Hooghly TMC Leader Murder Case

ভাড়াটে খুনি বন্দুক ধরতে জানেন না, তাই কাটারি হাতে খুন তৃণমূল নেতাকে! তার পর বান্ধবীর সঙ্গে ওয়ো-তে, ধরা পড়ে ভ্যাবাচ্যাকা দুই

হুগলির কানাইপুর অটোস্ট্যান্ডের কাছে নিজের দোকানের সামনে খুন হন পিন্টু। পেশায় ব্যবসায়ী পিন্টু কানাইপুর পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য ছিলেন। তাঁকে কাটারি দিয়ে কুপিয়ে মেরেছিলেন শাসনের বাসিন্দা বিশ্বজিৎ প্রামাণিক। সঙ্গে ছিল অপরাধের সঙ্গী দীপক মণ্ডল।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০২৫ ২০:৩৩
Share:

তৃণমূল নেতা খুনে ধৃত দুই ভাড়াটে খুনি। (বাঁ দিকে) বিশ্বজিৎ প্রামাণিক। (ডান দিকে) দীপক মণ্ডল। —নিজস্ব চিত্র।

৩ লক্ষ টাকা সুপারি নিয়েছিলেন খুনের জন্য। কিন্তু বন্দুক ধরতেই জানেন না। কিন্তু বরাত নিয়েছেন, খুন তো করতেই হবে। তাই হুগলির তৃণমূল নেতাকে কাটারি নিয়ে কুপিয়ে খুন করে পালিয়েছেন দুই যুবক। খুনের তিন দিনের মধ্যে এক জনকে পুলিশ ধরেছে উত্তর ২৪ পরগনার বারাসতের একটি হোটেল (ওয়ো) থেকে। বান্ধবীর সঙ্গে হোটেলে থাকা সেই ‘খুনি’র সটান প্রশ্ন পুলিশকে, ‘‘আমার খোঁজ পেলেন কী ভাবে?’’

Advertisement

গত বুধবার সন্ধ্যায় হুগলির কানাইপুর অটোস্ট্যান্ডের কাছে নিজের দোকানের সামনে খুন হন পিন্টু চক্রবর্তী। পেশায় ব্যবসায়ী পিন্টু কানাইপুর পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য ছিলেন। তাঁকে কাটারি দিয়ে কুপিয়ে মেরেছিলেন শাসনের বাসিন্দা বিশ্বজিৎ প্রামাণিক। সঙ্গে ছিলেন অপরাধের সঙ্গী দীপক মণ্ডল। পুলিশ সূত্রে খবর, পিন্টুর এক বন্ধু তথা ব্যবসার অংশীদার বিশ্বনাথ দাস ওরফে বিশা খুনে মূল অভিযুক্ত। তিনিই সুপারি দিয়েছিলেন বিশ্বজিৎ এবং দীপককে। বিশাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। পাশাপাশি, এলাকার বিভিন্ন সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তদন্তকারীরা আততায়ীদের এক জনকে চিহ্নিত করেন। তাঁকে কারও সঙ্গে বার বার ফোনে কথা বলতে দেখা যায়।

ঘটনাক্রমে এলাকার সেই সময়কার ‘রিয়েল টাইম লোকেশন’ ট্র্যাক করা শুরু করে পুলিশ। একটি নির্দিষ্ট মোবাইল নম্বর অফ দেখাতে থাকে। তবে সেই নম্বরটি ট্র্যাক করে বিশ্বজিতের খোঁজ মেলে। স্থানীয় সূত্রকে কাজে লাগিয়ে বিশ্বনাথকে আগেই ধরা হয়েছিল। এ বার তাঁর কাছে পাওয়া কিছু তথ্য এবং ফোন নম্বর ট্র্যাক করে বারাসতের একটি হোটেলে হানা দেয় পুলিশের একটি দল। পুলিশ সূত্রে খবর, হোটেলের একটি ঘরে এক যুবতীর সঙ্গে ছিলেন বিশ্বজিৎ। পুলিশ কী ভাবে তাঁর খোঁজ পেল, মাথায় ঢুকছিল না ওই ভাড়াটে খুনের। তাই পুলিশের উদ্দেশে প্রশ্ন করেন তিনি।

