(বাঁ দিকে) ‘রিও’কে কাঁধে নিয়ে মলয় মজুমদার। (ডান দিকে) নিখোঁজ আফ্রিকান তোতাপাখির বর্ণনা দিয়ে ছাপানো পোস্টার। —নিজস্ব চিত্র।
বাড়িতে একাধিক পোষ্য। কিন্তু মালিক তাদের রেখে তোতাকে কাঁধে নিয়ে আদর করছে দেখে রেগেমেগে তেড়ে গিয়েছিল একটি কুকুর। তাড়া খেয়ে সেই যে আফ্রিকান গ্রে প্যারট ‘রিও’ পাশের নারকেল গাছে বসল, তার পর আর তার খোঁজ নেই। এ দিকে মলয় মজুমদার প্রিয় পোষ্যের খোঁজে নাওয়া-খাওয়া ভুলেছেন। সপ্তাহখানেক কাজে যাননি। হুগলির পান্ডুয়ার যুবক মাইকিং করছেন এলাকায়। সমাজমাধ্যমে নিরুদ্দেশ তোতার সন্ধান করছেন। ঘোষণা করেছেন, পাখিটিকে খুঁজে দিতে পারলে ১০ হাজার টাকা পুরস্কার দেবেন।
হুগলির পান্ডুয়া স্টেশন রোডের খারাজিপাড়ার বাসিন্দা মলয় পশুপ্রেমী। বাড়িতে বেশ কয়েকটি কুকুর পোষেন। কয়েক মাস আগে একটি আফ্রিকান গ্রে প্যারট বা ‘ধূসর তোতা’ কিনে এনেছিলেন। সন্তানস্নেহে পাখিটিকে পালন করছিলেন মজুমদার দম্পতি। আদর করে নাম রাখেন রিও। কিন্তু গত ৯ জুলাই থেকে সেই রিও নিখোঁজ!
মলয় বলেন, ‘‘বাড়িতে ছাড়াই থাকত রিও। গত ৯ জুলাই খাওয়ার পর আমার কাঁধে বসেছিল। আমার বাড়িতে অনেকগুলো কুকুর আছে। তাদের একটি লাফিয়ে আমার দিকে আসতেই ও ভয় পেয়ে উড়ে গিয়ে সামনের নারকেল গাছে বসল। সেখান থেকে কোথায় চলে গেল জানি না।’’ তোতার খোঁজে পান্ডুয়া, খন্যান, বৈঁচী, সিমলাগড় ঘুরেছেন মলয়। কিন্তু রিও মেলেনি। এখন টোটো ভাড়া করে মাইকিং করছেন এলাকায়। পোস্টারে রিও-র ছবি দিয়ে বর্ণনা দিয়েছেন যুবক। জানিয়েছেন, সন্ধান দিতে পারলে ১০ হাজার টাকা পুরস্কার দেবেন। মলয়ের কথায়, ‘‘এর মধ্যে একদিন খোঁজ পেলাম কাকদ্বীপে এক ব্যক্তি একটি ধূসর তোতা পেয়েছেন। সেখানে গেলাম। কিন্তু সেই তোতা আমার রিও নয়। গত এক সপ্তাহ ধরে আমি কোনও কাজ করতে পারছি না। সন্তান হারিয়ে গেলে যেমন কষ্ট হয়, তেমন বেদনায় আমি।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘আমি জানি রিও-ও আমাকে খুঁজছে। কারণ, একটা মুহূর্ত আমাকে ছাড়া থাকত না।’’
পথকুকুর বা বিড়াল দুর্ঘটনায় আহত হলে তাকে সোজা বাড়িতে নিয়ে আসেন মলয়। স্ত্রী প্রভাতী মজুমদারও পশুপ্রেমী। তাঁদের প্রিয় পোষ্য হারিয়ে গিয়েছে শুনে খোঁজ করছেন প্রতিবেশীরাও। মলয় জানান, আফ্রিকান তোতাপাখিটিকে ৯ মাস আগে ৩৫ হাজার টাকা দিয়ে কিনেছিলেন। এখন রিও-র বয়স সাড়ে তিন বছর। মলয়ের স্ত্রী বলেন, ‘‘রিও আমাদের পরিবারের সদস্য। যে দিন থেকে ও হারিয়ে গিয়েছে সকলেই ভেঙে পড়েছি। জানি না, কী অবস্থায় আছে ও।’’