শব্দবাজির তাণ্ডব ঠেকাতে আজ টহল যৌথ বাহিনীর 

চুঁচুড়ায় উদ্ধার ৩০০ কেজি চকোলেট বোমা, দোদোমা

শনিবার হুগলি শিল্পাঞ্চলের কয়েকটি জায়গা থেকে শব্দবাজির আওয়াজ পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু আজ, কালীপুজোর রাতে সেই শব্দে লাগাম পরাতে হুগলি শিল্পাঞ্চলে যৌথ নজরদারিতে নামছে পুলিশ এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০১৯ ০০:১৮
Share:

উদ্ধার হওয়া বাজি। ছবি: তাপস ঘোষ

এ বার কালীপুজোয় ডিজে ও শব্দবাজির তাণ্ডব ঠেকাতে হুগলিতে আরও সক্রিয় হচ্ছে পুলিশ প্রশাসন। পথে নামছে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও।

Advertisement

শনিবার হুগলি শিল্পাঞ্চলের কয়েকটি জায়গা থেকে শব্দবাজির আওয়াজ পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু আজ, কালীপুজোর রাতে সেই শব্দে লাগাম পরাতে হুগলি শিল্পাঞ্চলে যৌথ নজরদারিতে নামছে পুলিশ এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। তাদের অন্তত সাতটি দল রাস্তায় ঘুরবে। জেলা সদরে পুলিশের ‘কন্ট্রোল-রুম’ থেকে অভিযোগ পেলে তারা দ্রুত পদক্ষেপ করবে। ভদ্রেশ্বর, চন্দননগর, চুঁচুড়া, ডানকুনি এবং উত্তরপাড়ায় থাকছে যৌথবাহিনী। কোনও কোনও দলে পরিবেশ বিশেষজ্ঞেরাও থাকবেন। থাকবে শব্দের মাত্রা মাপার যন্ত্র (সাউন্ড লিমিটার)। পুলিশের বিশেষ বাহিনীও সাদা পোশাকে শব্দবাজি রুখতে রাস্তায় থাকবে। পর্ষদের তরফে ইতিমধ্যেই জেলা (গ্রামীণ) পুলিশ এবং চন্দননগর কমিশনারেটের বিভিন্ন থানায় সাউন্ড লিমিটার
দেওয়া হয়েছে।

শব্দবাজি এবং ডিজে বন্ধের আবেদন জানিয়ে শনিবার সকালে চুঁচুড়ার ঘড়ির মোড় থেকে পিপুলপাতি পর্যন্ত মিছিল হয় পুলিশের উদ্যোগে। পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবীর, ডিসি (চন্দননগর) কে কান্নান, বিধায়ক অসিত মজুমদার, পুরসভার কাউন্সিলর থেকে বিভিন্ন পেশার এবং নানা বয়সের কয়েকশো মানুষ মিছিলে হাঁটেন। পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘‘কালীপুজো এবং ছটপুজোয় শব্দবাজি ও ডিজে নিয়ন্ত্রণে পুলিশের তরফে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের সঙ্গে সাত-আটটি বৈঠক হয়েছে। প্রচার হয়েছে। এতেও কাজ না হলে পুলিশ কড়া পদক্ষেপ করবে। যারা শব্দবাজি ফাটাবেন বা ডিজে বাজাবেন গ্রেফতার করে তাঁদের আদালতে পাঠানো হবে। পরিবেশ নিয়ে কোনও অবহেলা নয়।’’ এ দিন চুঁচুড়ার বিভিন্ন জায়গায় হানা দিয়ে পুলিশ প্রায় ৩০০ কিলোগ্রাম শব্দবাজি উদ্ধার করেছে।

Advertisement

শব্দবাজির তাণ্ডব রুখতে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফেও জেলায় ‘কন্ট্রোল রুম’ খোলা হচ্ছে। সংস্থার তরফে পরিবেশকর্মী নব দত্ত জানান, শব্দবাজির অভিযোগ পেলেই সংশ্লিষ্ট থানায়, জেলা পুলিশ বা কমিশনারেটে জানানো হবে। তাতেও কাজ না হলে রাজ্য পুলিশকে জানানো হবে। তিনি বলেন, ‘‘গত কয়েক বছরের তুলনায় এ বার নাগরিক সচেতনতার পাশাপাশি পুলিশ বা দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্যদের সক্রিয়তা বেড়েছে। আরও আগে কাজটা শুরু হলে ভাল হত। তবুও আমরা আশাবাদী, শব্দদূষণকে অনেকটা ঠেকানো যাবে।’’ চুঁচুড়ার বাসিন্দা, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সনৎ রায়চৌধুরী বলেন, ‘সচেতনতামূলক কর্মসূচির পাশাপাশি পুলিশকে কড়া ব্যবস্থা নিতে হবে। সারা বছর এই কাজ করতে হবে।’’

হুগলির নানা প্রান্তে, বিশেষত গ্রামাঞ্চলে বাজি তৈরি হয়। ধড়পাকড়ের ফলে অবশ্য বহু ক্ষেত্রেই কারিগরেরা আতসবাজি বেশি তৈরি করছেন। কিন্তু শব্দবাজি তৈরি বন্ধ হয়নি। ধনেখালি, জাঙ্গিপাড়া, পোলবা, ডানকুনি, আরামবাগের কিছু কিছু অংশে বেআইনি ভাবে বাজি তৈরি হয় বলে অভিযোগ। অনেক সময়ে দুর্ঘটনাও ঘটে। ঝুঁকি সত্ত্বেও লাভজনক এই ব্যবসা থেকে কারবারিরা
সরে আসেননি।

পরিবেশবিদ, চন্দননগরের বাসিন্দা বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘শব্দবাজি বা ডিজে-তে লাগাম পরানো শুধুমাত্র পুলিশ বা সরকারের কাজ নয়। সাধারণ মানুষকে বুঝতে হবে পরিবেশের উপর কী ভয়ঙ্কর প্রভাব পড়ছে। দূষণে দিল্লির আকাশ ঢেকে যাচ্ছে। কলকাতার পরিস্থিতিও মোটেই ভাল নয়। আনন্দ করতে গিয়ে আমরা পরিবেশের বিপদ ডেকে আনছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন