Coronavirus

মাস্ক-পিপিই অমিল, তবুও লড়াই জারি

স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা সরঞ্জামের জোগান কম আছে। আনার চেষ্টা চলছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে দূরত্ব রেখে কাজ করতে হবে সবাইকে। শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, হুগলির মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকদুই জেলাতেই করোনা আক্রান্তের হদিশ মিলেছে। হাওড়ায় আক্রান্তের মৃত্যুও হয়েছে। অনেক চিকিৎসক মনে করছেন, পিপিই পেতে দেরি হলে তা পরবর্তী সময়ে বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে।

Advertisement

গৌতম বন্দ্যেপাধ্যায় ও নুরুল আবসার

চুঁচুড়া-উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০২০ ০৭:২২
Share:

প্রতীকী ছবি

বিষয়টির সমাধানে তিনি যে চেষ্টা চালাচ্ছেন, তা জানিয়েছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবারই মুখ্যমন্ত্রী জানান, রাজ্যের চিকিৎসক ও নার্সদের জন্য ১০ লক্ষ ‘পার্সোনাল প্রোটেক্টিভ ইকুইপমেন্ট’ (পিপিই) বরাত দিয়েছেন তিনি। কেন্দ্রের কাছে বারবার চেয়েও পর্যাপ্ত পিপিই পাচ্ছেন না বলে তাঁর অভিযোগ।

Advertisement

ফলে, করোনা-মোকাবিলায় চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সরঞ্জাম পর্যাপ্ত পরিমাণে কবে মিলবে তা নিয়ে সংশয় বাড়ছেই।

দুই জেলাতেই করোনা আক্রান্তের হদিশ মিলেছে। হাওড়ায় আক্রান্তের মৃত্যুও হয়েছে। অনেক চিকিৎসক মনে করছেন, পিপিই পেতে দেরি হলে তা পরবর্তী সময়ে বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে। অনেকে এ প্রসঙ্গে করোনায় উজাড় হয়ে যাওয়া ইটালির উদাহরণ তুলে আনছেন। তাঁদের মতে, সেখানে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত ৬০ জন চিকিৎসক এবং অসংখ্য স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন শুধুমাত্র প্রথম দফায় ঠিকঠাক নিরাপত্তা সরঞ্জাম না-থাকায়। ইটালির করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার এটাও অন্যতম কারণ বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন। অথচ, ইটালির স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ইউরোপের অন্যতম সেরা বলে ধরা হয়। তাই স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষিত রাখার বিষয়টিই করোনা-লড়াইতে অগ্রাধিকার পাওয়ার উচিত বলে মনে করছেন চিকিৎসকদের অনেকেই।

Advertisement

বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারি চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীরাই একমাত্র ভরসা। কিন্তু তাঁরাও যদি অসুরক্ষিত থাকেন, তা হলে মহামারি মোকাবিলা কী ভাবে হবে, সে প্রশ্ন উঠছে। অভাব বেশি প্রকট ব্লক স্তরের হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে। অথচ, প্রতিদিন সেখানেই জ্বর বা সর্দি-কাশির উপসর্গ নিয়ে বেশি রোগী আসছেন। যাঁদের মধ্যে একটা বড় অংশ কর্মসূত্রে ভিন্ রাজ্যে ছিলেন। করোনা-আবহে গ্রামে ফিরেছেন। এই আবহে সরকারি হাসপাতাল-স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির চিকিৎসক-নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের একটা বড় অংশের মধ্যে নিরাপত্তা সরঞ্জামের (এন-৯৫ মাস্ক, স্যানিটাইজ়ার, বিশেষ গাউন, গ্লাভস ইত্যাদি) অভাব দেখা দিয়েছে।

পরিস্থিতি ঠিক কী?

হুগলির চণ্ডীতলা গ্রামীণ হাসপাতালের কথাই ধরা যাক। সেখানকার দু’টি ব্লকের কয়েক হাজার মানুষ ওই হাসপাতালের উপরে নির্ভরশীল। চিকিৎসক-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মী মিলিয়ে রয়েছেন ৬০ জনেরও বেশি। তাঁদেরই একজনের খেদ, ‘‘হাসপাতালে মাস্ক বা স্যানিটাইজ়ার নেই। বহু রোগী আসছেন। আমাদের অনেককেই তাঁদের সংস্পর্শে

যেতে হচ্ছে। ২৪ ঘণ্টা কাজ করতে বলা হচ্ছে। অথচ, ন্যূনতম নিরাপত্তা থাকবে না? আমাদেরও তো পরিবার আছে।’’

গ্রামীণ হাওড়ারও কোনও স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা গ্রামীণ হাসপাতালের চিকিৎসকেরা এন-৯৫ মাস্ক পাননি। তাঁরা সার্জিক্যাল মাস্ক পরে রোগী দেখছেন। কিন্তু ওই মাস্ক দিয়ে আইসোলেশন ওয়ার্ডের রোগীদের চিকিৎসা সম্ভব নয় বলে তাঁদের দাবি।

দুই জেলার স্বাস্থ্যকর্মীরা এ পর্যন্ত যা পেয়েছেন, তার গুণমান নিয়েও বিস্তর অভিযোগ। উলুবেড়িয়া হাসপাতালের নার্সদের আক্ষেপ, তাঁদের এক স্তরের সার্জিক্যাল মাস্ক ব্যবহার করতে হচ্ছে। নিদেনপক্ষে, তিন স্তরের মাস্কও মিলছে না। এ জন্য তাঁরা বিক্ষোভও দেখিয়েছেন একাধিকবার।

হুগলির হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলি ২৫টি করে বিশেষ গাউন পেয়েছে। অথচ, সেখানে চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মী মিলিয়ে সংখ্যাটা অনেক বেশি। জাঙ্গিপাড়া বা তারকেশ্বর গ্রামীণ হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীরা সাধারণ সার্জিক্যাল মাস্ক ব্যবহার করছেন। পান্ডুয়া এবং ও জিরাট গ্রামীণ হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীরা পেয়েছেন ধুলো আটকানোর সাধারণ কাপড়ের মাস্ক।

শ্রীরামপুরের পিয়ারাপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মেডিক্যাল অফিসার মধুরিমা মিশ্র বলেন, ‘‘এখানে প্রতিদিন ১০-১৫ জন জ্বরের উপসর্গ নিয়ে আসছেন। আমরা মাস্ক ও গ্লাভস ব্যবহার করি। কিন্তু স্যানিটাইজ়ার নেই। শেওড়াফুলির আক্রান্তের কথা জানার পর আতঙ্কে রয়েছি।’’ চাঁপসড়া স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মেডিক্যাল অফিসার শর্মিষ্ঠা গোস্বামীও বলেন, ‘‘অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চিকিৎসা করতে হয়। গড়ে প্রতিদিন ৩০-৪০ জন রোগী আসছেন। আমাদের মাস্ক, গ্লাভস বা স্যানিটাইজ়ার দেওয়াই হয়নি। আমরা নিজেদের খরচে কিনে ব্যবহার করছি।’’

এ ভাবে আর কতদিন, এ প্রশ্নই ঘুরছে সকলের মুখে।

তথ্য সহায়তা: কেদারনাথ ঘোষ, দীপঙ্কর দে ও পীযূষ নন্দী

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন