দুষ্কৃতী-দৌরাত্ম্যে জেরবার হুগলির শহরাঞ্চল। কিন্তু লাগাম পরানো হচ্ছে কই!
কখনও সাতসকালে ট্রাক-মালিকের বাড়িতে ঢুকে চালককে খুন করছে দুষ্কৃতীরা। কখনও পথচলতি তরুণীকে হাত ধরে ট্রাকে টেনে তোলার চেষ্টা হচ্ছে। কখনও আবার কারখানায় ডাকাতি করতে গিয়ে গুলি করে নিরাপত্তারক্ষীকে খুন করা হচ্ছে। গত কয়েক মাসের এই সব ঘটনার আতঙ্ক কাটার আগেই শনিবার রাতে কোন্নগরে ডাকাতি করতে গিয়ে এক প্রৌঢ়াকে মারধর এবং ধর্ষণের ঘটনায় শিউরে উঠেছেন জেলাবাসী। দুষ্কর্ম কেন আটকানো যাচ্ছে না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা। একের পর এক ঘটনায় পুলিশ-প্রশাসনের সমালোচনায় মুখর বিরোধী দলগুলি।
বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান বলেন, ‘‘প্রশাসন বলে কিছু নেই। মুখ্যমন্ত্রীর স্তাবকতা করেই পুলিশের কাজ শেষ। তৃণমূলের ছত্রছায়ায় থাকাতেই দুষ্কৃতীদের পোয়া বারো। সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুদর্শন রায়চৌধুরীও বলেন, ‘‘মানুষের নিরাপত্তা সাংঘাতিক বিপর্যস্ত। পুলিশ কী ব্যবস্থা নিল, সেটা বড় কথা নয়। এই ধরনের ঘটনা ঘটবে কেন? যা চলছে, খুবই উদ্বেগের।’’ বিজেপি নেতা স্বপন পাল বিভিন্ন ঘটনার প্রসঙ্গ তুলে বলেন, ‘‘এ সব ঘটনাই প্রমাণ করছে হুগলিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কতটা অবনতি হয়েছে। কী করছে পুলিশ প্রশাসন?’’
জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি দিলীপ যাদব অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘বিরোধীরা বাজে কথা বলে রাজনৈতিক ফায়দা নিতে চাইছে। প্রতিটি ঘটনারই যথাযথ কিনারা করছে পুলিশ। মান্নান সাহেব বা সুদর্শনবাবুর থেকে আমাদের প্রশাসন চালানো শিখতে হবে না।’’
শনিবার রাতে কোন্নগরে ডাকাতি করতে ঢুকে বৃদ্ধাকে মারধর এবং ধর্ষণের ঘটনা সামনে আসার আগে গত মে মাসেও এখানে দুষ্কৃতী-হামলা হয়েছিল। গত ২৭ মে ভোরবেলায় জয়প্রকাশ গুপ্ত নামে এক রেলকর্মী হাওড়ায় কাজে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বেরিয়ে হেঁটে কোন্নগর স্টেশনের দিকে যাচ্ছিলেন ট্রেন ধরবেন বলে। মাঝপথে এক দুষ্কৃতী তাঁর পথ আগলে ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে। বাধা দেওয়ায় ধারালো অস্ত্রের কোপে প্রৌঢ়কে কুপিয়ে খুন করে ওই দুষ্কৃতী। এর পরে কোন্নগরে বাটার মোড় এবং ক্রাইপার রোডেও দুই ব্যক্তি ছিনতাইবাজের হামলায় জখম হন। চলতি মাসেই সাতসকালে চুঁচুড়ার ধরমপুরে ট্রাক-মালিকের বাড়িতে চালককে গুলি করে খুন করে কয়েক জন দুষ্কৃতী। মাসখানেক আগে শ্রীরামপুরের সাতঘড়ায় কারখানায় ডাকাতি করতে এসে বাধা পেয়ে বোমা-গুলি ছোড়ে দুষ্কৃতীরা। গুলিবিদ্ধ হয়ে কারখানার নিরাপত্তারক্ষীর মৃত্যু হয়। চলতি বছরের গোড়ায় এবং মাঝামাঝি পান্ডুয়ায় দু’জন সাধারণ মানুষ খুন হন। কিছু দিন আগে পোলবায় কারখানা থেকে কাজ সেরে বাড়ি ফিরছিলেন দুই তরুণী। তাঁদের একজনকে একটি ট্রাকে টেনে তোলার চেষ্টা হয়। অপর জন তাঁকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন। আচমকাই ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে মারা যান ওই তরুণী।
একের পর এক ঘটনাই বলে দিচ্ছে, এই জেলায় সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কোন জায়গায়! পু লিশের অবশ্য দাবি, প্রায় প্রতিটি ঘটনাতেই নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করে তদন্ত করা হচ্ছে। অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয়েছে।
যদিও সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, দুষ্কর্ম আটকানো যাচ্ছে না কেন?
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক কোন্নগরের এক কলেজ-শিক্ষিকার কথায়, ‘‘সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা সত্যিই প্রশ্নের মুখে পড়ছে। ঘরে-বাইরে কোথাও যদি নিরাপদে না থাকা যায়, সেটা তো মস্ত সমস্যা। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশাসন আরও বেশি গুরুত্ব আরোপ করুক।’’ আর এক মহিলার বক্তব্য, ‘‘কিছু দিন পর থেকে উচ্চশিক্ষার কাজে আমাকে ভোরে বাড়ি থেকে বেরোতে হবে। সেই নিয়ে বাড়ির লোক চিন্তায় পড়ে গিয়েছেন।’’ শ্রীরামপুরের বাসিন্দা প্রিয়রঞ্জন ঘটকের বক্তব্য, ‘‘সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার বিষয়টি প্রশাসন নিশ্চিত করুক। মানুষকে আতঙ্কে ভুগতে হবে কেন?’’
একই প্রশ্ন আরও অনেকের।