গঙ্গাসাগরে হারানো মানুষদের ফিরিয়ে দিচ্ছে হ্যাম রেডিও

যদ্দূর চোখ যায় থিকথিকে ভিড়। বাঁশের খুঁটিতে অ্যালুমিনিয়ামের চোঙা। থেকে থেকে ঘোষণা হচ্ছে, দেবদত্ত যোশী, বয়স ৫২, ঠিকানা মহেন্দ্রনগর নেপাল। গৌরী সোনি, বয়স ৬৫, জব্বলপুর মধ্যপ্রদেশ। চন্দন পাণ্ডে, বয়স ৬৫, ধানবাদ ঝাড়খন্ড। চোঙার আওয়াজ ভিড়ে মিশে যায় হারিয়ে যাওয়া লোকগুলোর মতো।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গঙ্গাসাগর শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০১৬ ১৭:৩২
Share:

সাগরে পুন্যস্নান। ছবি: পিটিআই।

যদ্দূর চোখ যায় থিকথিকে ভিড়। বাঁশের খুঁটিতে অ্যালুমিনিয়ামের চোঙা। থেকে থেকে ঘোষণা হচ্ছে, দেবদত্ত যোশী, বয়স ৫২, ঠিকানা মহেন্দ্রনগর নেপাল। গৌরী সোনি, বয়স ৬৫, জব্বলপুর মধ্যপ্রদেশ। চন্দন পাণ্ডে, বয়স ৬৫, ধানবাদ ঝাড়খন্ড। চোঙার আওয়াজ ভিড়ে মিশে যায় হারিয়ে যাওয়া লোকগুলোর মতো।

Advertisement

প্রতি বছর গঙ্গাসাগর মেলায় পূণ্য অর্জনে এসে হারিয়ে যান বহু মানুষ। পুলিশ-প্রশাসন, মেলা কমিটির অনুসন্ধান কেন্দ্রে হত্যে দিয়ে পড়ে থাকেন কেউ। কেউ আবার দিগ্‌ভ্রান্তের মতো ঘুরে বেড়ান। কার অত সময় আছে জনে জনে মানুষ খোঁজার! কিন্তু ওঁরা খোঁজেন। বাতাসে ইথার তরঙ্গে ভর করে ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিও ক্লাবের ৩৮জন সদস্য মেলা শুরুর দিন থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষের ভিড়ে হারিয়ে যাওয়া মানুষগুলোকে খুঁজে বের করেন। নেহাতই স্বেচ্ছাশ্রম, শখের রেডিওর ব্যবহারের নেশা থেকে। নীল রঙের টি শার্ট, তাতে গোটা গোটা অক্ষরে লেখা ‘হ্যাম’। সবার হাতে একটা করে ভিএইচএফ (ভেরি হাই ফ্রিকোয়েন্সি) ওয়াকিটকি। কচুবেড়িয়া, লট ৮, নামখানা, চেমাগুড়িতে হোগলা পাতার ঘরে হ্যাম রেডিওর কন্ট্রোল রুম। মূল কন্ট্রোল রুমটি গঙ্গাসাগরে প্রশাসনিক কার্যালয়ের পাশে। পুলিশ বা জেলা প্রশাসনের ওয়্যারলেস ব্যবস্থা গোটা গঙ্গাসাগর মেলা জুড়ে ঠিকমতো কাজ করে না কখনওই। ফলে কোথায় যানজট, কোথায় বেশি ভিড়, কোথায় কে আহত হল, জলের ট্যাঙ্ক ফাঁকা হল বা কল নষ্ট হয়ে আছে এ সব তথ্যই প্রশাসন আর মেলা কমিটির কাছে দ্রুত পৌঁছোচ্ছে হ্যাম রেডিও মারফৎ। যেহেতু মোবাইল পরিষেবাও এখানে দুর্বল তাই বহু ক্ষেত্রে প্রশাসনিক যোগাযোগেও সাহায্য করছে হ্যাম।

গঙ্গাসাগরে এই নিয়ে ২৪ বছর হয়ে গেল ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিও ক্লাবের। নেপাল ভূমিকম্প, হুদহুদ, আয়লা’র মতো অনেক বিপর্যয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়েছেন এই শখের রেডিও অপারেটররা। নিজেদের তৈরি করা অ্যান্টেনায় বাতাসের গতি প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে উচ্চ তরঙ্গে ভর করে কথা পৌঁছে যায় দূর থেকে দূরে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে হ্যাম সদস্যদের কাছে। এরপর হারানো মানুষকে খোঁজার কাজটা নেহাতই তাঁদের নজরদারি আর প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব।

Advertisement

বাকি সব ক্ষেত্রে সরকারী স্বীকৃতি মিললেও গঙ্গাসাগরের এই স্বেচ্ছাশ্রমের কোনও স্বীকৃতি পাননি হ্যাম রেডিও এই স্বেচ্ছাকর্মীরা। ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিও ক্লাবের কর্তা অম্বরীশ নাগ বিশ্বাস বলেন, ‘‘এই ক’দিনের ২৪জনকে তাঁদের পরিজনের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছি। যাঁদের বাড়ির লোকদের খোঁজ এখনও মিলছে না অথচ তাঁরা অসুস্থ, হাসপাতালে ভর্তি করানো হচ্ছে সেখানে অন্য কেউ দায়িত্ব নিতে না চাইলে আমাদের সদস্যরা বন্ড সই করে তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করাচ্ছেন। কিন্তু প্রশাসন যদি তাঁদের সহযোগী হিসাবে আমাদের স্বীকৃতি দিত আরও উৎসাহ পেতাম।’’ দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলাশাসক পি বি সালিম বলেন, ‘‘এ বছর গঙ্গাসাগর মেলা অ্যাপস প্রথম চালু হল। পরের বছর থেকে নিশ্চয়ই এরকম স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার নাম অন্তর্ভূক্ত করার ব্যাপারটি আমরা দেখব।’’ কচুবেড়িয়া পুলিশ ক্যাম্পের দায়িত্বে রয়েছেন দক্ষিণ ২৪ পরগণার অতিরিক্ত জেলা পুলিশ সুপার চন্দ্রশেখর বর্ধন। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা হ্যাম রেডিওর সদস্যদের কাছ থেকে যথেষ্ট সাহায্য পাচ্ছি। তারা অনেক ক্ষেত্রেই পুলিশের কাজ সহজ করে দিচ্ছেন ওরা। তাই বেশ সুবিধা হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন