টগবগিয়ে: ব্যস্ত রাস্তায় বাস, বাইকের পাশেই দৌড়চ্ছে সেই ঘোড়া। সোমবার, বেলুড়ের কাছে জি টি রোডে। নিজস্ব চিত্র
জি টি রোড ধরে দৌড়চ্ছে নানা পটেকর!
বাস, অটো, টোটোকে কাটিয়ে ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড়চ্ছে সামনের দিকে। কখনও আবার স্টপে দাঁড়ানো বাসের পিছনে এসে খানিকটা থমকেই আবার পাশ কাটিয়ে দে দৌড়।
আষাঢ়ের প্রথম সপ্তাহেও কড়া রোদ। সেই গরমে দৌড়োদৌড়ি করে বোধহয় কিছুটা হাঁপ ধরে গিয়েছিল। তাই একটু থমকে দাঁড়াতেই তাকে ঘিরে ধরল চারটি গাড়ি। অগত্যা আর পালানোর পথ না পেয়ে ধরা দিতে বাধ্য হল নানা পটেকর।
এই দৌড়ে অবশ্য নানা পটেকরের জন্য কোনও ‘লাইট-সাউন্ড-ক্যামেরা-অ্যাকশন’ ছিল না। বরং সহিসের হাতের লাগাম ছেড়ে যেতেই সে মুক্তি পেয়েছিল। আর তখনই প্রাণপণে ছুট লাগিয়েছিল কালো রঙের সেই ঘোড়া, যার নাম নানা পটেকর।
বয়স তার সাত। ঠিকানা, ডানলপের কাছে রেললাইনের ধারের মেট্রো কলোনি। বছর তিনেক আগে সোনপুরের মেলা থেকে দু’হাজার টাকা দিয়ে নানা পটেকরকে কিনেছিলেন তার সহিস সাদ্দাম। প্রতিদিন সকাল আটটা বাজলেই ছোলা-গুড় খেয়ে কলোনির আস্তানা থেকে বছর কুড়ির সাদ্দামের সঙ্গে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে ওই ঘোড়া। সাদ্দাম তার নাল (ঘোড়ার ক্ষুরের নীচে লাগানো লোহার পাত)বিক্রি করেন। সেই সঙ্গে তাকে ভাড়া দেন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। সোমবারও প্রিয় পোষ্যের পিঠে চেপে বসেছিলেন সাদ্দাম। হাতে ধরা ছিল লাগাম। কিন্তু গোল বাধল বালি ব্রিজ পার করতেই।
তরুণ সহিস বললেন, ‘‘কী যে হল, বুঝলাম না। কয়েক বার ‘চিঁ-হিঁ-হিঁ’ করে উঠে মারল এক ঝটকা। হাত থেকে ফসকে গেল লাগামটা।’’ ধরতে গিয়েও ফের ফসকে গেল ঘোড়ার লাগাম। এক ঝটকায় সাদ্দামকে রাস্তায় ফেলে বল্গাহারা কালো ঘোড়া ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড় লাগাল বালির দিকে। সপ্তাহের প্রথম কাজের দিনে সকাল সাড়ে ৯টায় এমন ঘোড়-দৌড় দেখে হতবাক জি টি রোডের লোকজন। ঘোড়া তো আর বোঝে না, ট্র্যাফিক আইন ভাঙলে কী ‘কেস’ হতে পারে। তাই লাল সিগন্যাল দেখেও টগবগিয়ে ছুটে বেড়িয়েছে নানা পটেকর।
আর তাকে ধরার জন্য মরিয়া সাদ্দাম কয়েক কদম ছুটে কিছু করতে না পেরে শেষমেশ উঠে বসেন মোটরচালিত ভ্যানে। পিচের রাস্তায় টগবগ শব্দ তুলে ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড়চ্ছে ঘোড়া। আর পিছনে ‘ধর ধর’ চিৎকারে ধাওয়া করছেন সাদ্দাম। অবশ্য ঘিঞ্জি রাস্তার যানজট, সিগন্যালে বারবারই আটকে পড়ছিলেন তিনি। আর সেই সুযোগে প্রায় দেড় কিলোমিটার রাস্তা বেলাগাম ছুটে গেল ওই কালো ঘোড়া। রাস্তায় তাকে ছুটতে দেখে স্বাভাবিক ভাবেই জায়গা ছেড়ে দিয়েছেন গাড়িচালক থেকে পথচারীরা। কর্তব্যরত ট্র্যাফিক পুলিশকর্মীরাও অবশ্য নিয়মের তোয়াক্কা না করা নানা পটেকরকে ধরার সাহস দেখাননি।
যদিও আইন বলছে, পিচ রাস্তায় দৌড়নো তো দূর, চলতেও পারে না কোনও গৃহপালিত প্রাণী। যদি এমন ঘটনা কখনও ঘটে, তখন পুলিশেরও কিন্তু কিছু করার থাকে না। কারণ, ঘোড়া ধরার কোনও ব্যবস্থা তাদের নেই। কিন্তু এমন দৌড়ের ফলে দুর্ঘটনা যে ঘটতে পারত, সে কথা মানছেন পুলিশকর্তারাও। সেই সঙ্গেই তাঁদের প্রশ্ন, ‘‘ঘোড়া ধরে রাখব কোথায়!’’
আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েই এ দিন বেলুড়ের লালাবাবু সায়র রোড পর্যন্ত ছুটেছে নানা পটেকর। শেষমেশ পোষ্যকে পেয়ে হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন সাদ্দাম। পিঠে বসে লাগাম ধরে ফের ঘুরে বেড়িয়েছেন হাওড়া থেকে শ্যামবাজার। তবে দৌড়ের চক্করে এ দিন নাল বেচতে পারেননি সাদ্দাম। তিনি বলছেন, ‘‘কেন যে খেপে গেল, জানি না। তবে ছোলা-গুড় খেয়ে শরীরটা চাঙ্গা হয়েছে।’’