আঁধার: মোমবাতির আলোয় চলছে পড়াশোনা। নিজস্ব চিত্র
দিন দিন অন্ধকার গাঢ় হচ্ছে গোন্দলপাড়া জুটমিলের শ্রমিক মহল্লায়। গত বছরের ২৭ মে থেকে চন্দননগরের ওই জুটমিলে কাজ বন্ধ। জুটমিল কবে খুলবে ঠিক নেই। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আবার প্রতিদিন ১০-১২ ঘণ্টা ধরে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে শ্রমিক মহল্লায়। ফলে, শ্রমিক পরিবারগুলির দৈনন্দিন কাজ ব্যাহত হচ্ছে। বেশি বিপাকে পড়ছেন সেখানকার ছাত্রছাত্রীরা। গরম আরও বাড়লে কী হবে, তা নিয়ে এখন থেকেই আতঙ্কে ভুগছেন শ্রমিকেরা।
গোন্দলপাড়ার শ্রমিক মহল্লায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে সিইএসসি। সেই বিদ্যুতের বিল জুটমিল কর্তৃপক্ষই মেটাতেন। কিন্তু জুটমিল বন্ধের পর থেকে তা আর মেটানো হয়নি বলে সিইএসসি সূত্রের দাবি। সিইএসসি-র স্থানীয় অফিসের এক কর্তা জানিয়েছেন, জুটমিলটি বন্ধ হওয়ার পর থেকে কর্তৃপক্ষ বকেয়া বিল মেটাচ্ছেন না। শ্রমিক মহল্লায় বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হয়। কিন্তু বকেয়া না-মেলায় এবং শহরের অন্য জায়গায় বিদ্যুৎ সরবরাহে যাতে বিভ্রাট না-ঘটে, সেই কারণে শ্রমিক মহল্লার বিদ্যুৎ সংযোগ পর্যায়ক্রমে বিচ্ছিন্ন রাখা হচ্ছে।
এ নিয়ে জুটমিল কর্তৃপক্ষের কোনও বক্তব্য জানা যায়নি। চন্দননগরের উপ-শ্রম কমিশনার বলেন, ‘‘শ্রমিক মহল্লা থেকে বিদ্যুৎ সমস্যার কথা জানানো হয়েছে। জুটমিল কর্তৃপক্ষের কাছে জল এবং বিদ্যুতের জোগান স্বাভাবিক রাখার অনুরোধ করেছি।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
শ্রমিক অসন্তোষ এবং আর্থিক সঙ্কটকে কারণ দেখিয়ে কর্তৃপক্ষ মিলে ‘সাসপেনশন অব ওয়ার্ক’-এর নোটিস জারি করেছিলেন গত বছরের ২৭ মে। তার জেরে সমস্যায় পড়েন প্রায় চার হাজার শ্রমিক। কাজের খোঁজে অনেকে শহর ছেড়েছেন। সংসার চালাতে তাঁদের পরিবারের মহিলাদের অনেকে পরিচারিকার কাজ নিয়েছেন। তরুণ-যুবক সদস্যেরা টিউশন বা ছোটখাটো কাজ করছেন। কিন্তু শ্রমিক মহল্লার স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা পড়েছেন সমস্যায়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিংয়ে তাঁরা নাজেহাল হচ্ছেন। সদ্য মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিক মিটেছে। কষ্ট করেই পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে হয়েছে পরীক্ষার্থীদের।
শ্রমিকদের অভিযোগ, কোনও দিন সকাল ৮টা থেকে রাত ৭টা পর্যন্ত টানা লোডশেডিং থাকছে, আবার কোনও দিন ভোর ৫টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত। জুটমিল কর্তৃপক্ষের আচরণে এ বার শ্রমিক পরিবারের ছাত্রছাত্রীদেরও ভুগতে হচ্ছে।
দীর্ঘদিন রক্ষণাবেক্ষণ না-হওয়ায় শ্রমিক আবাসনগুলির অবস্থা বেহাল। বহু ঘরের টিন-টালির চাল ফুটো হয়ে গিয়েছে। বহু দেওয়ালের পলেস্তারা খসে পড়ছে। একটি শ্রমিক পরিবারের ছাত্র রাজা ভগৎ বলেন, ‘‘জন্মের পর থেকে বাবার মিল বন্ধ-খোলার নাটক দেখছি। তার মধ্যেও পড়াশোনা করেছি। খরচ জোগাতে গৃহশিক্ষকতা করছি। কিন্তু এই বিদ্যুৎ বিভ্রাট সহ্য হচ্ছে না।’’ আর এক শ্রমিক পরিবারের সদস্য রেখা চৌধুরীর ক্ষোভ, ‘‘জুটমিল কর্তৃপক্ষের স্বৈরাচারী নীতির ফলে চটশিল্প ক্রমশই ধ্বংসের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। তার জেরেই আমাদের সংসারে অন্ধকার নামছে।’’