শিক্ষাকর্মীদের অনশনের দৃশ্য। — ফাইল চিত্র।
১১ দিনের মাথায় অনশন প্রত্যাহার করলেন চাকরিহারা গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি কর্মীরা। উঠল অবস্থানও। সরকারের সঙ্গে বৈঠকের পর বৃহস্পতিবার এমনটাই সিদ্ধান্ত নিলেন সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে চাকরিহারা শিক্ষাকর্মীরা।
বৃহস্পতিবার শিক্ষাকর্মীদের কয়েক জন প্রতিনিধির সঙ্গে দীর্ঘ ক্ষণ বৈঠক করেন মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি রামানুজ গঙ্গোপাধ্যায়। সেখানে বোর্ডের তরফে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, একসঙ্গে রিভিউ পিটিশনের পথে এগোবে সরকার। পাশাপাশি, আইনি লড়াইতেও চাকরিহারা শিক্ষাকর্মীদের পাশে আছেন বলে জানিয়েছেন পর্ষদ-সভাপতি। সেই আবহে অনশন প্রত্যাহার করলেন শিক্ষাকর্মীরা। তবে আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, সরকারের আশ্বাসে নয়, বরং রিভিউ পিটিশনের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্যই আন্দোলন থেকে সরছেন তাঁরা। তা ছাড়া, দীর্ঘ অনশন আন্দোলনের ফলে কয়েক জন শিক্ষাকর্মী অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তাঁদের শারীরিক অবস্থার কথা মাথায় রেখেই এই সিদ্ধান্ত। এমনই এক চাকরিহারা গ্রুপ ডি কর্মী মলয় রায় বলেন, ‘‘আমাদের মূল দাবি ছিল, ‘যোগ্য’দের তালিকা প্রকাশ করতে হবে। তাতে কোনও আশানুরূপ উত্তর দিতে পারেনি পর্ষদ। তবে আইনি লড়াইয়ের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। আমাদের সে জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। তাই সাময়িক ভাবে আন্দোলন থেকে সরছি আমরা।’’
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে চাকরি হারিয়েছেন ২৬ হাজার (আদতে ২৫ হাজার ৭৫৩) শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মী। তার পর থেকেই পথে নেমে আন্দোলন করছেন তাঁরা। একাংশের দাবি, কেন রাজ্য সরকার ‘যোগ্য’ এবং ‘অযোগ্য’দের তালিকা দিল না? চাকরি ফেরতের দাবিতে শিক্ষকদের পাশাপাশি পথে নামেন গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি কর্মীরাও। তাঁদের একাংশ মধ্যশিক্ষা পর্ষদে অনশনও শুরু করেন। তাঁদের অভিযোগ, রাজ্য সরকার শুধু শিক্ষকদের কথা ভাবছে, তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করছে। সুপ্রিম কোর্টে শিক্ষাকর্মীদের হয়ে সওয়াল করা হচ্ছে না। প্রসঙ্গত, শেষ শুনানিতে শীর্ষ আদালত জানিয়েছিল, যাঁরা ‘চিহ্নিত অযোগ্য’ (দাগি) নন, তেমন শিক্ষক-শিক্ষিকারা আপাতত স্কুলে যেতে পারবেন। তবে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে রাজ্য সরকারকে পরীক্ষা নিয়ে নতুন নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। শুধু শিক্ষকদের ক্ষেত্রেই এই নির্দেশ কার্যকর হবে। শিক্ষাকর্মীদের চাকরি বাতিলই থাকছে। এর পরেই চাকরিহারা শিক্ষাকর্মীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। মধ্যশিক্ষা পর্ষদের দফতরের ভিতরে অনশন শুরু করেন আট জন শিক্ষাকর্মী। পরে তাঁদের মধ্যে চার জন অসুস্থ হলে তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। বাকিরা তার পরেও আন্দোলন চালিয়ে গিয়েছিলেন। তার মাঝেই মুখ্যসচিব মারফত মুখ্যমন্ত্রী গত শনিবার নবান্ন থেকে জানিয়ে দেন, মামলার নিষ্পত্তি যত দিন না হচ্ছে, তত দিন চাকরিহারা শিক্ষাকর্মীদের ভাতা দেবে রাজ্য। গ্রুপ সি কর্মীদের মাসিক ২৫ হাজার এবং গ্রুপ ডি কর্মীদের মাসিক ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। শুধু তা-ই নয়, রাজ্য সরকারের তরফে ‘রিভিউ পিটিশন’ করা হবে বলেও জানান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, সেই আইনি প্রক্রিয়া চলা পর্যন্ত রাজ্য সরকার সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পে চাকরিহারা শিক্ষাকর্মীদের ভাতা দেবে রাজ্য সরকার। তার পরেও শিক্ষাকর্মীদের আন্দোলন থামেনি। কিন্তু বৃহস্পতিবার মধ্যশিক্ষা পর্ষদের তরফে আশ্বাসের পর অনশন ভাঙলেন তাঁরা।