তৃণমূলের গোষ্ঠী সংঘর্ষের জেরে পুলিশ টহল। খানাকুলের বালিপুর বাজারে। উদ্ধার হওয়া গুলি (ইনসেটে)। — নিজস্ব িচত্র
লকডাউন জারি। তা সত্ত্বেও আরামবাগ মহকুমার বিভিন্ন প্রান্তে করোনা-সচেতনতার প্রচারের নামে দলবল নিয়ে তৃণমূল নেতাদের খবরদারির অভিযোগ উঠছিলই। এ বার খানাকুলের বালিপুর বাজারে তাঁদের দুই গোষ্ঠীর লোকজন সরাসরি সংঘর্ষে জড়াল। যে ঘটনায় পদ খোয়াতে হল দলের এক নেতাকে।
বাজারের ভিড় নিয়ন্ত্রণের জন্য কিছু ব্যবসায়ীকে অন্যত্র সরানোকে কেন্দ্র করে ওই গোলমালে প্রথমে দু’পক্ষ পরস্পরের উপরে লাঠি নিয়ে চড়াও হয়। তারপর শুরু হয় ইট ছোড়াছুড়ি। ব্যবসায়ীদের টাকা-পয়সাও লুট হয় বলে অভিযোগ। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, সংঘর্ষের সময় বোমাবাজি হয় এবং চার রাউন্ড গুলিও চলে।
ইট ও লাঠির আঘাতে দু’পক্ষের তিন জন জখম হয়। বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে এসডিপিও (আরামবাগ) নির্মলকুমার দাস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনাস্থল থেকে কয়েকটি না-ফাটা বোমা এবং গুলির খোল উদ্ধার করা হয়েছে। এসডিপিও বলেন, ‘‘দু’পক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।’’
লকডাউনের মধ্যে শাসকদলেরই কিছু লোকের এই ঘটনায় জড়িয়ে যাওয়ায় অস্বস্তিতে পড়েছেন জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। দলের জেলা সভাপতি দিলীপ যাদব বলেন, ‘‘গোলামালে জড়িতদের বিরুদ্ধে পুলিশ আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে। খানাকুল-১ ব্লক তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি শেখ সাকিমকে তাঁর পদ থেকে সরানো হয়েছে।’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিনের গোলমাল শেখ সাকিমের অনুগামীদের সঙ্গে বালিপুর পঞ্চায়েতের সদস্য শেখ গোলাম নবির গোষ্ঠীর। গত সোমবার বাজারটির ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে গোলাম নবির উদ্যোগে কিছু ব্যবসায়ীকে স্থানীয় স্কুল সংলগ্ন এলাকায় সরানো হয়। তাতে তাঁদের কাছে কোনও খরিদ্দার আসছেন না বলে অভিযোগ তুলেছিলেন সরে যাওয়া ব্যবসায়ীরা। বিষয়টি তাঁরা শেখ সাকিমকে জানান। এ দিন ওই ব্যবসায়ীরা ফের তাঁদের পুরনোয় বসতে গেলে সেখানে থাকা অন্য ব্যবসায়ীরা জায়গা ছাড়তে আপত্তি করেন। দুপক্ষের মধ্যে বচসা, মারপিট হয়। দু’পক্ষই দুই নেতাকে খবর দেয়। তারপরেই দু’পক্ষ জড়ো হয় এবং সংঘর্ষ শুরু হয়।
শেখ সাকিমের অভিযোগ, ‘‘ব্যবসায়ীদের সরানোর ক্ষেত্রে দুর্নীতি করেছেন গোলাম নবি। যে সব ব্যবসায়ী ওঁকে মোটা টাকা দিতে পেরেছেন, তাঁদের বাজারে রেখেছেন। যাঁরা পারেননি, তাঁদের সরিয়ে দিয়েছেন। ভিড় নিয়ন্ত্রণে সবাইকে সরাতে বলা হয়েছিল। উল্টে ওরা মারধর করল, গুলি চালাল। আমাদের ছেলেরা পাল্টা প্রতিবাদ করেছে। বিষয়টা দলেরও নজরে এনেছি।”
পক্ষান্তরে, গোলাম নবির দাবি, ‘‘পঞ্চায়েত থেকে সিদ্ধান্ত নিয়ে পুলিশ প্রশাসনকে জানিয়েই বেশ কিছু ব্যবসায়ীকে সরিয়ে ছিলাম। তাঁদের বিক্রিবাটাও হচ্ছিল। শেখ সাকিম মিথ্যা অভিযোগ তুলে ব্যবসায়ীদের ভুল বুঝিয়ে বোমা-বন্দুক নিয়ে হামলা করল।’’
লকডাউনের জেরে বাজারটি এমনিতেই বিপর্যস্ত। তার উপর এ দিনের অশান্তির পর সব দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। এরপর বাজার কেমন করে চালু থাকবে তা নিয়েই সংশয় প্রকাশ করেছে বাজার কমিটি।
অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।