা ছিল প্রায় ৩৭ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোট। বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষা এই জেলায় বিজেপি যত হিন্দুত্বের সুর চড়িয়েছে, নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহেরা প্রচারে এসে যত জাতীয় নাগরিক পঞ্জির কথা তুলেছেন, স্থানীয় নানা ক্ষোভ-বিদ্বেষ সত্ত্বেও মুসলিম ভোট তত তৃণমূলের আঁচলে আশ্রয় খুঁজেছে।

Advertisement

তবে মহুয়ার লড়াইটা সহজ ছিল না। একে তো কৃষ্ণনগরে বিজেপির একটা শক্তি বরাবরই রয়েছে, তার উপরে বাধা ছিল তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্ব। বিজেপি প্রার্থী, জাতীয় দলের প্রাক্তন গোলকিপার কল্যাণ চৌবেও কম বড় হার্ডল ছিলেন না। কিন্তু মহুয়াকে রোখা যায়নি। দলনেত্রী তাঁকে দায়িত্ব দেওয়ার পরেই মহুয়া ছুটতে শুরু করেছিলেন কেন্দ্রের বিভিন্ন প্রান্তে। একমাত্র সঙ্গী কৃষ্ণনগরের পুরপ্রধান অসীমকুমার সাহা।

প্রচার পর্বে মহুয়ার অতিসক্রিয়তা দেখে, মাঝখানের সারির নেতাদের অগ্রাহ্য করে নিচু তলার কর্মীদের সরাসরি নির্দেশ দেওয়া দেখে অনেকেই অসন্তুষ্ট হয়েছেন। একাংশ বসে যেতে চেয়েছেন। ক্ষোভের আঁচ বুঝে সরাসরি দলনেত্রীর কাছে নালিশ করেছেন জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত। কিন্তু মহুয়াকে বাঁকানো যায়নি।

গণনা কেন্দ্রেও দেখা গিয়েছে সেই একই সক্রিয়তা। নিজে ছুটে গিয়েছেন প্রতি রাউন্ডের পরে ‘ফাইনাল শিট’ নিয়ে আসতে। হিসেব করেছেন কোন বিধানসভা কেন্দ্র কত লিড দিয়েছে। আর কত লিড হতে পারে।

ফাঁকে ফাঁকে গল্পগুজব করছিলেন সিপিএম প্রার্থী শান্তনু ঝায়ের সঙ্গে। জয় যখন প্রায় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে, এসে পৌঁছলেন সিপিএমের নদিয়া জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য এস এম সাদিও। তাঁদের দু’জনকেই নিজের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর দিয়ে মহুয়া বললেন, ‘‘আমি যোগাযোগ রাখব। উন্নয়নের কাজে ফোন করবেন।’’

এক দলীয় কর্মীর মোটরবাইকে চেপে মহুয়া যখন বেরিয়ে যাচ্ছেন, শেষ রোদ্দুরে সবুজ আবির উড়ছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement