অষ্টমীতে খুলে ফেলা হচ্ছে আলোর তোরণ। —নিজস্ব চিত্র।
চন্দনগরের জগদ্ধাত্রী পুজো মানেই আলোর বাহার। তাই দেখতে হাজার হাজার দর্শনার্থী জড়ো হন হুগলির বিভিন্ন মণ্ডপে। কিন্তু মঙ্গলবার দমকা হাওয়ায় ‘সবচেয়ে বড় জগদ্ধাত্রী’র মণ্ডপ ভেঙে পড়ার পর কড়াকড়ি শুরু করল জেলা প্রশাসন। বুধবার দমকা হাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টি চলছে। এই পরিস্থিতিতে ১৮০টি পুজো কমিটিকে পুলিশের নির্দেশ, তারা যেন উঁচু জায়গায় বাঁধা আলোর তোরণগুলো খুলে নেয়। জনবহুল এলাকার রাস্তাগুলি থেকেও আলোর তোরণ খুলতে বলা হয়েছে। সেই নির্দেশ মেনে ইতিমধ্যেই বহু রাস্তা এবং উঁচু জায়গা থেকে আলো খুলে নিয়েছে পুজো কমিটিগুলো।
সপ্তমীতেই চন্দননগরের মানকুন্ডু কানাইলালপল্লির পুজোমণ্ডপে ঘটে যায় বিপর্যয়। এ বছর ওই পুজোকমিটির চমক ছিল ৭০ ফুটের পুজোমণ্ডপ। মণ্ডপের সামনে ফাইবারের জগদ্ধাত্রী তৈরি হয়েছিল। মণ্ডপের উচ্চতা খুব বেশি হওয়ায় বিকেলে হাওয়ার দমকে উল্টে পড়ে সেটি। বাঁশ চাপা পড়ে জখম হন বেশ কয়েক জন। স্থানীয়দের একাংশের দাবি, মণ্ডপের উচ্চতা বেশি হওয়ায় হালকা হাওয়াতেই হুড়মুড়িয়ে ভেঙে গিয়েছে।
তার পর আর ঝুঁকি নিচ্ছে না প্রশাসন। বুধবারও বৃষ্টি চলছে। দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য উঁচু করে বাঁধা যে সব আলোকসজ্জা রয়েছে, সেগুলো নামিয়ে নেয় অনেক কমিটি। বাকি যা আলোকসজ্জা রয়েছে সেগুলোর ‘স্বাস্থ্যপরীক্ষা’ করে নিতে নির্দেশ দেয় প্রশাসন। পুলিশ সূত্রে খবর, প্রাকৃতিক দুর্যোগে নতুন করে যাতে দুর্ঘটনা না হয়, সে জন্য রাস্তার দু’পাশ থেকে আলোর তোরণ খুলে ফেলতে বলা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে খবর, অষ্টমীর দিন চন্দনগরের ১৮০টি পুজো কমিটিকে জানানো হয়েছে, আগে সুরক্ষা, পরে বিনোদন। বৃষ্টি, দুর্যোগে যাতে কোনও অঘটন না হয়, সে দিকে নজর রাখতে হবে। যে যে জায়গায় উঁচু করে আলোর তোরণ বানানো হয়েছে, সেগুলো খুলে নিতে হবে। বাকি যেখানে যেখানে আলোকসজ্জা রয়েছে, সেগুলো ভাল করে পরীক্ষা করে নিতে হবে।
নিম্নচাপের প্রভাবে বুধবার সকাল থেকেই হুগলির নানা জায়গায় শুরু হয়েছে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টি। সঙ্গ দিয়েছে ঝোড়ো হাওয়া। মঙ্গলবার বিকেলে দমকা হাওয়ার মানকুন্ডু কানাইলালপল্লির ‘বিশ্বের সবচেয়ে বড় জগদ্ধাত্রী মণ্ডপ’ আচমকাই ভেঙে পড়ে। দুর্ঘটনায় আহত হন দর্শনার্থীরা। ঘটনার পরই দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা চন্দননগরের বিধায়ক ইন্দ্রনীল সেন, চন্দননগর পুলিশ কমিশনার-সহ প্রশাসনের পদস্থ আধিকারিকেরা। তাঁরা পরিস্থিতি পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় বেশ কিছু নির্দেশ দেন। তার পরেই বিভিন্ন পুজো কমিটি আলোর তোরণ খুলে নিয়েছে। অন্য দিকে, সকাল থেকেই বজ্রবিদ্যুৎ-সহ প্রবল বৃষ্টিতে চন্দননগরের বিভিন্ন আলোর তোরণ, আলোর স্ট্রাকচারে প্রভাব পড়ে। বৃষ্টির জেরে চন্দননগরের একাধিক লাইটের স্ট্রাকচারের বাঁধন আলগা হয়ে পড়তে দেখা যায়। ফলে আশঙ্কা তৈরি হয়। পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে কমিটির উদ্যোক্তারা দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে নিরাপত্তার স্বার্থে আলোকসজ্জা খুলে ফেলেন, যাতে দর্শনার্থী ও পথচারীদের কোনও ধরনের দুর্ঘটনা না ঘটে।
চন্দননগরের একটি জগদ্ধাত্রীপুজো কমিটির সদস্যের কথায়, ‘‘সকাল থেকেই বজ্রবিদ্যুৎ-সহ প্রবল বৃষ্টি শুরু হয়। তাতে আলোর তোরণ, আলোর কাঠামো ইত্যাদি আলগা হয়ে পড়েছিল। বৃষ্টি-জলের মধ্যেও দর্শনার্থীরা ভিড় করছেন। এই পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে কমিটির উদ্যোক্তারা দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে সকলের নিরাপত্তার স্বার্থেই আলোকসজ্জা খুলে ফেলেছেন। দর্শনার্থী তথা পথচারীদের নিরাপত্তাই সবচেয়ে আগে দেখতে হবে।’’ বুধবার বৃষ্টি চলাকালীন দু’টি জায়গায় আলোর তোরণ ভেঙে পড়ার খবর মিলেছে। তবে তাতে কেউ হতাহত হননি।
বৃষ্টি-বাদলায় উন্মাদনায় অবশ্য ভাটা পড়েনি। কলকাতায় দুর্গাপুজোর মতোই চন্দননগর জগদ্ধাত্রী পুজোয় জমজমাট ভিড়। দিনের বেলা অনেকেই ঠাকুর দেখতে বেরিয়ে পড়েছিলেন। বৃষ্টি উপেক্ষা করে নতুন পোশাক আর মাথায় ছাতা দিয়ে মণ্ডপ থেকে মণ্ডপ পরিক্রমা করছে আট থেকে আশি।