Advertisement

অন্য খুনি দীপককে তাঁর বাড়ি থেকে গ্রেফতারের পরে তৃণমূল নেতার খুনের তদন্তে চন্দননগরের ডিডি এসবি পুলিশের বিশেষ দল অনেক তথ্য পেয়েছে। জানা যাচ্ছে, খুনের আগে দিন দুয়েক বিশার বাড়িতেই ছিলেন দুই ভাড়াটে খুনি। দু’দিন ধরে এলাকা চিনতে সময় নেন তাঁরা। তার পর বুধবার ‘অপারেশন’ চালান। তবে ভাড়াটে খুনিদের কেউই আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করতে জানেন না। বিশ্বজিৎ কাটারি দিয়ে কুপিয়ে মেরে ফেলেন তৃণমূল নেতা তথা ব্যবসায়ী পিন্টুকে। তাঁকে সাহায্য করেন দীপক। বন্ধুকে খুনের বরাত দেওয়া বিশা তখন অপেক্ষা করছিলেন খানিক দূরে স্কুটার নিয়ে। খুনের পরে খানিক হেঁটে এগিয়ে যান দুই ভাড়াটে খুনি। পরে তাঁদের স্কুটি করে কোন্নগর রেলস্টেশনে ছেড়ে দিয়ে যান বিশা। এর পর থেকে ট্রেন ধরে বিশ্বজিৎও দীপক বারাসতে চলে যান।

পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃত দু’জনের কাছ থেকে সুপারির তিন লক্ষ টাকার অনেকাংশে উদ্ধার করা গিয়েছে। চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি (শ্রীরামপুর) অর্ণব বিশ্বাস বলেন, ‘‘বিশ্বনাথ দুই ভাড়াটে খুনিকে তিন লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন পিন্টুকে খুন করার জন্য। সেই টাকা নিয়ে ভিন্‌রাজ্যে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল দু’জনের। তার আগেই পুলিশ তাঁদের ধরে ফেলেছে।’’ ডিসি আরও জানান, জমি সংক্রান্ত বিবাদের জেরে এই খুন বলে প্রথমিক তদন্তে উঠে এসেছে। অন্য দিকে, যে ব্যক্তি খুনি ভাড়া করেছিলেন, সেই বিশা আবের হুগলির কুখ্যাত দুষ্কৃতী ভোলানাথ দাস ওরফে বাঘার ভাই। এক সময়ে বাঘা বনাম হুব্বা শ্যামলের লড়াইয়ের কারণে কোন্নগরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল অশান্ত থাকত। হুব্বা ২০১১ সালে মারা যাওয়ার আগেই বাঘা এলাকা ছাড়েন। তবে তাঁর ভাই কানাইপুরেই থাকেন। বেশ কিছু ব্যবসা রয়েছে তাঁর।

স্থানীয় সূত্রে খবর, কানাইপুর এলাকার জমি কেনাবেচা করতে গেলে তৃণমূল নেতা পিন্টুকে জানাতেই হত। তাঁকে এড়িয়ে জমি কেনা বা বিক্রি হত না। হিন্দমোটরের বহুতল আবাসনের প্রকল্প শুরু হয়েছে। পার্শ্ববর্তী কানাইপুর অঞ্চলেও জমির দাম হু-হু করে বাড়ছে। বস্তুত, কলোনি এলাকার জমি ওই আবাসন প্রকল্পের পাশেই। তাই চাহিদাও বেশি। কাছেই দিল্লি রোড। পিন্টুর গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবসা ছিল। পাশাপাশি তিনি জমির কারবার করতেন। পরিচিতদের দাবি, পিন্টুর খুনের নেপথ্যে জমির কারবারই মূল কারণ।

তবে এই খুনের তদন্তে নেমে একটি বিষয় অবাক করেছে পুলিশকে। সুপারি নিয়ে কাউকে খুন করলে বন্দুক বা পিস্তল দিয়ে খুন করাই দস্তুর। কিন্তু ওই দুই ভাড়াটে খুনি গুলি চালাতে পারেন না। তাঁরা কাটারি দিয়েই ‘অর্ডারের’ কাজ সামলান। ডিসি জানান, সুপারি দিয়েও দু’দিন নিজের কাছেই তিন লক্ষ টাকা রেখেছিলেন বিশ্বনাথ। ‘কাজ’ শেষ হলে খুনিদের নিরাপদে পালাতেও সাহায্যও করেন। তবে তৃণমূল নেতা খুনে আরও কেউ যুক্ত থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছে না পুলিশ। তাই ধৃতদের রবিবার আদালতে হাজির করে রিমান্ডে নেওয়া হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement