পাট বা তিল নয়। বিকল্প হিসাবে বাদাম চাষেই আগ্রহী উদয়নারায়ণপুরের চাষিরা।
এতদিন আলু উঠে যাওয়ার পরে ফাঁকা জমিতে তিল বা পাট চাষের চল ছিল এই এলাকায়। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে পাট এবং তিলের চাষ আর করছেন না চাষিরা। বদলে বাদাম চাষ করছেন তাঁরা।
চাষিরা জানিয়েছেন মূলত তাঁরা চিনাবাদামের চাষ করছেন। তাঁদের কাছ থেকে মহাজনেরা এসে তা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। তাঁদের হাত ধরে বাদামের তেল ছড়িয়ে পড়ছে বাজারে। শুধু তাই নয়, নিজেদের ব্যবহারের জন্যও চাষিরা বাদাম চাষ করছেন। মিলে বাদাম ভাঙিয়ে তেল তৈরি করে ব্যবহার করছেন।
হাওড়া জেলায় পাটের অঞ্চল বলতে এক সময়ে উদয়নারায়ণপুরকেই বোঝাত। এখনও সেখানে পাটের চাষ বাদামের থেকে বেশিই হয়। তবে পাটের এলাকা ক্রমশ যে কমছে তা স্বীকার করেছে ব্লক কৃষি দফতর। ওই দফতর সূত্রে খবর, পাঁচ বছর আগে প্রায় ১৫০০ হেক্টর জমিতে পাটেক চাষ হতো। এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ১০০০ হেক্টরে। বাকি জমি বাদাম চাষের দখলে।
কেন এমন ঘটল?
ব্লক কৃষি দফতর সূত্রে খবর, বছর তিনেক আগে পাটের দাম একবার খুব পড়ে যায়। প্রতি কুইন্টাল নেমে আসে ২২০০ টাকায়। কৃষি দফতরের এক আধিকারিক জানান, কুইন্টালপ্রতি চার হাজার টাকা দাম হলে তবেই পাট চাষের খরচ বাঁচিয়ে চাষির হাতে বাড়তি পয়সা থাকে। ফলে ওই বছরে চাষিরা বেশ লোকসানের মুখে পড়েন। তারপর থেকেই চাষিদের একটা বড় অংশ বাদাম চাষে ঝোঁকেন। তারপর থেকে ধীরে ধীরে বাড়ছে বাদামের চাষ। গত বছর পাটের দাম ছিল প্রায় ৪০০০ টাকা প্রতি কুইন্টাল। কিন্তু তা সত্ত্বেও বাদাম চাষে চাষিদের আগ্রহ বেড়েছে। এ বছর গত বছরের তুলনায় আরও বেশি জমিতে বাদাম চাষ হচ্ছে উদয়নারায়ণপুরে।
কী বলছেন চাষিরা?
তাঁদের বক্তব্য, সারের দাম এত বেড়েছে যে পাট চাষ করা বেশ খরচসাপেক্ষ হয়ে গিয়েছে। এঅখন ৪ হাজার টাকা প্রতি কুইন্টাল দাম পেলেও তা আর লাভজনক নয়। পাট চাষে যেখানে বিঘাপ্রতি খরচ হয় প্রায় তিন হাজার টাকা। সেখানে বাদাম চাষে খরচ মাত্র এক হাজার। পরিচর্যার তেমন দরকার হয় না। অথচ কুইন্টালপ্রতি চার হাজার টাকা দাম মেলে। মহাজনরাই এসে নিয়ে যায়।
তবে কৃষি দফতরের আধিকারিকদের বক্তব্য, পাট হল স্বীকৃত আর্থিক কৃষিজ পণ্য। দাম সব সময় না মিললেও এর স্থায়ী বাজার আছে। অন্যদিকে বাদাম স্বীকৃত আর্থিক কৃষিজ পণ্য নয়। বাজারে এই পণ্যের স্থায়ীত্ব কতটা তা এখনও অজানা। তাই পাটচাষ পুরোপুরি বন্ধ করা যাবে না। তাঁরা জানান, চাষিরা প্রয়োজনে ফের যাতে পাট চাষে ফিরে আসতে পারেন তার জন্য উন্নত পদ্ধতিতে পাট চাষের বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে।