প্রতীকী ছবি।
রাশ টানা যাচ্ছে না কিছুতেই। করোনাকে বাগে আনতে এ বার হুগলি ফের কার্যত লকডাউনের পথে যাচ্ছে। তবে গোটা জেলা নয়, সংক্রমণের ভিত্তিতে নির্দিষ্ট কিছু এলাকা বেছে ওই পদক্ষেপ করা হচ্ছে।
করোনার বাড়বাড়ন্ত রুখতে আগামীকাল, বৃহস্পতিবার থেকে রাজ্য জুড়েই এই ব্যবস্থা কার্যকর করার নির্দেশ দিয়েছে নবান্ন। মঙ্গলবার রাতে হুগলি জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলার মোট ২৭টি জায়গাকে ‘কন্টেনমেন্ট জ়োন’ করা হবে। এর মধ্যে গ্রামীণ পুলিশের আওতাধীন এলাকায় ২১টি এবং চন্দননগর কমিশনারেটের আওতাধীন এলাকায় ৬টি জায়গাকে ‘কন্টেনমেন্ট জ়োন’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ওই সব এলাকা কার্যত লকডাউনের আওতায় ফেলা হবে।
কী ভাবে কড়া হাতে লকডাউন বিধি কার্যকর করা হবে, তা নিয়ে এ দিন রাত পর্যন্ত জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও-সহ প্রশাসনের অন্য আধিকারিকরা বৈঠক করেন। কমিশনারেট সূত্রের খবর, কাল বিকেল থেকে ওই সব এলাকায় নজরদারি চালানো হবে। তার আগে সংশ্লিষ্ট পুরসভা বা পঞ্চায়েত এবং পুলিশের তরফে ঘোষণা করা হবে।
হুগলির চার মহকুমা জুড়ে করোনা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। বেশ কয়েক জনের মৃত্যুও হয়েছে। সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে এক শ্রেণির মানুষের গয়ংগচ্ছ ভাবকেই দায়ী করছেন জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা। তাঁদের আশঙ্কা, মানুষ যে ভাবে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে অসর্তক অবস্থায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন, তাতেই বিপদ বাড়ছে। রাস্তাঘাটে ঘুরে দেখা যাচ্ছে, অনেকেই মাস্ক পরার প্রয়োজন বোধ করছেন না। খালি মুখেই বাজারহাটে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। পুলিশ-প্রশাসনের কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই। চিকিৎসকদের একাংশ মনে করছেন, এই পরিস্থিতিতে অন্তত দিন সাতেক লকডাউন ব্যবস্থা করা জরুরি। তাঁদের যুক্তি, এমনটা হলে সংক্রমণে লাগাম পরানো যাবে।
হুগলিতে করোনা সংক্রমণের প্রথম রিপোর্ট মেলে শেওড়াফুলিতে মার্চ মাসের শেষে। ৩০ জুন এই সংখ্যা হাজার ছাড়ায়। ওই দিন পর্যন্ত জেলায় মোট সংক্রমিত ছিলেন ১০১৫ জন। ছ’দিন পরে অর্থাৎ সোমবার পর্যন্ত এই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১২৩৬। এই ক’দিনে মৃতের তালিকায় আরও তিন জনের নাম যুক্ত হয়েছে। ফলে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২৬। শেষ তিন তিনে করোনা কোনও আক্রান্তের মৃত্যুর ঘটনা জেলায় ঘটেনি।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, উত্তরপাড়া থেকে বাঁশবেড়িয়া পর্যন্ত ১০টি পুরসভা এবং ৩টি গ্রামীণ পুরসভাতে করোনা সংক্রমণের মাত্রা বাড়ছে। উত্তরপাড়া শহরে অন্তত ২০০ জনের দেহে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। স্থানীয় এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘অনেকেই জ্বর এবং অন্য উপসর্গ নিয়ে আসছেন। বর্ষার শুরুতে সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু তাঁদের মধ্যেও যাঁদের লক্ষণ সন্দেহজনক ঠেকছে, তাঁদের করোনা পরীক্ষা করাতে বললে অনেকেই আমাদের পরামর্শ উপেক্ষা করছেন।’’ অন্য এক চিকিৎসকের আশঙ্কা, ‘‘আমরা নিয়মিত রোগী দেখছি। সকলের পরীক্ষা হলে আক্রান্তের সংখ্যা তিন গুণ হবে। ইতিমধ্যেই এই শহরে দু’জন বয়স্ক মানুষ করোনায় মারা গিয়েছেন। মানুষ যদি চিকিৎসকের পরামর্শও না শোনেন, আমরা নিরুপায়। ফের লকডাউন ছাড়া গতি নেই। আর পরীক্ষাও অত্যন্ত কম হচ্ছে।’’
নাম না প্রকাশের শর্তে জেলার এক স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন ‘‘হিন্দমোটর কারখানায় কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে কোয়রান্টিন সেন্টার করা হল। আবার বন্ধও করে দেওয়া হল। কেন এমন হল, বলতে পারব না। রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এখন কোয়রান্টিন সেন্টার বন্ধ করার কী যুক্তি থাকতে পারে! আর যতটা দরকার, সেই সংখ্যায় লালারস পরীক্ষা করা যাচ্ছে না পরিকাঠামোর অভাবে।’’
প্রথম দিকে শ্রীরামপুর, কোন্নগর, রিষড়া, বৈদ্যবাটি, চন্দননগর, চাঁপদানিতে করোনা ছড়ায়। পরে তারকেশ্বর, খানাকুল, ধনেখালি, সিঙ্গুর-সহ বিভিন্ন এলাকা থেকেও করোনা আক্রান্তের খোঁজ মেলে। প্রতিদিন এই সংখ্যা বাড়ছেই। বিশিষ্ট চিকিৎসক ঐশ্বর্য্যদীপ ঘোষ বলেন, ‘‘প্রচুর সংখ্যায় পরীক্ষা এবং চূড়ান্ত সাবধানে থাকা ছাড়া করোনাকে বাগে আনার আর কোনও বিকল্প নেই।’