থমথমে: কলেজের সামনে পুলিশ পাহারা। —নিজস্ব চিত্র।
রিষড়ায় কলেজ ছাত্রী নিগ্রহ-কাণ্ডে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন শিক্ষামন্ত্রী। কিন্তু বৃহস্পতিবার এফআইআর হওয়ার ২৪ ঘণ্টা পরেও পুলিশ ও কলেজ কর্তৃপক্ষের ভূমিকায় নানা প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।
বিধানচন্দ্র রায় কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক, অভিযুক্ত টিএমসিপি নেতা সাহিদ হাসান খানকে গ্রেফতার করা হয়নি। শুক্রবার অভিযুক্ত শ্রীরামপুর আদালতে আত্মসমর্পণ করলেও তাঁকে নিজেদের হেফাজতে চেয়ে আবেদন করেনি পুলিশ। খুনের চেষ্টার ধারাতেও মামলা রুজু হয়নি। কলেজ কর্তৃপক্ষ অভিযুক্তকে সাসপেন্ড এবং শোকজ করলেও ঘটনাপ্রবাহে তাঁদের গা-ছাড়া মনোভাব সামনে আসছে বলে মত অনেকেরই।
তবে, শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য এ দিন সরকারের ‘ভাবমূর্তি’ রক্ষার চেষ্টা করে গিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘এক মাস হয়ে গেলেও কেন আমাকে জানানো হয়নি, কেন ছাত্রীটিকে ডাকা হয়নি, কেন অভিযুক্তর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, তা নিয়ে কলেজের কাছে রিপোর্ট চেয়েছি। এই ঘটনায় কোনও রকম শিথিলতা দেখানো হবে না। এ কথা ছাত্রীর পরিবারকেও বলেছি। আগামী দিনেও এ ধরনের ঘটনা যদি ঘটে, সরকার কঠোরতম ব্যবস্থা নেবে।’’ এ দিন ছাত্রীটি কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে যান। মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে মেয়েটিকে নিরাপত্তা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর।
কুপ্রস্তাবে সাড়া না-দেওয়ায় সাহিদ বিএ তৃতীয় বর্ষের ওই ছাত্রীটিকে কয়েকদিন ধরে মারধর, শ্লীলতাহানি এবং তাঁর উপরে যৌন নির্যাতন করছিলেন বলে অভিযোগ। সিসিটিভি-র ফুটেজেও দেখা গিয়েছে নিগ্রহের ছবি। শুক্রবার ওই ছাত্রনেতা শ্রীরামপুর আদালতে এসিজেএম মৃণালকান্তি মণ্ডলের এজলাসে আত্মসমর্পণ করেন। সরকারি আইনজীবী জামিনের বিরোধিতা করায় বিচারক অভিযুক্তকে ১৪ দিন জেল-হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আগামী ২৯ জানুয়ারি পুলিশকে কেস ডায়েরি জমা দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু পুলিশ কেন সাহিদকে নিজেদের হেফাজতে চাইল না?
চন্দননগর কমিশনারেটের এক কর্তার দাবি, ‘‘অভিযুক্তকে আমরা ধরে আদালতে পাঠাইনি। জেলে গিয়েও তাঁকে জেরা করা যায়। প্রয়োজনে ফের আদালতের কাছে হেফাজতে চেয়ে আবেদন করা যেতে পারে।’’ কেন মামলায় হত্যার চেষ্টার ধারা যোগ করা হল না, এই প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘অভিযোগের ভিত্তিতেই মামলা রুজু হয়। পরে তদন্তমতো অন্য ধারা যোগ করা যায়।’’ তবে, এ দিন বিকেলে পুলিশ ছাত্রীটির গোপন জবানবন্দি রেকর্ড করে। ভিডিওগ্রাফিও করা হয়। রিষড়ার ওসি কলেজে গিয়ে শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেন।
সাহিদ আগাগোড়া অভিযোগ মানেননি। এ দিন তাঁর আইনজীবী ধূর্জটিনারায়ণ পাকড়াশি মক্কেলের জামিনের আবেদনে জানান, ‘মিডিয়া-ট্রায়াল’-এর উপর ভিত্তি করে বিষয়টি সামনে এসেছে। ছাত্র সংসদের ঘরে অনেকের সামনে শ্লীলতাহানির ঘটনা বিশ্বাসযোগ্য নয়। ঘটনার ৪৫ দিন পরে ছাত্রীটি এফআইআর করেছেন। দেরির ব্যাখ্যা এফআইআরে নেই। ধূর্জটিবাবুর দাবি, ঘটনার পরের দিন (৫ ডিসেম্বর) ছাত্রীটি দোষ স্বীকার করে কলেজের টিচার-ইনচার্জের কাছে চিঠি দিয়েছিলেন। ওই চিঠি ধূর্জটিবাবু আদালতে জমাও দেন।
কিন্তু সেই চিঠি কী ভাবে আসামি পক্ষের হাতে এল, তাতে আইনজীবীদেরই একাংশ অবাক। কলেজের টিচার-ইনচার্জ রমেশ করের দাবি, ছাত্রীর এ রকম কোনও চিঠি তিনি পাননি। তবে, স্বীকার করেছেন, কর্মী অপ্রতুল থাকায় অন্য কারও উপর সিসিটিভি মনিটরিংয়ের দায়িত্ব দেওয়া যায়নি।
এতেও অবশ্য কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ক্ষোভ কমছে না। ঘটনার প্রতিবাদে এ দিন বিজেপির মহিলা এবং যুব মোর্চার তরফে কলেজের সামনে বিক্ষোভ দেখানো হয়। জিটি রোড অবরোধ করে এসএফআই। ডিএসও থানায় স্মারকলিপি দেয়। বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তীর প্রশ্ন, ‘‘কলেজের ওই ঘটনা কেন এতদিন ধরে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হল?’’