সদস্যদের সঙ্গে বিতণ্ডায় জড়ালেন জেলা সভাধিপতি

দলীয় সদস্যদের প্রশ্নের মুখে মেজাজ হারিয়ে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ উঠল হুগলি জেলা পরিষদের সভাধিপতি মেহবুব রহমানের বিরুদ্ধে। এক সদস্যকে তিনি ‘তুই তোকারি’ করেছেন, এই অভিযোগ নিয়ে শুক্রবার হুলুস্থূল পড়ে যায় জেলা পরিষদে। সদস্যরা সভাধিপতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠেন। বানচাল হয়ে যায় সভার কাজ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৫ ০০:৪৫
Share:

দলীয় সদস্যদের প্রশ্নের মুখে মেজাজ হারিয়ে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ উঠল হুগলি জেলা পরিষদের সভাধিপতি মেহবুব রহমানের বিরুদ্ধে। এক সদস্যকে তিনি ‘তুই তোকারি’ করেছেন, এই অভিযোগ নিয়ে শুক্রবার হুলুস্থূল পড়ে যায় জেলা পরিষদে। সদস্যরা সভাধিপতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠেন। বানচাল হয়ে যায় সভার কাজ।

Advertisement

জেলা পরিষদ সূত্রের খবর, এ দিন দুপুরে বাজেট সংক্রান্ত সভা ছিল। সভায় চণ্ডীতলা থেকে নির্বাচিত সদস্য সুরজিৎ মণ্ডল বলেন, গত ১৩ মার্চের বৈঠকে তিনি উপস্থিত হননি আগের সভায় তাঁর বক্তব্য প্রস্তাবনায় না রাখার জন্য। এতে তিনি অপমানিত হন। বিষয়টি তিনি লিখিত ভাবেও সংশ্লিষ্ট সব জায়গায় জানিয়েছেন। এমনটা যেন আর কারও সঙ্গে না হয়। সে ক্ষেত্রে তিনি ইস্তফা দেবেন। কোন কোন তহবিল থেকে কোথায় কত টাকার কাজ হয়েছে, ব্লক ধরে ধরে তা নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি জানান তিনি। অন্য সদস্যরাও এতে সম্মতি প্রকাশ করেন। জেলা পরিষদের আগের বৈঠকে সিঙ্গুরের একটি বহুতলের নক্শা অনুমোদনের জন্য টাকা চাওয়ার অভিযোগ ওঠে সভাধিপতির আপ্ত-সহায়কের বিরুদ্ধে। সিঙ্গুর ব্লকের সদস্যা করবী মান্না এদিনের বৈঠকে সেই প্রসঙ্গ তোলেন।

এর পরেই সভাধিপতি বলেন, এমন কোনও ঘটনাই ঘটেনি। কতিপয় সদস্য-সদস্যা মিথ্যা অভিযোগ করছেন। করবীদেবী তখন বলেন, আপ্ত-সহায়ককে কেন সভাধিপতি আড়াল করছেন। সুরজিৎবাবুও এ নিয়ে প্রশ্ন করেন। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সদস্য জানান, এর পরেই মেজাজ হারান মেহবুব। করবীদেবীকে বলেন, তিনিই এ সব করাচ্ছেন। সুরজিৎবাবুকেও ‘তুই-তোকারি’ করতে শুরু করেন। সভাধিপতি এ-ও জানান, জেলা পরিষদ পরিচালনা করা নিয়ে দলের ঊর্দ্ধতন নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। সুরজিৎবাবু যেন এ নিয়ে চেঁচামেচি না করেন। সুরজিৎবাবুও পাল্টা সভাধিপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে থাকেন। প্রায় সব সদস্যই তাঁর সঙ্গে গলা মেলান। এরপর তুমুল হট্টগোল শুরু হয়ে যায় দু’পক্ষের মধ্যে। তার জেরেই পণ্ড হয় সভার কাজ। পরিস্থিতি সামাল দিতে বর্ষীয়ান সদস্য শৈলেন সিংহ সুরজিৎবাবুকে সভাস্থল থেকে সরিয়ে নিয়ে যান।

Advertisement

অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) সুমন ঘোষের সামনেই ওই ঘটনার সূত্রপাত হয়। সেই সময় জেলা পরিষদের অন্যান্য কর্মীরাও হাজির ছিলেন। পরিস্থিতি ক্রমেই তপ্ত হচ্ছে দেখে অস্বস্তি এড়াতে তিনি সভাস্থলের বাইরে চলে যান।

তাতেও অবশ্য পরিস্থিতির বিশেষ হেরফের হয়নি। সভাস্থল থেকে বাইরে বেরিয়ে উত্তেজিত সদস্যরা গোটা ঘটনা নিয়ে দলের নেতাদের কাছে মোবাইলে ফোন করে নালিশ জানাতে থাকেন। যদিও কোনও সদস্যই এ নিয়ে সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ খুলতে চাননি। ঘটনা প্রসঙ্গে সুরজিৎবাবুকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “যা বলার দলকে বলব।”

জেলা সদর মহকুমা থেকে নির্বাচিত এক সদস্যা বলেন, “আজ যা হল, এমনটা আশা করিনি। কোনও সদস্য এক্তিয়ারের বাইরে গিয়ে কোনও প্রশ্ন করেননি। পরিস্থিতি যা তাতে তো কোনও কিছু জানার থাকলে দশ বার ভাবতে হবে।” শ্রীরামপুর মহকুমার এক সদস্যের কথায়, “এর আগেও জেলা পরিষদের পরিস্থিতি নিয়ে দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বকে অবহিত করেছিলাম আমরা। তা সত্ত্বেও এ দিন যা হল, তার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। তবে সদস্যরা মিলিত ভাবেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।” সভাধিপতির বক্তব্য, “কোনও গোলমাল তো হয়নি! বৈঠকে উন্নয়ন নিয়ে সদস্যদের মধ্যে আলাপ আলোচনা হয়েছে।” তাঁর সংযোজন, “কেউ একটু আস্তে কথা বলেন, কেউ একটু জোরে। কেউ আবার চেঁচিয়ে কথা বলেন। সব মিলিয়ে হয়তো একটু হইচই হয়েছে। বলার মতো কিছু হয়নি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন