কূটনীতি পেরিয়ে বাংলা ইলিশ পয়লা পাতেই

পয়লা বৈশাখে বাঙালির পাতে ঠাঁই পেতে কূটনীতির বাধা মানল না বাংলাদেশের ইলিশ। সীমান্ত পারের ভোজনরসিকেরা যাকে ভালবেসে ‘বাংলা ইলিশ’ নামেই বেশি ডাকেন। বাঙালির প্রিয় মাছ রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বাংলাদেশ সরকার। কিন্তু চোরাপথ পেরিয়ে দিব্যি ঢুকছে ইলিশ। সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার সকালের মধ্যে বনগাঁ সীমান্তের চোরাপথ দিয়ে বারাসতে বড়বাজারের আড়তেই শুধু ঢুকেছে কয়েক টন।

Advertisement

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৫ ০৪:০৮
Share:

চলছে ইলিশ বেচাকেনা। বারাসতের বড় বাজারে সুদীপ ঘোষের তোলা ছবি।

পয়লা বৈশাখে বাঙালির পাতে ঠাঁই পেতে কূটনীতির বাধা মানল না বাংলাদেশের ইলিশ। সীমান্ত পারের ভোজনরসিকেরা যাকে ভালবেসে ‘বাংলা ইলিশ’ নামেই বেশি ডাকেন।

Advertisement

বাঙালির প্রিয় মাছ রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বাংলাদেশ সরকার। কিন্তু চোরাপথ পেরিয়ে দিব্যি ঢুকছে ইলিশ। সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার সকালের মধ্যে বনগাঁ সীমান্তের চোরাপথ দিয়ে বারাসতে বড়বাজারের আড়তেই শুধু ঢুকেছে কয়েক টন। এক কেজি ২৫০-৩০০ গ্রামের সেই ইলিশ বিক্রি হয়েছে দেড় হাজার টাকা কিলোয়।

অন্য মাছে নিষেধ না থাকলেও বছর দুয়েক যাবৎ ইলিশ রফতানি বন্ধ করেছে বাংলাদেশ সরকার। যার ফলে পদ্মার ইলিশ বাঙালির হেঁসেলে প্রায় পৌঁছচ্ছে না। ভাষা দিবসে বাংলাদেশে গিয়ে ভোজের পাতে ইলিশের অন্তত পাঁচটি পদ দেখে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সে দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলেছিলেন, ‘‘ইলিশ মাছ পাঠানো আটকে রেখেছেন কেনয আমরা খেতে পাচ্ছি না!’’ প্রত্যুত্তরে ফের তিস্তা প্রসঙ্গ তুলে হাসিনা বলেন, ‘‘পানি দেন, ইলিশও যাবে।’’

Advertisement

সেই জট এখনও খোলেনি। কিন্তু কূটনীতিতে আবেগ আটকায় না, বাণিজ্যও না। তাই নববর্ষের বাজার ধরতে ফের চোরাপথে যাত্রা শুরু হয়েছে ইলিশের। উত্তর ২৪ পরগনার পেট্রাপোল শুল্ক দফতরের সহকারি কমিশনার শ্রীরাম বিষ্ণু মেনে নেন, ‘‘নিষেধাজ্ঞা থাকায় ইলিশ আমদানি বন্ধ। এ দেশে বাংলাদেশের যে ইলিশ মিলছে, তা আশপাশের চোরাপথ দিয়েই ঢুকছে।’’ নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের যুক্তি, ব্যাপক হারে খোকা ইলিশ ধরা হতে থাকায় উৎপাদন কম হচ্ছিল। গত কয়েক বছর বর্মা থেকে ইলিশ ঢুকছিল বাংলাদেশে। খোকা ইলিশ ধরায় লাগাম দেওয়ার পরে পদ্মা-মেঘনায় আবার প্রমাণ সাইজের ইলিশ মিলছে। যতটুকু ইলিশ মিলছে তা আগে দেশের মানুষ খাবে, পরে প্রবাসীরা। তাই রফতানি বন্ধ।

কিন্তু বন্ধ বললেই তো আর বন্ধ করা যায় না। এ বঙ্গের তীব্র ইলিশ-বাসনা চোরাকারবারিরা ভালই জানে। তাই রাতের অন্ধকারে ঢাকা-খুলনা-বরিশাল থেকে যশোহর হয়ে সীমান্তে চলে আসছে ইলিশ। বিভিন্ন এলাকা দিয়ে যন্ত্রচালিত ভ্যান রিকশায় (বাংলাদেশে যার নাম বিমান) করে থার্মোকলের পেটিতে বরফ চাপা দিয়ে তা এ দেশে ঢুকে পড়ছে। উপরে থাকছে অন্য মাছ। পেট্রাপোল সীমান্ত লাগোয়া জয়ন্তপুরের কাঁটাতার পেরিয়ে, কখনও আবার পুটখালির ইছামতী পেরিয়ে আংড়াইল সীমান্ত হয়ে চলে আসছে ইলিশ। কোনও নজরদারিই আটকাতে পারেনি তাকে।

ভারতীয় শুল্ক দফতরের ক্নিয়ারিং এজেন্টদের সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এখন বড় বড় হাঁড়িতে করে চোরাপথে আসছে ইলিশ। পেটিতে বরফবন্দি হয়ে চলে যাচ্ছে বারাসতের বড়বাজারের মতো এলাকায়। সেখান থেকে ইলিশ পৌঁছে যাচ্ছে কলকাতার বিভিন্ন বাজারে।’’

এ দিন সকালেই বারাসত বড় বাজারের প্রায় ৪০ জন আড়তদার ৫০ থেকে ১০০ কেজির মতো ‘বাংলা ইলিশ’ কিনেছেন। বাজারের মৎস্য ব্যাপারি শেখ ইস্রাইল একগাল হেসে বলেন, ‘‘৫০ কেজির মতো পাইকারি বাংলা ইলিশ কিনলাম। এক কিলো তিনশোর এক-একটা মাছ দেড় হাজার টাকা কিলোয় বিক্রি হবে।’’

‘বাংলা ইলিশ’ ঢুকেছে খবর পেয়ে সকালেই বড় বাজারে হানা দেন ভোজনরসিকেরা। দামের পরোয়া কে করছে? নীল ষষ্ঠীর উপোস আর চৈত্র সংক্রান্তির নিরামিষের পরে নববর্ষে ভূরিভোজ। দু’পয়সা বেশি গেলেও পড়তায় দিব্যি পুষিয়ে যায়। ইলিশ মাপাত-মাপাতেই হাটখোলা মোড়ের সরকারি কমর্চারি কমল পাল ঘোষণা করেন, ‘‘কাল পাতে দেশি মুরগিও থাকবে। কিন্তু বাংলা ইলিশের সঙ্গে টেক্কা দেবে কে? আত্মীয়-স্বজনদেরও নিমন্ত্রণ করে দিয়েছি!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন