তথ্য গোপনের অভিযোগ তুললেন বিরোধীরা
ICU

আইসিইউ শয্যা নিয়ে চিন্তা বাড়ছে হুগলিতে

দিন কয়েক আগেই চণ্ডীতলার মশাটের এক সংক্রমিত মহিলাকে আরামবাগে পাঠাতে হয় শ্রমজীবী এবং ডানকুনিতে আইসিইউ শয্যা না-থাকায়।

Advertisement

প্রকাশ পাল

চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০২০ ০২:৪৪
Share:

প্রতীকী ছবি।

করোনা সংক্রমিত ডানকুনির এক বৃদ্ধা দিনকয়েক ভর্তি ছিলেন কলকাতার একটি নার্সিংহোমে। খরচ চালাতে না-পেরে সোমবার তাঁকে শ্রীরামপুর শ্রমজীবী কোভিড হাসপাতালে আনা হয়। আত্মীয়েরা জানান, চিকিৎসকেরা তাঁকে আইসিইউতে রাখার পরামর্শ দেন। কিন্তু ওই শয্যা ভর্তি ছিল। জেলার বাকি তিন কোভিড হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে যায়, সেখানেও আইসিইউ শয্যা বাড়ন্ত। শেষে শ্রমজীবীতেই আইসিইউতে থাকা স্থিতিশীল এক রোগীকে সাধারণ শয্যায় সরিয়ে ওই মহিলাকে ভর্তি করানো হয়।

Advertisement

দিন কয়েক আগেই চণ্ডীতলার মশাটের এক সংক্রমিত মহিলাকে আরামবাগে পাঠাতে হয় শ্রমজীবী এবং ডানকুনিতে আইসিইউ শয্যা না-থাকায়।

পুজোর পরে সংক্রমণের হাল কোথায় পৌঁছবে, তা নিয়ে চিন্তার অন্ত নেই চিকিৎসকদের। কিন্তু তার আগেই হুগলিতে কোভিড হাসপাতালে বিশেষত আইসিইউ শয্যার চেহারা চিকিৎসকদের চিন্তায় রেখেছে। এই জেলায় ৪টি হাসপাতালে করোনার চিকিৎসা হচ্ছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, চার হাসপাতাল মিলিয়ে মোট ২২৯টি শয্যা রয়েছে। তার মধ্যে ১৭৬টি সাধারণ শয্যা এবং ৫৩টি আইসিইউ শয্যা। কিন্তু আইসিইউ শয্যা প্রায় পুরোটাই ভর্তি।

Advertisement

এই অবস্থায় কী ভাবছে প্রশাসন?

প্রশাসনের আধিকারিকদের বক্তব্য, ঝুঁকি না নিয়ে হুগলিতে কোভিড-শয্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। সিঙ্গুরের ট্রমা কেয়ার সেন্টারে ১১০ শয্যার কোভিড হাসপাতাল চালু করা হচ্ছে। প্রশাসনের এক আধিকারিকের

কথায়, ‘‘একটা হাসপাতালে না হলে অন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু প্রয়োজনে আইসিইউ শয্যা

মেলেনি, এমন ঘটনা কিন্তু ঘটেনি। তা ছাড়া, গোড়া থেকেই পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে পরিকাঠামো গড়া হয়েছে। এখনও তা করা হচ্ছে।’’

প্রশাসন যা-ই বলুক, শয্যার হিসেব নিয়ে প্রশ্ন উঠছেই। কোভিড হাসপাতালে কত শয্যা ফাঁকা আছে, রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের পোর্টালে প্রতিদিনের সেই হিসেব তুলে ধরা হয়। পরিজনদের ভর্তি করতে হলে কোথায় কত শয্যা রয়েছে, সাধারণ মানুষ যাতে তা বুঝতে পারেন, তাই এই ব্যবস্থা। কিন্তু পোর্টালে তথ্য ভুলে ভরা বলে অভিযোগ। যে হাসপাতালে কোভিড চিকিৎসার কথা শুধুমাত্র ভাবা হয়েছিল, সেখানকার শয্যার তালিকাও পোর্টালে রয়েছে।

এই নিয়ে বিরোধীরা অভিযোগের আঙুল তুলছেন সরকারের দিকে। ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্পাদক নরেন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সরকার তথ্য গোপন করছে। সরকার বুঝতে পেরেছে, পুজোর পরের পরিস্থিতি তারা সামাল দিতে পারবে না। আইসিইউ শয্যা কোথায় কত ফাঁকা আছে, সেই তথ্য মানুষকে জানানো জরুরি। কিন্তু সরকারি পোর্টালে সেই তথ্যের নামগন্ধ নেই।’’

সিপিএম নেতৃত্বের দাবি, বাম-কর্মীরা সংক্রমিতদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। তাঁদের ওষুধ, খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন। সরকার সেই ভূমিকা পালনে ব্যর্থ ব্যর্থ। সিপিএম নেতা তীর্থঙ্কর রায়ের অভিযোগ, ‘‘সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পর্যাপ্ত পরীক্ষা হচ্ছে না। সেখানে গেলে বলা হচ্ছে, পরীক্ষার দরকার নেই। সব হাসপাতালে সঠিক চিকিৎসা হচ্ছে না। এটা মানুষের সঙ্গে প্রতারণা। আইসিইউ শয্যার সঙ্কট। অথচ, পরিকাঠামো বাড়ানো হচ্ছে না।

সঠিক তথ্য মানুষকে জানানো হচ্ছে না। যে হাসপাতালে কোভিড চিকিৎসা হচ্ছে না, সেখানে শয্যা রয়েছে বলে দেখানো হচ্ছে।’’

প্রত্যুত্তরে বাম আমলের ইতিহাস টানছেন জেলা তৃণমূল সভাপতি দিলীপ যাদব। তাঁর কথায়, ‘’৩৪ বছরে ওরা যে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো করেছিল, গত দশ বছরে তার দশ গুণ হয়েছে। বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী কতটা দক্ষতার সঙ্গে অতিমারি সামাল দিচ্ছেন, দেখে ওদের শেখা উচিত। সেটা না করে শুধু বিবৃতি দিচ্ছেন। ওঁরাই মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন। কোভিড চিকিৎসা নিয়ে সাধারণ মানুষ সন্তুষ্ট।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন