Mamata Banerjee and Suvendu Adhikari

মমতাকে ‘লুকিয়ে’ জমি, শুভেন্দুর দাবি ঘিরে বিতর্ক

বিভিন্ন সময়ে শাসক দলের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক রেখে প্রাক্তন ক্রিকেটার সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় নিজের ব্যবসায়িক স্বার্থপূরণের চেষ্টা করেছেন বলেও শুভেন্দুর অভিযোগ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

হলদিয়া ও কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৭:৩৪
Share:

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শুভেন্দু অধিকারী। —ফাইল চিত্র।

বাম আমলে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘লুকিয়ে’ তিনি হলদিয়ায় শিল্পের জন্য জমির ব্যবস্থা করেছিলেন। এবং তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ হিসেবে সেই কাজ তিনি করেছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের ‘অনুরোধে’! বিশ্বকর্মা পুজোর দিনে অতীত ঘেঁটে এমনই দাবি করলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা আদতে শিল্প-বিরোধী, এই অভিযোগকে প্রতিষ্ঠা করতে গিয়েই এমন দাবি করেছেন শুভেন্দু। বর্তমান শাসক দল তৃণমূল এবং তদানীন্তন শাসক সিপিএম, দু’পক্ষই বিরোধী দলনেতাকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি। এরই পাশাপাশি, বিভিন্ন সময়ে শাসক দলের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক রেখে প্রাক্তন ক্রিকেটার সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় নিজের ব্যবসায়িক স্বার্থপূরণের চেষ্টা করেছেন বলেও শুভেন্দুর অভিযোগ।

Advertisement

হলদিয়া শিল্পাঞ্চলে টাটা স্টিল ও টাটা পাওয়ার কারখানায় বিজেপির শ্রমিক সংগঠন আয়োজিত বিশ্বকর্মা পুজোর উদ্বোধনে এসে সোমবার নন্দীগ্রামের বিধায়ক বলেন, ‘‘উনি (মমতা) এত শিল্প-বিরোধী এবং জমি-নীতি বিরোধী ‌যে, আমি ওঁকে লুকিয়ে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের অনুরোধে ২০১০ সালে সাংসদ হিসেবে হলদিয়া এনার্জিকে ১১০ একর জমি পাইয়ে দিয়েছিলাম। সরাসরি‌ হলদিয়া এনার্জির মালিককে (সঞ্জীব গোয়েঙ্কা) জিজ্ঞেস করবেন!’’ শুভেন্দুর আরও দাবি, যে জমি এক লাখ, দেড় লাখ টাকা একরে দেওয়ার কথা হয়েছিল, ‌তাঁর মধ্যস্থতাতেই সেই বাস্তুজমি ৩৫ লক্ষ টাকা একর আর জলাজমি ২৫ লক্ষ টাকা একরে দেওয়ার বন্দোবস্ত হয়। বিরোধী দলনেতা বলেন, ‘‘চাষিদের সঙ্গে মালিকদের বৈঠক হলদিয়ায় অতিরিক্ত জেলাশাসকের দফতরে বসে করিয়ে দিয়েছিলাম।’’ তাঁর দাবি, ‘‘সাড়ে তিনশো জন জমিহারা কাজ পেয়েছেন। ‌তৃণমূলের লোক বেশি পেয়েছে, সেটা ঠিক। ‌কিন্তু আমি বাইরে থেকে লোক এনে ঢোকাইনি।’’ ‌তিনি হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে সরে যাওয়ার পরে হলদিয়া শিল্পাঞ্চলের হতশ্রী দশা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন শুভেন্দু। তাঁর কথায়, ‘‘কলকাতার মানুষ হলদিয়া এসে মাতব্বরি করবে আর এখানকার মানুষ বঞ্চিত হবে, এটা মেনে নেওয়া যায় না!’’

নন্দীগ্রামে জমি আন্দোলনের ফসল তুলে ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে তমলুক কেন্দ্র থেকে সিপিএমের লক্ষ্ণণ শেঠকে হারিয়ে সাংসদ হয়েছিলেন শুভেন্দু। তাঁর দাবি, তার কিছু সময় পরেই হলদিয়ায় শিল্পের জমির জন্য বাম সরকারের ‘অনুরোধে’ তিনি কাজ করেছিলেন। মমতাকে ‘লুকিয়ে’ তাঁর ওই কাজ সম্পর্কে তৃণমূলের রাজ্য নেতা তাপস রায়ের মন্তব্য, ‘‘এ সবের সত্য বা মিথ্যা তিনিই জানেন! তবে রাজ্যের মানুষ জানেন, শুভেন্দুর অস্তিত্ব তৃণমূলের উপরেই নির্ভর ছিল।’’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘নিজের বিশ্বাসযোগ্যতার জন্য শুভেন্দু ইদানিং বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, গৌতম দেবদের নাম ব্যবহার করছেন! উনি কি ২০১০ সালের ওই সময়ে হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান ছিলেন? তা ছাড়া, নিজেই বলছেন তৃণমূল করতেন কিন্তু তৃণমূল নেত্রীকে লুকিয়ে কাজ করেছেন! শুভেন্দু, তৃণমূল সবই এখন সিপিএমের একটু করে নাম নিয়ে বিশ্বাসযোগ্যতা পেতে চাইছে!’’

Advertisement

শিল্প সংক্রান্ত বিতর্ক সামনে আনার পাশাপাশিই শুভেন্দুর অভিযোগ, ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক সৌরভ তাঁর ‘ব্যবসায়িক স্বার্থে’ নানা উদ্যোগের কথা বলেছেন কিন্তু কোনওটাই বাস্তবায়িত হয়নি। ক্রিকেটার ও অধিনায়ক সৌরভকে ব্যক্তিগত ভাবে শ্রদ্ধা করেন জানিয়েও শুভেন্দুর দাবি, বাম আমলের মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ও পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যের সঙ্গে সুসম্পর্কের জেরে তিনি স্পোর্টস অ্যাকাডেমির জন্য জমি নিয়েছিলেন। পরে সেখানে বাণিজ্যিক ভাবে স্কুল করতে গেলে আদালতে মামলা হয় এবং জমি ফেরত দিতে হয়। সৌরভের এখনকার শিল্প-ঘোষণার বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয়ের কথাই বোঝাতে চেয়েছেন বিরোধী দলনেতা।

এই প্রসঙ্গে তৃণমূলের নেতা তাপস বলছেন, ‘‘শুভেন্দুরা নিজেদের আয়নায় দেখছেন সৌরভকে! তাঁর সম্পর্কে প্রশ্ন তুলে শুভেন্দুরা নিজেদের আরও এক বার বাংলা ও বাঙালির বিরোধী প্রমাণ করছেন। কোনও রাজনৈতিক দলের স্বার্থ চরিতার্থ করার দায় নেই সৌরভের। এ রাজ্যে তাঁর বিনিয়োগকে এঁরা কটাক্ষ করছেন, কর্মসংস্থানের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছেন। রাজ্যবাসী বিচার করবেন।’’ প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোকের বক্তব্য, ‘‘মাদ্রিদে গিয়ে সৌরভকে কেন শালবনির বিনিয়োগের ঘোষণা করতে হল, এটা নিয়ে আমারও প্রশ্ন আছে। তবে শুভেন্দুর কথার উপরে মন্তব্য করার মানে হয় না! ক্রিকেটার ও আক্রমণাত্মক অধিনায়ক সৌরভ বাংলার গর্ব, সরকারে থাকার সময়ে তাঁর পাশে দাঁড়ানোয় অন্যায় দেখি না। স্পোর্টস অ্যাকাডেমির জন্য জমি ব্যবহার করতে দেওয়া হয়েছিল, সেখানে অ্যাকাডেমি হয়েছে। স্কুলের জন্য জমি আদালতের হস্তক্ষেপে ফেরত হয়ে গিয়েছে। এই নিয়ে অন্য কিছু বলার নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন