মমতাকে প্রশ্ন, দলীয় প্রধানকে শো-কজ

তৃণমূল সূত্রের খবর, চিঠিতে বলা হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর প্রকাশ্য জনসভায় তিনি (সুমিত্রা) যে আচরণ করেছেন, তা দল সমর্থন করে না। সমস্যা যদি কিছু হয়ে থাকে তা বলা উচিত ছিল দলের অন্দরেই।

Advertisement

নুরুল আবসার

জগৎবল্লভপুর শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৯ ০০:১৫
Share:

প্রকাশ্য জনসভায় হাসপাতাল নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রশ্ন করায় দলের পক্ষ থেকে কারণ দর্শানোর চিঠি ধরানো হল জগৎবল্লভপুরের শঙ্করহাটি-১ পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান সুমিত্রা পণ্ডিতকে। বুধবার রাতে তাঁকে চিঠি ধরানো হয়েছে বলে দলের হাওড়া সদর কমিটি সূত্রের খবর। যদিও তিনি বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত ওই চিঠি পাননি এবং সে বিষয়ে কিছু জানেন না বলে দাবি করেছেন সুমিত্রা।

Advertisement

তৃণমূল সূত্রের খবর, চিঠিতে বলা হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর প্রকাশ্য জনসভায় তিনি (সুমিত্রা) যে আচরণ করেছেন, তা দল সমর্থন করে না। সমস্যা যদি কিছু হয়ে থাকে তা বলা উচিত ছিল দলের অন্দরেই। কেন তিনি এই আচরণ করলেন তা তাঁকে সাত দিনের মধ্যে লিখিত ভাবে জানাতে হবে। সুমিত্রাকে চিঠিটি পাঠান জগৎবল্লভপুর বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল সভাপতি বিকাশ ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর উন্নয়ন থেকে জগৎবল্লভপুরও বঞ্চিত হয়নি। জগৎবল্লভপুর হাসপাতালের পরিষেবা ভা‌লই। আরও উন্নতির পরিকল্পনা রয়েছে। তারপরেও সুমিত্রাদেবীর এই আচরণ দল মেনে নেবে না। তাঁকে শো-কজ করা হয়েছে। শো-কজের উত্তর এলে পরবর্তী পদক্ষেপ করবেন ঊর্ধ্বতন নেতৃত্ব।’’

মুখ্যমন্ত্রীকে প্রশ্ন করার মধ্যে অবশ্য দলবিরোধী আচরণ রয়েছে বলে মনে করছেন না সুমিত্রা। তাঁর দাবি, ‘‘দলের কোনও সমস্যার কথা আমি প্রকাশ্যে আনিনি। আমার প্রশ্ন ছিল জনস্বার্থ বিষয়ে। দিদি শুধু আমাদের প্রিয় নেত্রীই নন, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীও। তিনি বিবেচক এবং সহানুভূতিশীল। একজন সাধারণ মানুষ তাঁদের প্রিয় মুখ্যমন্ত্রীর কাছে যে ভাবে আব্দার করেন, আমিও সে ভাবেই হাসপাতালের সমস্যার কথা বলতে চেয়েছি। আমি মনে করি এর সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই।’’ একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘আমি দলের শৃঙ্খলাপরায়ণ সৈনিক। এটা যদি দলের কোনও সমস্যা হতো, তা আমি কখনও প্রকাশ্যে বলতাম না। মানুষের স্বার্থের কথা বলে যদি শাস্তির মুখে পড়তে হয় তা হলে আমার কিছু বলার নেই। যদি কারণ দর্শানোর চিঠি পাই, উত্তরে এ সব কথাই জানাব।’’

Advertisement

গত মঙ্গলবার জগৎবল্লভপুরের বড়গাছিয়ায় জনসভা করতে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি যখন উন্নয়নের ফিরিস্তি দিচ্ছিলেন, তখন দর্শকাসনের একেবারে সামনে থেকে সুমিত্রা চিৎকার করে ব‌লেন, ‘‘দিদি জগৎবল্লভপুর হাসপাতাল নিয়ে কিছু বলুন। এই হাসপাতালের খুব বেহাল দশা।’’ প্রথমবার মুখ্যমন্ত্রী সে কথা শুনতে পাননি। ফ‌লে, দ্বিতীয়বার আরও জোরে একই কথা বলে মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন সুমিত্রা। তখন মুখ্যমন্ত্রী তাঁর দিকে ঘুরে তাকান। বক্তৃতার মূল বিষয় থেকে সরে এসে অনেকটা সময় তিনি খরচ করেন সুমিত্রার প্রশ্ন নিয়ে। মুখ্যমন্ত্রী যা বলেন, তার মোদ্দা কথা— প্রকাশ্য জনসভা এ ধরনের সমস্যা আলোচনা করার উপযুক্ত জায়গা নয়। হাসপাতাল চাইলেই হয় না। টাকার অভাব আছে। সে বিষয়টি চিন্তাভাবনা করার প্রয়োজন। অভাব আছে চিকিৎসকেরও। সত্যিই যদি কোনও সমস্যা এলাকায় থাকে তা হলে তা তাঁকে বা সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়ে জানানো যেতে পারত।

এলাকাটি হুগলির শ্রীরামপুর লোকসভার অধীন। বিদায়ী সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কেই ফের দলের তরফ থেকে প্রার্থী করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বক্তৃতার সময়ে মঞ্চে ছিলেন কল্যাণবাবুও। সুমিত্রার হাসপাতাল নিয়ে প্রশ্নে সবাই হকচকিয়ে যান। প্রথমে বোঝা যায়নি কে এই প্রশ্ন করেছেন। রাতেই সুমিত্রাকে চিহ্নিত করা হয়। নির্বাচনের ঠিক আগে বিষয়টি ঘটে যাওয়ায় দলের স্থানীয় নেতৃত্ব অস্বস্তিতে পড়েন। তারপরেই সুমিত্রাকে শো-কজ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন