প্রকৃত আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ে ছড়াচ্ছে বিভ্রান্তি
Coronavirus in Howrah-Hoogly

করোনা পরীক্ষার হার কমছে, প্রশ্ন

হাওড়া জেলা স্বাস্থ্য দফতরের একটি সূত্রের দাবি, দিনদশেক আগে স্বাস্থ্য ভবন থেকে নির্দেশিকা জারি করে বলা হয়, করোনা রোগীর সংস্পর্শে যাঁরা আসছেন, তাঁদের মধ্যে যাঁদের উপসর্গ আছে, শুধুমাত্র তাঁদেরই পরীক্ষা করাতে হবে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

চুঁচুড়া-উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০২০ ০৫:৫৬
Share:

ছবি: এএফপি।

দুই জেলাতেই করোনা সংক্রমণের রেখচিত্র ঊর্ধ্বমুখী। চিকিৎসকেরা পরীক্ষা আরও বাড়ানোর কথা বলছেন। কিন্তু ছবিটা ঠিক উল্টো। দুই জেলাতেই কমছে পরীক্ষার হার। ফলে, প্রকৃত আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছে। বিরোধীরা এ জন্য সরকারকেই বিঁধছেন।

Advertisement

হাওড়া জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গত মাসেও এখানে প্রতিদিন এক হাজার জনের করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে। কিন্তু গত দশ দিন ধরে সেই সংখ্যা কমিয়ে আনা হয়েছে সাড়ে চারশোয়।

হুগলি জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, মাসখানেক ধরে এখান থেকে চারশো বা তার কিছু বেশি মানুষের লালারসের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষায় পাঠানো হচ্ছে। তার আগে এর চেয়ে বেশি নমুনা পরীক্ষায় পাঠানো হচ্ছিল।

Advertisement

কেন কমছে পরীক্ষার হার? হাওড়ার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ভবানী দাস বলেন, ‘‘কত জনের পরীক্ষা করা হবে তা বিভিন্ন সময়ে রাজ্য সরকার ঠিক করে দেয়। আমরা সে ভাবেই কাজ করি। এর বেশি কিছু বলতে পারব না।’’ একই বক্তব্য হুগলির জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাওয়েরও। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘আমরাই যদি প্রচুর নমুনা পাঠাই, বাকি জেলাগুলো কী করবে? সামঞ্জস্য রেখেই এটা করা হচ্ছে।’’

তবে, হাওড়া জেলা স্বাস্থ্য দফতরের একটি সূত্রের দাবি, দিনদশেক আগে স্বাস্থ্য ভবন থেকে নির্দেশিকা জারি করে বলা হয়, করোনা রোগীর সংস্পর্শে যাঁরা আসছেন, তাঁদের মধ্যে যাঁদের উপসর্গ আছে, শুধুমাত্র তাঁদেরই পরীক্ষা করাতে হবে। উপসর্গ নিয়ে যাঁরা হাসপাতালে আসবেন, তাঁদেরও পরীক্ষা করাতে হবে। উপসর্গহীনদের পরীক্ষা করতে হবে না। সব মিলিয়ে এই সংখ্যা দৈনিক সাড়ে চারশোর বেশি যেন না হয়।

কিন্তু এ ভাবে পরীক্ষার হার কমালে কি সংক্রমণের প্রকৃত অবস্থাটা বোঝা যাবে? এ প্রশ্ন উঠছেই। চিকিৎসকেরা তো বটেই, দুই জেলার স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশও মানছেন, পরিস্থিতি বেশ উদ্বেগজনক। তাঁদের বক্তব্য, আগের মতোই করোনা সংক্রমিতের সংস্পর্শে যাঁরা এসেছেন, তাঁদের সকলের পরীক্ষা করা দরকার। উপসর্গ থাক বা না থাক। এটা করা হলে প্রকৃত আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ে মানুষের মধ্যে অযথা ভীতি এবং বিভ্রান্তি কাটবে। বহু মানুষ সাবধানও হতে পারবেন। এর মধ্যে হাওড়ার আবার গণ্ডিবদ্ধ এলাকার সংখ্যা ৫৬ থেকে বাড়িয়ে ৮৫ করা হয়েছে। ওই সব জায়গায় সম্পূর্ণ লকডাউনও বলবৎ করেছে প্রশাসন।

হুগলির এক বর্ষীয়ান চিকিৎসক বলেন, ‘‘এই যে ছোট ছোট এলাকা গণ্ডিবদ্ধ করা হল, নিশ্চয়ই তা সংক্রমণ রোধের জন্যই। গণ্ডিবদ্ধ জায়গার বাসিন্দাদের সকলের করোনা পরীক্ষা হলে কিছুটা হলেও সার্বিক সংক্রমণের মাত্রা বোঝা সম্ভব হত।’’

বিরোধীরা মনে করছেন, আসলে পরীক্ষা কমিয়ে দিয়ে জনগণের দায়িত্ব ঘাড় থেকে নামাতে চাইছে রাজ্য সরকার। করোনা চিকিৎসায় ‘গাফিলতি’র প্রতিবাদে আগামী ২৯ জুলাই জেলাশাসকের দফতরে ‘হাওড়া বাঁচাও অভিযান’-এর ডাক দিয়েছে সিপিএম। বিরোধী দলনেতা তথা চাঁপদানির কংগ্রেস বিধায়ক আব্দুল মান্নান ‘‘পর্যাপ্ত পরীক্ষা হচ্ছে কোথায়! যে অল্প সংখ্যক নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে, তাতেও অনেক দেরিতে রিপোর্ট মিলছে। সকলে রিপোর্ট পাচ্ছেনও না। সব নমুনা পরীক্ষাগারে পৌঁছচ্ছে কিনা, সেটাই সন্দেহ। মানুষকে অকারণ বিভ্রান্তির মধ্যে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন