শ্রীরামপুর কলেজে জয়ী টিএমসিপিই, আরও প্রকট গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব

প্রত্যাশিত ভাবেই শ্রীরামপুর ক‌লেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে জিতল টিএমসিপি। কিন্তু চেষ্টা করেও চাপা দেওয়া গেল না সংগঠনের মধ্যে দ্বন্দ্ব। ফল প্রকাশের পরে টিএমসিপির এক গোষ্ঠী যখন নির্দল প্রার্থীদের নিয়ে সবুজ আবির মেখে উল্লাস করল তখন অপর গোষ্ঠীর নেত্রীকে দেখা গেল চাদরে মুখ ঢেকে বসে থাকতে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০০:৫০
Share:

বিজয়োল্লাস।ছবি: প্রকাশ পাল।

প্রত্যাশিত ভাবেই শ্রীরামপুর ক‌লেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে জিতল টিএমসিপি। কিন্তু চেষ্টা করেও চাপা দেওয়া গেল না সংগঠনের মধ্যে দ্বন্দ্ব। ফল প্রকাশের পরে টিএমসিপির এক গোষ্ঠী যখন নির্দল প্রার্থীদের নিয়ে সবুজ আবির মেখে উল্লাস করল তখন অপর গোষ্ঠীর নেত্রীকে দেখা গেল চাদরে মুখ ঢেকে বসে থাকতে।

Advertisement

মনোনয়ন জমা করার সময় থেকেই এই কলেজে দলের গোষ্ঠীকোন্দল মাথাচাড়া দেয়। এক পক্ষের ছাত্রছাত্রীরা কাউন্সিলর সন্তোষ সিংহের ঘনিষ্ঠ। কলেজে এই গোষ্ঠীর নেতা হিসেবে পরিচিত ছাত্র সংসদের বিদায়ী সভাপতি সঞ্জিৎ রাম। অন্য পক্ষ কাউন্সিলর ঝুম মুখোপাধ্যায় এবং দলের নেতা অন্বয় চট্টোপাধ্যায়দের গোষ্ঠীর বলে পরিচিত। এই শিবিরের নেতা হিসেবে পরিচিত বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক সংখ্যায়ন দে। আসন সংখ্যা ৫১ হলেও টিএমসিপি-র দু’পক্ষ মিলিয়ে মোট ৮১ জনের মনোনয়ন জমা পড়ে। দ্বন্দ্ব চাপা দিতে বিধায়ক সুদীপ্ত রায় ৮১ থেকে ৪৭ জ‌নকে বেছে নিয়েছিলেন। বাকিরা নির্দল প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত হবেন বলে তৃণমূল সূত্রে ঘোষণা করা হয়েছিল।

ভোটারদের তল্লাশি। ছবি: প্রকাশ পাল।

Advertisement

এ দিন সকাল থেকেই কলেজের বাইরে থেকে ঝুমদেবী ও অন্বয়বাবুদের নেতৃত্ব দিতে দেখা যায় তাঁদের গোষ্ঠীকে। অন্য গোষ্ঠীকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সন্তোষবাবুর লোকেরা। এসএফআই ১৭টি আসনে প্রার্থী দিলেও এ দিন কার্যত টিএমসিপির দুই শিবিরের মধ্যে মুখোমুখি লড়াই হয়। ৪৭ জনের মধ্যে ৩৩ জন জয়ী হন। এর মধ্যে ১৮ জন সন্তোষ সিংহ গোষ্ঠীর। ১৫ জন ঝুমদেবীদের গোষ্ঠীর। বাকি ১৪টি আসনে জিতেছেন নির্দল প্রার্থীরা। এই প্রার্থীদের সমর্থন করেছিল সন্তোষ সিংহ গোষ্ঠী। ফলে ওই গোষ্ঠী ৩৩টি আসনে জয়ী হল। ভোটের ফল বেরোনোর পরেই তাঁদের গোষ্ঠীর জয়ী প্রার্থী এবং নির্দল প্রার্থীদের নিয়ে সঞ্জিৎ রাম, তনুশ্রী সিংহরা বিজয়মিছিল করেন। ঝুমদেবীরা দৃশ্যতই মুষড়ে পড়েন।

ঝুমদেবী বলেন, ‘‘টিএমসিপি জিতেছে। তবে আমাদের কিছু প্রার্থী নির্দলের কাছে হেরেছে। যাঁরা উল্লাস করছেন, তাঁরা তৃণমূল বা টিএমসিপির কেউ নন।’’ যদিও জেলা টিএমসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক প্রিয়ঙ্কা অধিকারী বলেন, ‘‘টিএমসিপি মনোভাবাপন্ন কিছু নির্দল ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন। তাঁরা জিতেছেন। আমাদের সংগঠনে তাঁরা যোগ দিতে চায়। তবে কোনও কাউন্সিলরের কথায় তো দল চলবে না, দল চলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়।’’ বিধায়ক সুদীপ্তবাবু অবশ্য বলেন, ‘‘ওখানে কি হবে আর হবে না, তা টিএমসিপি নেতৃত্বই ঠিক করবেন।’’

এই ভোটকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই উত্তেজনা ছিল। ভোটকেন্দ্র থেকে ২০০ মিটার পর্যন্ত জারি ছিল ১৪৪ ধারা। গণনা শেষ হওয়া পর্যন্ত বাহিনী নিয়ে কলেজে উপস্থিত ছি‌লেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শিল্পাঞ্চল) অতুল ভি, শ্রীরামপুরের এসডিপিও কামনাশিস সেন, আইসি নন্দদুলাল ঘোষ, সিআই (উত্তরপাড়া) অসিতবরণ কুইল্যা। র‍্যাফও ছিল। এরই মধ্যে এসএফআইয়ের অভিযোগ, সকা‌লে শ্রীরামপুর স্টেশন চত্বরে তৃণমূল কাউন্সিলর সন্তোষ সিংহের নেতৃত্বে এসএইআইয়ের নেতাকর্মীদের মারধর করা হয়। সংগঠনের জেলা সভাপতি অর্ণব বসু বলেন, ‘‘রাস্তাতেই আমাদের অনেক ছাত্রছাত্রীকে আটকায় তৃণমূল। তাঁদের কলেজে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তাতেও আমাদের দুই প্রার্থী মাত্র ৫ ভোটের ব্যবধানে হেরেছেন।’’ মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সন্তোষবাবু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন