দিশা দেখাচ্ছেন মাছ চাষে সেরা শ্যামাপদ

কাঁধে হাঁড়ি নিয়ে গ্রামে গ্রামে মাছ বিক্রি করতেন। মা কাজ করতেন অন্যের পরের বাড়িতে। এ সব এখন অতীত। ১৫ বছর আগের এই চিত্র এখন আর নেই বছর পঁয়তাল্লিশের শ্যামাপদ পাত্রের বাড়িতে।

Advertisement

পীযূষ নন্দী

আরামবাগ শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৬ ০১:৫৯
Share:

নিজের পুকুরে মাছকে খাবার দিচ্ছেন শ্যামাপদ পাত্র। ছবিটি তুলেছেন মোহন দাস।

কাঁধে হাঁড়ি নিয়ে গ্রামে গ্রামে মাছ বিক্রি করতেন। মা কাজ করতেন অন্যের পরের বাড়িতে। এ সব এখন অতীত। ১৫ বছর আগের এই চিত্র এখন আর নেই বছর পঁয়তাল্লিশের শ্যামাপদ পাত্রের বাড়িতে। বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে মাছ চাষ করে রাজ্যের ‘সেরা মাছ চাষি’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন আরামবাগের হাটবসন্তপুর গ্রামের এই বাসিন্দা।

Advertisement

পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়া শ্যামাপদবাবু ৪০০ বিঘা এলাকা জুড়ে মাছ চাষ করছেন। ব্যাক্তিগত ভাবে মাছ উৎপাদনের ক্ষেত্রে রাজ্যের সেরা মাছ চাষি হিসেবে পুরস্কৃত করল ‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব এগ্রিকালচার রিসার্চ’-এর অধীন ব্যারাকাপুরের ‘সেন্ট্রাল ইনল্যান্ড ফিসারি রিসার্চ ইনস্টিটিউট।’ গত ১০ জুলাই তাঁর হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। তাঁর এই সাফল্য নিয়ে জেলা মৎস্য দফতরের অধিকর্তা পার্থসারথি কুণ্ডু বলেন, ‘‘খুবই ভাল উদ্যোগ। শ্যামাপদবাবু বিঘা পিছু ১২ থেকে সাড়ে ১৩ কিলো পর্যন্ত মাছ উৎপাদন করে চলেছেন। প্রায় দেড়শো জনের কর্মসংস্থানও তৈরি করেছেন।’’

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অভাবের সংসারে পঞ্চম শ্রেণিতেই পড়াশোনায় ছেদ পড়েছে। বাবা বাদলচন্দ্র পাত্রর মাছ ধরার নেশা থাকলেও সংসার চালাতে হিমসিম খেতেন তিনি। তাই মা মিনতিদেবীকে পরিচারিকার কাজ করতে হয়েছে। এই অবস্থায় শ্যামাপদবাবু বিভিন্ন জেলেদের সঙ্গে টাকার বিনিময়ে জাল টানতে যাওয়া শুরু করেন। ২০ বছর বয়স পর্যন্ত ওই কাজ করেছেন তিনি। তার পরে জাল টানার বেতন থেকে একটি হাঁড়ি কেনেন। জেলেদের কাছ থেকে মাছ কম দামে নিয়ে ওই হাঁড়িতে করে বেড়িয়ে পড়তেন মুথাডাঙা, বলরামপুর-সহ নানা এলাকায়। তার পরে মুথাডাঙায় ছোট মাছের আড়ত করেন। ১৯৯৬ সাল নাগাদ প্রথম স্থানীয় ভালিয়া গ্রামে ৬০ বিঘা এলাকার একটি পুকুর লিজে নেন ১ লক্ষ টাকায়। সনাতন পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে এসে বিজ্ঞানভিত্তিক মাছ চাষ শুরু করেন তিনি। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। এখন দিঘি এবং পুকুর মিলিয়ে মোট ৪০০ বিঘা জলাশয়ে মাছ চাষ করছেন তিনি।

Advertisement

বিভিন্ন পুকুরে রুই, কাতলা, মৃগেল, বাটা, রূপচাঁদ, দেশি মাগুর, সিঙ্গি, মৌরলা, পুঁটি, ট্যাংরা, চিতল, চিংড়ি— সহ নানা প্রজাতির মাছ রয়েছে। শুধু নিজে মাছ চাষ করছেন তাই নয়। তাঁর দুই ভাইকেও মাছ চাষ করা শিখিয়েছেন। সেই সঙ্গে প্রতি পুকুর তদারকি ও পাহারা দেওয়ার জন্য পুকুর পিছু গড়ে ৫ জন করে স্থানীয় মানুষকে নিয়োগ করেছেন। তাঁর দিঘি বা পুকুরের মাছ আরামবাগ বাজার ছাড়াও চলে যায় দুর্গাপুর, আসানসোল, উখরা, বর্ধমান, তারকেশ্বর, ব্যান্ডেল চকবাজার বাজারে। সব মিলেয়ে বছরে রোজগার বেশ ভালই হয়।

জেলা মৎস্য দফতর সূত্রে জানা যায়, মাছ চাষের জন্য শ্যামাপদবাবু নিয়মিত ব্লক মৎস্য দফতরের সঙ্গে যোগাযোগও রাখেন। কী বলছেন শ্যামাপদবাবু? তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘এই পুরস্কারে আমি খুশি ঠিকই। তবে সরকারের তরফ থেকে যদি সহযোগিতা করা হয়, তা হলে আরও অনেকেই মাছ চাষে এগিয়ে আসবেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন