বিজ্ঞাপন বড় বালাই, হোর্ডিংয়ে মুখ ঢেকেছে দিঘা

দিঘার উন্নয়নে মুখ্যমন্ত্রী নিজে উদ্যোগী হয়েছেন। নিয়মিত খোঁজও নেন। কিন্তু হোটেল থেকে শাড়ি, গয়না, বিভিন্ন প্রসাধনীর বিশাল বিশাল হোর্ডিংয়ের জেরে কার্যত দৃশ্যদূষণে আক্রান্ত এই সৈকত শহর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

দিঘা শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:২০
Share:

দিঘা রেল স্টেশনের বাইরে সার সার বিজ্ঞাপনের হোর্ডিং। ছবি: শান্তনু বেরা

মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে।

Advertisement

রাজ্যের অন্যতম সেরা পর্যটনকেন্দ্র দিঘার রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে কোনও পর্যটকের এমনটা মনে হতেই পারে। কারণ দিঘায় ঢোকার পথে যে স্বাগত তোরণ রয়েছে তার আগে থেকেই চোখে পড়বে বড় বড় হোটেলের বিজ্ঞাপনের হোর্ডিং। যা পরে পুরনো দিঘা থেকে নতুন দিঘা এমনকী ওড়িশা সীমানা পর্যন্ত ছড়িয়ে গিয়েছে।

দিঘার উন্নয়নে মুখ্যমন্ত্রী নিজে উদ্যোগী হয়েছেন। নিয়মিত খোঁজও নেন। কিন্তু হোটেল থেকে শাড়ি, গয়না, বিভিন্ন প্রসাধনীর বিশাল বিশাল হোর্ডিংয়ের জেরে কার্যত দৃশ্যদূষণে আক্রান্ত এই সৈকত শহর। অভিযোগ, শুধু রাস্তাই, সমুদ্রের ধারে পর্যটকদের হাঁটার রাস্তাও বাদ যায়নি।

Advertisement

অভিযোগ যে অমূলক নয়, তা বোঝা যাবে ওল্ড দিঘা থেকে নিউ দিঘা একবার চক্কর দিলেই। ওল্ড দিঘার প্রবেশ পথে প্রথম বাসস্টপের কাছে ছেয়ে রয়েছে একাধিক হোডিং, ব্যানারে। দিঘার এক নম্বর ঘাটে যাওয়ার আগেও হোর্ডিংয়ের দাপট। আবার শিবালয় রোডে ঢোকার মুখে রয়েছে বড় বড় বিজ্ঞাপন-ব্যানার। একই ছবি নিউ দিঘাতেও। পিকনিক স্পটের কাছে বড় বড় হোডিং যে কোন পর্যটকের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। হোর্ডিং আছে অমরাবতী পার্কে যাওয়ার রাস্তাতেও। দিঘা রেলস্টেশনে ঢোকার মুখে যেখানে রিকশা স্ট্যান্ড রয়েছে সেখানেও হোর্ডিংয়ের ছড়াছড়ি। ওড়িশা সামীনা বরাবর রাস্তার দু’পাশে কষ্ট করে ফাঁক খুঁজতে হয়।

সৈকত শহর জুড়ে হেডিংয়ের এমন দাপট যে তাঁরাও ভাল চোখে দেখছেন না বলে জানিয়েছেন দিঘা-শঙ্করপুর হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন কর্তৃপক্ষ। অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক বিপ্রদাস চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এখন দিঘা আর আগের মতো নেই। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর তৎপরতায় দিঘার সৌন্দর্য্য বেড়েছে। কিন্তু এত হোর্ডিং দিঘাকে ঘিঞ্জি করে তুলছে। আমরা হোটেল মালিকদের কাছে এ বিষয়ে অনুরোধ জানাবো।’’

দিঘার পর্যটকেরাও হোর্ডিংয়ের দাপট নিয়ে সরব। কাজের ফাঁকে সময় পেলেই দু’একদিন দিঘায় কাটিয়ে যান বেসরকারি সংস্থার চাকুরে কলকাতার বাসিন্দা সুহাস মল্লিক। তিনি বলেন, ‘‘আগে এক বিজ্ঞাপনের হোর্ডিং দেখা যেত না। দিঘায় ঢুকলেই চোখে পড়ত সমুদ্র আর ঝাউবন। এখন সব হোর্ডিংয়ের আড়ালে চলে গিয়েছে। চোখের আরাম নষ্ট হয়েছে। তবে এখন তো আবার বিজ্ঞাপনের যুগ। না মানলেই বা শুনছে কে!’’ বর্ধমানের অমিয় রাউতের কথায়, ‘‘প্রতি বার দিঘায় এলেই নতুন নতুন হোর্ডিং দেখি। বিজ্ঞাপনের এত বাড়াবাড়ি চোখে লাগে।’’ কলকাতার বেহালার বাসিন্দা অভিজিৎ গাঙ্গুলি বলেন, “কলকাতার বেশ কিছু এলাকায় দৃশ্যদূষণ হচ্ছে বলে হোর্ডিং খুলে ফেলা হয়েছে। আর দিঘা তো রাজ্যের একটা নামী পর্যটনকেন্দ্র। এখানে তো আরও বেশি সচতন হওয়া উচিত।’’

বিজ্ঞাপনের হোর্ডিংয়ের চাপে দিঘার সৌন্দৰ্য্য যে ক্ষুণ্ণ হচ্ছে তা স্বীকার করে ডিএসডিএ-র (দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ) চেয়ারম্যান শিশির অধিকারী বলেন, “হোর্ডিংয়ের জন্য পর্ষদের নিদিষ্ট এলাকা রয়েছে। পর্ষদের অনুমোদন নিয়ে সেখানে হোডিং লাগাতে হয়। কিন্তু অনুমোদন না নিয়ে দিঘায় যেখানে সেখানে ব্যাঙের ছাতার মতো হোর্ডিং লাগানো হচ্ছে। এ সব সরিয়ে ফেলতে বলেছি। যারা নির্দেশ মানবেন না, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন