বর্ষা এল, ইলিশ এল কই? পাতে না ভাজা-না পাতুরি

ভরা আষাঢ়, অথচ পাতে তো দূর অস্ত্, বাজারেও তার দেখা নেই বললেই চলে। মানিকতলা থেকে গড়িয়াহাট সব বাজার থেকেই মুখ চুন করে ফিরছেন ক্রেতারা। অন্যান্য বছর এ সময়ে বর্ষার স্বাদগন্ধে ভরপুর ইলিশ থাকে মধ্যবিত্তের নাগালেই। কিন্তু এ বার ছবিটা উল্টো। আষাঢ় শেষ হতে চললেও রূপোলি শস্যের বাজারে রীতিমতো হাহাকার। উত্তর থেকে দক্ষিণ, সব বাজারেই এক ছবি এক কিলো বা তার থেকে বেশি ওজনের ইলিশ কার্যত নেই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০১৪ ০২:০৩
Share:

ভরা আষাঢ়, অথচ পাতে তো দূর অস্ত্, বাজারেও তার দেখা নেই বললেই চলে। মানিকতলা থেকে গড়িয়াহাট সব বাজার থেকেই মুখ চুন করে ফিরছেন ক্রেতারা। অন্যান্য বছর এ সময়ে বর্ষার স্বাদগন্ধে ভরপুর ইলিশ থাকে মধ্যবিত্তের নাগালেই। কিন্তু এ বার ছবিটা উল্টো। আষাঢ় শেষ হতে চললেও রূপোলি শস্যের বাজারে রীতিমতো হাহাকার।

Advertisement

উত্তর থেকে দক্ষিণ, সব বাজারেই এক ছবি এক কিলো বা তার থেকে বেশি ওজনের ইলিশ কার্যত নেই। যেটুকু পাওয়া যাচ্ছে, তা-ও আবার ছোট, ওজন মেরেকেটে ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম। অথচ, এই ইলিশের দামই ঘোরাফেরা করছে ১০০০ থেকে ১২০০ টাকার মধ্যে।

মাছ-বিক্রেতারা জানাচ্ছেন, কয়েক বছর ধরেই ইলিশের জোগানটা একটু একটু করে কমছে। এ বছর পরিস্থিতি আরও খারাপ। মানিকতলা বাজারের ইলিশ বিক্রেতা প্রদীপ মণ্ডল বললেন, “এ বছর বাংলাদেশ থেকে ইলিশ তেমন আসেনি। রাজ্যের বন্দর এলাকা যেমন দিঘা, কাকদ্বীপ, নামখানা, ডায়মন্ড হারবার থেকে বর্ষায় যে ইলিশ আসত, তা-ও আসছে না বললেই চলে। তার উপরে বর্ষা কম হওয়ায় পার্শে, ভেটকি, ট্যাংরার মতো স্থানীয় মাছের জোগানও কম।” প্রদীপবাবু জানান, বর্ষায় ইলিশই বাজারের রাজা। এই সময়ে বাজারকে অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করে এই মাছ। ইলিশের জোগান পর্যাপ্ত থাকলে অন্য মাছের দামও থাকে কম। কিন্তু এ বার ইলিশ না থাকায় পুরো মাছের বাজারেরই করুণ অবস্থা।

Advertisement

মাছ-বিক্রেতাদের আশা, বৃষ্টি ভাল হলে পরিস্থিতি পাল্টাতে পারে। নিউ মার্কেটের ইলিশ মাছ বিক্রেতা শিবাজি ওঝা বলেন, “এ বার বৃষ্টি কম হয়েছে। তার উপরে পলি জমে নদীর গভীরতাও কমে যাচ্ছে। ফলে মোহনা থেকে ইলিশের ঢুকতে অসুবিধা হচ্ছে। ইলিশের জন্য নদীর গভীরতা কমপক্ষে ৫০ থেকে ৬০ ফুট হওয়া দরকার।” শিবাজিবাবুর আশা, টানা ঝিরঝিরে বৃষ্টি হলে পরিস্থিতি পাল্টাতে পারে।

ইলিশ কই?

সবিস্তারে দেখতে ক্লিক করুন

জোগান কম হওয়ায় শুধু মধ্যবিত্তের হেঁশেলই নয়, ইলিশের টান পড়েছে শহরের নামী রেস্তোরাঁর রান্নাঘরেও। শিবাজিবাবু জানালেন, শহরের নামী রোস্তোরাঁগুলিতেও ইলিশের চাহিদা তাঁরা সে ভাবে মেটাতে পারছেন না। তিনি বললেন, “নামী হোটেলে বড়জোড় এক কিলো ওজনের ইলিশ দিতে পারছি। কিন্তু ওদের আরও বড় ইলিশ দরকার।”

শহরের এক নামী হোটেলের কর্তা কল্লোল বন্দ্যোপাধ্যায়ও একমত শিবাজিবাবুর সঙ্গে। তিনি বলেন, “গত দু’তিন বছর ধরেই ইলিশের জোগান কম। তবে এ বছর অবস্থা সব থেকে খারাপ। বড় ইলিশ একেবারে পাওয়াই যাচ্ছে না। গত বছরও নিউ মার্কেট থেকে দিনে ৩০-৪০টির মতো ইলিশ নিয়েছি। এ বছর বড়জোর আট থেকে দশটা ইলিশ পাচ্ছি।” কল্লোলবাবু জানালেন, এই ইলিশের আকার ছোট হওয়ায় এখনও পর্যন্ত ‘বোনলেস’ পদ করা যায়নি। ইলিশ উৎসব হয়তো এ বছর হবে, তবে এই পরিস্থিতি চললে ‘বোনলেস’ ইলিশ উৎসব হয়তো তাঁরা করতে পারবেন না বলে জানালেন তিনি।

কলকাতারই অন্য এক হোটেলের কর্তা দেবাশিস ঘোষও জানালেন এ বার জোগান অন্য বারের তুলনায় কম। তাঁর কথায়, “সবে তো জুলাই মাসের শুরু। আশা করছি টানা বর্ষা হলে ঘাটতি মিটবে। ইলিশ উৎসবও হবে বলেই ঠিক করা আছে।”

হাওড়ার পাইকারি মাছ বাজারের বিক্রেতারা জানালেন, অন্য বার বর্ষায় এ রাজ্যে দৈনিক ৩০ থেকে ৪০ টন ইলিশের চাহিদা থাকে। এ বার চাহিদা একই আছে। কিন্তু জোগান নেমেছে পাঁচ থেকে ছ’টনে। আর চাহিদার তুলনায় জোগান খুব অল্প হওয়ায় ইলিশের দাম বেড়েছে অনেকটাই। হাওড়ার পাইকারি মাছ বাজারের ফিশ ইম্পোর্ট অ্যাসোসিয়েশন-এর সভাপতি অতুল দাস বললেন, “বাংলাদেশের ইলিশ কয়েক বছর ধরেই কম আসছিল। এ বার সেটা একেবারে শূন্যে গিয়ে ঠেকেছে। চোরাপথে যে ইলিশ আসত, কড়াকড়ি হওয়ায় তা-ও কার্যত বন্ধ।” অতুলবাবু জানালেন, এখন যেটুকু ইলিশ বাজারে আছে, সেগুলো মায়ানমারের। এগুলো গত বছর হিমঘরে রাখা হয়েছিল। এখন চাহিদা অনুযায়ী একটু একটু করে বাজারে ছাড়া হচ্ছে।

ইলিশ বিক্রেতাদের মতে, এ বার বর্ষা কম হওয়ায় নদীতে জলও কম। মিষ্টি জলের মাছ যেমন ট্যাংরা, পার্শে, ভেটকিও তেমন ভাবে পাওয়া যাচ্ছে না। আর মোহনা থেকে নদীতেও খুব কম ইলিশ ঢুকছে। নদীর জলে দূষণের ফলেও ইলিশ কম ঢুকছে।

বাজারে ইলিশের জোগান কম বলে চিন্তিত মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহও। তিনি বলেন, “একে তো বৃষ্টি কম হল। যদিও বা বৃষ্টি শুরু হল, তখন আবার একের পর এক নিম্নচাপের হানা। নিম্নচাপের মধ্যে ট্রলার নিয়ে সমুদ্র বা মোহনা থেকে ইলিশ মাছ তোলা কিছুটা ঝুঁকির, তাই আমরা এখনই গভীর সমুদ্রে যেতে নিষেধ করেছি।”

তবে মন্ত্রীর দাবী, “এখন যে ভাবে বৃষ্টি হচ্ছে, তাতে আশা করা যায় কিছু দিনের মধ্যেই পরিস্থিতি পাল্টে যাবে। নদীর জল বাড়লে ইলিশও মোহনা দিয়ে নদীতে ঢুকবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন