দখল: গঙ্গার পাড়ে খোলা আকাশের নীচে খাওয়া দাওয়ার বন্দোবস্ত। —নিজস্ব চিত্র
গঙ্গার পাড় ঘেঁষে উত্তরপাড়ার দোলতলায় পাঁচিলে ঘেরা একটি নবনির্মিত রেস্তরাঁ নিয়ে বিতর্ক দানা বেঁধেছে।
ওই নির্মাণ বেআইনি বলে অভিযোগ তুলেছেন এলাকার পরিবেশপ্রেমী এবং সমাজকর্মীরা। পুরসভাও দাবি করেছে, তাদের থেকে ওই নির্মাণে অনুমতি নেওয়া হয়নি। তা সত্ত্বেও কী ভাবে ওই নির্মাণ হল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এই বিতর্কের মধ্যেই বৃহস্পতিবার রীতিমতো ঢাকঢোল পিটিয়ে রেস্তরাঁটির উদ্বোধন হল। অভিযোগ মানতে চাননি রেস্তরাঁ কর্তৃপক্ষ।
পরিবেশবিদ বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘যে নদীতে জোয়ার-ভাটা খেলে, তার ৪৭ মিটারের মধ্যে কোনও নির্মাণ বেআইনি। আইনত ওই জমি বন্দর কর্তৃপক্ষের। ওই রেস্তরাঁ কর্তৃপক্ষ পরিবেশ বিধি লঙ্ঘন করেছেন। প্রশাসনের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত।’’ উত্তরপাড়ার পুরপ্রধান দিলীপ যাদব বলেন, ‘‘বিধি হচ্ছে, কোথাও কোনও রেস্তরাঁ তৈরি করতে হলে জমির মিউটেশন জরুরি। পুরসভা থেকে নকশাও অনুমোদন করাতে হয়। কিছুই করা হয়নি। এমনকি, ব্যবসার জন্য ট্রেড লাইসেন্সও নেননি রেস্তরাঁ কর্তৃপক্ষ।’’
রেস্তরাঁর জমিটি তাঁর বলে দাবি করেছেন উত্তরপাড়ারই বাসিন্দা মলয় বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, ‘‘৪০ বছর ধরে আমি জমির খাজনা দিই। পুরসভাকে করও দিই। কোনও অনিয়ম করিনি। ওখানে একটি সংস্থাকে রেস্তরাঁ করতে ১৫ বছরের লিজ দিয়েছি। এখন ওখানে যা করার ওরাই করছে।’’ জমি লিজ নিয়ে রেস্তরাঁটি তৈরি করেছেন মনোজ ঘোষ নামে এক ব্যবসায়ী। তিনিও উত্তরপাড়ার বাসিন্দা। তিনিও দাবি করেছেন, ‘‘আমরা ওখানে নতুন করে কিছু করিনি। ওই জমিতে একটি পুরনো নির্মাণ ছিল। একটা রেস্তরাঁ করতে গেলে সুন্দর করে সাজাতে হয়। সেটাই করেছি। আগে ওখানে ব্যবসা হতই। আমরা ফের ট্রেড লাইসেন্সের জন্য দরখাস্ত করব।’’
দিন কয়েক আগে রেস্তরাঁ চত্বরের গাছ কাটা হয়। স্থানীয় মানুষজনের আপত্তিকে রেস্তরাঁ কর্তৃপক্ষ গ্রাহ্য করেননি বলে অভিযোগ। শেষমেশ পুলিশ গিয়ে সেখানে গাছ কাটা বন্ধ করে। উত্তরপাড়ার বিশিষ্ট নাট্য পরিচালক তথা সমাজকর্মী তপন দাসের ক্ষোভ, ‘‘গঙ্গা লাগোয়া ওই জমি বন্দর কর্তৃপক্ষের। কোন আইনে ওই নির্মাণ হল?’’
রেস্তরাঁটির উদ্বোধনের সময়ে বিক্ষোভ দেখান কিছু সমাজকর্মী। তাঁদের মধ্যে শশাঙ্ক কর বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন ধরেই এলাকার মানুষ এর প্রতিবাদ করছেন। ছলে-বলে-কৌশলে গঙ্গার পাড় দখল করা হল। আমরা পুরসভা, পুলিশ, জেলাশাসককে বিষয়টি
জানিয়েছি।’’