আঁধারে আলো জ্বালে সাজিলা-সুমিতার পুজো

সরকারি আবাসিক স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা গত কয়েকদিন ধরেই বাড়ি পরিষ্কার করেছে। লাগিয়েছে রং-বেরঙের পোস্টার, বাগানের গাছের গোড়ায় গোড়ায় রং করা হয়েছে। আর একেবারে শেষ দিনে রঙিন কাগজ কাটা নকশা, আলপনায় সেজে উঠেছে মণ্ডপ।

Advertisement

নুরুল আবসার

উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০১৮ ০৩:১৬
Share:

স্কুল সাজানোর কাজে যোগ দিয়েছে সকলেই। ছবি: সুব্রত জানা

চোখে নেই রঙ, নেই মুখের ভাষা, শব্দ কেমন হয়— বুঝতে পারে না ওদের কেউ কেউ। ওদের কারও জন্ম হিন্দু পরিবারে, কেউ মুসলমান, কেউ আবার আদিবাসী পরিবারের সন্তান।

Advertisement

কিন্তু শীতের সকালগুলো ওদের কাছে নিয়ে আসে আনন্দ। সেই কবে থেকে শুরু হয়েছে প্রস্তুতি— সরস্বতী পুজোর। উলুবেড়িয়া জগৎপুরের আনন্দভবন ডেফ অ্যান্ড ব্লাইন্ড স্কুলে আজ বাণী বন্দনায় ওরা সকলেই যোগ দেবে সকাল সকাল।

আগের দিন বিকেল পর্যন্ত স্কুলের পাঁচিলে রঙ করেছে বছর পনেরোর মৃণাল শেখ। কেন দেওয়াল রং করছ? জানতে চাওয়ায় মূক-বধির মৃণাল হাতের ইশারায় দেখাল বাগদেবীর বীণাটি।

Advertisement

অর্থাৎ, পুজোর প্রস্তুতি চলছে। মৃণালের পাশেই ছিল দীপক প্রামাণিক, হাতে তার রঙের বালতি। সেও মূক-বধির। কিন্তু চোখ দেখেই বোঝা যায়, মনের মধ্যে উৎসাহ বুদবুদ তুলছে পুজোর আনন্দে।

সরকারি আবাসিক স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা গত কয়েকদিন ধরেই বাড়ি পরিষ্কার করেছে। লাগিয়েছে রং-বেরঙের পোস্টার, বাগানের গাছের গোড়ায় গোড়ায় রং করা হয়েছে। আর একেবারে শেষ দিনে রঙিন কাগজ কাটা নকশা, আলপনায় সেজে উঠেছে মণ্ডপ।

স্কুলের ৮০ জন ছাত্রছাত্রীর বেশিরভাগই মূক-বধির। বাকিরা দৃষ্টিহীন। এদের মধ্যে ৩২ জন মুসলিম। তবে বাণীবন্দনায় ধর্মের ভেদ নেই। জানালেন স্কুলের শিক্ষক অজয় দাস, দীপ্তেন্দু মান্নারা।

তাঁরাই জানালেন অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী সাজিলার কথা। বছর চোদ্দর দৃষ্টিহীন সাজিলার এখানে আছে গত ছ’বছর।

রবিবার সারা সকাল আলপনায় রং দিয়েছে সে। সাজিলা বলে, ‘‘ঘর পরিষ্কার করেছি। সাজের জিনিস কিনেছি। পুজোর দিন নতুন শাড়ি পরব। পুষ্পাঞ্জলি দেব।’’

সাজিলার বন্ধু মামনি আড়ংও দৃষ্টিহীন। সেও আলপনা দিয়েছে। তাদের বন্ধু দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সুমিতা কিস্কু আবার আদিবাসী সম্প্রদায়ের। ক’দিন আগেই দেশে গিয়েছিল সে, বাঁধনা পরব যোগ দিতে। বাঁধনা পরবে সুমিতা শাড়ি পরে, খোঁপায় দেয় ফুল।

‘‘সোমবারও ঠিক সে ভাবেই সাজব’’, জানায় সে। বলে, ‘‘স্কুলের সরস্বতী পুজোর আনন্দ বাঁধনা পরবের থেকে কম কিছু নয়!’’

সরস্বতী পুজোর দিন স্কুলে আসেন অভিভাবকেরাও। নানা ধর্ম, বর্ণের সমন্বয়ের খাওয়া দাওয়া হয় স্কুল চত্বরেই। স্কুলের মাঠেই হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। প্রতিবন্ধকতার অন্ধকার কেটে যায় কচি গলার কবিতা, গানে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন