OBC Certificate Case

‘আশ্চর্যজনক’! ওবিসি মামলায় কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে স্থগিতাদেশ দিতে গিয়ে আর কী কী পর্যবেক্ষণ সুপ্রিম কোর্টের

ওবিসি শংসাপত্র সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিয়েছিল কলকাতা হাই কোর্ট। হাই কোর্টের ওই নির্দেশের উপরে এ বার অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। হাই কোর্ট কী ভাবে ওই নির্দেশ দিল, তা নিয়েও প্রশ্ন শীর্ষ আদালতের।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০২৫ ২২:৩৬
Share:

ওবিসি তালিকা সংক্রান্ত মামলায় হাই কোর্টের নির্দেশে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। —প্রতীকী চিত্র।

পশ্চিমবঙ্গের অন্য অনগ্রসর শ্রেণি (ওবিসি)-র শংসাপত্র সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তির মামলায় হাই কোর্টের নির্দেশ নিয়ে প্রশ্ন তুলল সুপ্রিম কোর্ট। সম্প্রতি রাজ্যের বিজ্ঞপ্তির উপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ জারি করেছিল হাই কোর্ট। সোমবার ওই নির্দেশের উপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতে মামলাটি শুনানির জন্য উঠতেই হাই কোর্টের নির্দেশ নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি বিআর গবই। আদালত এ-ও জানিয়েছে, মামলাকারীরা চাইলে ওই মামলা হাই কোর্টের অন্য বেঞ্চে পাঠানোর জন্যও বলা যেতে পারে।

Advertisement

প্রধান বিচারপতি গবই বলেন, “আমরা এ বিষয়ে নোটিস জারি করব। এটা আশ্চর্যজনক! হাই কোর্ট কী ভাবে এমন করে স্থগিতাদেশ দিতে পারে? আমরা ভেবে অবাক হচ্ছি যে, কোন যুক্তিতে হাই কোর্ট এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে!” সোমবার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির বেঞ্চে মামলাটির শুনানি ছিল। প্রধান বিচারপতি গবই ছাড়াও ওই বেঞ্চে রয়েছেন বিচারপতি কে বিনোদ চন্দ্রন এবং বিচারপতি এনভি অঞ্জরিয়া। সোমবার মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি স্পষ্ট করে দেন, সংরক্ষণ তো কার্যনির্বাহী (এক্সিকিউটিভ) বা প্রশাসনিক বিভাগের কাজের অংশ। এ বিষয়ে অতীতের একটি মামলার রায়ের কথাও উল্লেখ করেন তিনি।

প্রধান বিচারপতি জানান, ইন্দিরা সাহনী মামলার রায় থেকে স্পষ্ট যে প্রশাসন এই কাজ করতে পারে। সংরক্ষণের জন্য কার্যনির্বাহী বা প্রশাসনের নির্দেশই যথেষ্ট, এর জন্য আলাদা করে কোনও আইন তৈরির প্রয়োজন নেই। তিনি এ-ও জানান যে, মামলাকারী চাইলে হাই কোর্টের অন্য কোনও বেঞ্চে দ্রুত এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্যও বলা হতে পারে। প্রধান বিচারপতি বলেন, “আপনারা চাইলে আমরা হাই কোর্টকে বলতে পারি একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে মামলাটির শুনানির জন্য। আমরা সে ক্ষেত্রে (হাই কোর্টের) প্রধান বিচারপতিকে এটির শুনানির জন্য অন্য একটি বেঞ্চ গঠনের জন্যও বলতে পারি।” তবে মামালকারী পক্ষ জানায়, তারা সুপ্রিম কোর্টেই নিজেদের বক্তব্য জানাতে চায়।

Advertisement

সোমবারের শুনানির পরে শেষ পর্যন্ত হাই কোর্টের নির্দেশের উপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ জারি করেছে শীর্ষ আদালত। প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ মৌখিক ভাবে জানিয়েছে, হাই কোর্টের নির্দেশকে ‘প্রাথমিক ভাবে ভুল’ বলে মনে করছে তারা। সুপ্রিম কোর্টের মতে, বিজ্ঞপ্তি জারির ক্ষেত্রে কিছু প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে। সেটি ঠিক হতেও পারে, না-ও হতে পারে। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে হাই কোর্ট। তবে আপাতত হাই কোর্টের নির্দেশকে ‘বিতর্কিত’ বলে উল্লেখ করে সেটির উপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ জারি করেছে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ।

বস্তুত, ২০১০ সালের পরে তৈরি রাজ্যের সব ওবিসি শংসাপত্র বাতিল করে দিয়েছিল হাই কোর্ট। বলা হয়েছিল, সামাজিক, আর্থিক এবং পেশাগত ভাবে সব জনগোষ্ঠীর মধ্যে সমীক্ষা করতে হবে। তার পর নতুন করে ওবিসি তালিকা প্রস্তুত করতে হবে। রাজ্য একটি সমীক্ষা করে ওবিসি নিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করে। তার বিরুদ্ধেই হাই কোর্টে মামলা হয়েছে।

২০১০ সালের আগে পশ্চিমবঙ্গে মোট ৬৬টি জনগোষ্ঠীকে ওবিসি বলে ঘোষণা করা হয়েছিল। তার মধ্যে অমুসলিম জনগোষ্ঠী ছিল ৫৪টি এবং মুসলিম ১২টি। হাই কোর্ট জানিয়েছিল, ২০১০ সালের পর থেকে যাদের ওবিসি-তে নথিভুক্ত করা হয়েছে, তাদের শংসাপত্র বাতিল হবে। ২০১০ সালের আগে পর্যন্ত যে ৬৬টি জনগোষ্ঠী অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির অংশ ছিল তাদের শংসাপত্র গ্রাহ্য হবে চাকরির নিয়োগ কিংবা কলেজে ভর্তিতে। ২০২৪ সালের রায়েও তা স্পষ্ট করা হয়।

রাজ্য জানিয়েছিল, এই সংক্রান্ত মামলার কারণে কলেজে ভর্তি থেকে শুরু করে নিয়োগপ্রক্রিয়া, বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে। তবে আদালত জানিয়ে দেয়, তেমন কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কারণ, ২০১০ সালে পূর্বতন বাম সরকার ৪২টি জনগোষ্ঠীকে ওবিসি বলে চিহ্নিত করে। তাদের মধ্যে ছিল ৪১টি মুসলিম এবং একটি অমুসলিম সম্প্রদায়। এর পর ২০১২ সালে তৃণমূল সরকার ৩৫টি জনগোষ্ঠীকে ওবিসি বলে চিহ্নিত করে। তাদের মধ্যে ৩৪টি মুসলিম এবং একটি অমুসলিম সম্প্রদায়। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, বাম এবং তৃণমূল সরকারের আমলে যে ৭৭টি জনগোষ্ঠীকে ওবিসি-র তালিকায় ঢোকানো হয়, শুধুমাত্র তাদের বাতিল করা হয়েছে।

আদালতের নির্দেশের প্রেক্ষিতে সমীক্ষা করে ১৪০টি জনগোষ্ঠীকে চিহ্নিত করে ওবিসি-র নতুন তালিকা প্রকাশ করেছিল রাজ্য সরকার (এই তালিকা তৈরির দায়িত্বে ছিল অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ কমিশন)। তারা জানায়, আর্থিক অনগ্রসরতার ভিত্তিতে সমীক্ষা করে এই তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। এর সঙ্গে ধর্মের কোনও সম্পর্ক নেই। তবে সেই তালিকার বিরুদ্ধেই হাই কোর্টে মামলা হয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement