লাশকাটা ঘরে একাধিক লাশের মধ্যে তাঁকে দেখে চমকে উঠেছিলেন চিকিৎসক।
পেট ফেটে নাড়িভুঁড়ি বেরিয়ে এসেছিল। তবু দেওঘর সদর হাসপাতালের মর্গে কোনও মতে উঠে বসেছিলেন বাঁশবেড়িয়ার প্রকাশ রেড্ডি। বুঝিয়ে দেন, তিনি মৃত নন।
দিনকয়েক আগে দেওঘরের বৈদ্যনাথ ধামে বন্ধুর সঙ্গে শিবের মাথায় জল ঢালতে গিয়ে আরও অনেকের সঙ্গে প্রকাশও পদপিষ্ট হন। সেই ঘটনায় কিছু পুণ্যার্থীর মৃত্যু হলেও জখম হয়ে প্রকাশ শুধু জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলেন। কিন্তু তাঁকে মৃত মনে করে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল মর্গে। কয়েক ঘণ্টা সেখানে থাকার পরে অবশ্য ওই হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসাও হয়। এমনটাই দাবি করেছেন বর্তমানে ব্যান্ডেলের ইএসআই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন প্রকাশ।
প্রকাশের কথায়, ‘‘আমি যে এখনও বেঁচে রয়েছি ভাবতেই পারছি না। কয়েক হাজার লোক আমার উপর দিয়ে চলে গিয়েছিল। আমার চিৎকার কেউ শোনেনি। তার পরে আমার আর কিছু মনে ছিল না। পরে মর্গে জ্ঞান ফেরে। ওখানকার চিকিৎসক ভুল বুঝতে পেরে আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দেন। অন্য রোগীরাই আমাকে বলেছেন, মৃত ভেবে আমাকে মর্গে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল।’’
বাঁশবেড়িয়ার গ্যাঞ্জেস জুটমিলের শ্রমিক নিউলাইনের বাসিন্দা প্রকাশ বন্ধু লালু রজকের সঙ্গে গত ৭ অগস্ট, শুক্রবার দেওঘরে যান। সোমবার তাঁদের শিবের মাথায় জল ঢালার কথা ছিল। কিন্তু রবিবার ভোররাতেই ওই ঘটনা। মন্দির থেকে পুণ্যার্থীদের লাইন শুরু হয়ে তা দীর্ঘ হতে হতে বেলাবাগান মোড় ছাড়িয়ে যায়। মন্দিরে ঢোকার জন্য তিনটি লাইন করা হয়েছিল। এর মধ্যে দু’টি লাইন রাতে একটু একটু করে এগোতে থাকে। কিন্তু মন্দিরের তিন নম্বর প্রবেশপথটি বন্ধ থাকায় তৃতীয় লাইনটি অনড় থাকে। লাইনে অপেক্ষমাণ ভক্তেরা মাটিয়ে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। রাত দু’টো নাগাদ শোনা যায়, গেট খুলেছে। লাইনও খুলে দেওয়া হয়েছে। তখনই সকলে হুড়মুড় করে এগোনোর চেষ্টা করতে থাকেন। ব্যারিকেড ভেঙে যায়। ঘুমচোখেই অনেকে হুমড়ি খেয়ে মাটিতে পড়ে যান।
সেই সময়ে দেওঘরের পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১১ জনকে মৃত এবং ৫০ জনকে আহত বলে দাবি করা হয়েছিল। যদিও তিন জন ছাড়া মৃত কারও নাম-পরিচয় পুলিশ জানাতে পারেনি। সেই তিন জনের মধ্যেও প্রকাশের নাম ছিল না। রবিবার অবশ্য দেওঘরের জেলাশাসক বিপুল পূর্বা দাবি করেছেন, ‘‘সরকারি ভাবে আমরা আগেই জানিয়েছি, ওই ঘটনায় ১০ জনের মৃত্যু হয়েছিল।’’ দেওঘর সদর হাসপাতালের ডেপুটি সুপার শুভম মুর্মুও দাবি করেছেন, ‘‘সে দিন ১০টি মৃতদেহ হাসপাতালের মর্গে ঢোকানো হয়। তা ছাড়া চিকিৎসকরা ১০০ শতাংশ নিশ্চিত না হয়ে কাউকেই মৃত ঘোষণা করেননি। চিকিৎসকদের দল সে দিন কাজ করছিল।’’ মর্গে প্রকাশের উঠে বসে থাকার খবর জানা নেই বলেও তাঁর দাবি। স্থানীয় সাংসদ নিশিকান্ত দুবেও বলেন, ‘‘আমি সেই সময় টানা দু’দিন হাসপাতালে ছিলাম। এ রকম কোনও ঘটনা ঘটলে নিশ্চয়ই খবর পেতাম।’’ পুলিশও এই ঘটনার কথা অস্বীকার করেছে।
কিন্তু লালু রজকেরও দাবি, মর্গেই স্থান হয়েছিল প্রকাশের। তিনি জানান, সে দিন প্রকাশকে মন্দিরের কাছে এক জায়গায় অপেক্ষা করতে বলে তিনি লাইন দিতে চলে যান। তার পরে ওই ঘটনা। বন্ধুকে খুঁজে না পেয়ে তিনি থানায়, হাসপাতালে খোঁজ করেন। সোমবার মর্গ থেকে হাসপাতালে যখন প্রকাশকে স্থানান্তরিত করানো হচ্ছে তখনই বন্ধুকে খুঁজে পান। লালু বলেন, ‘‘আমি ওর বাড়িতে প্রথমে মৃত্যুসংবাদ জানিয়ে দিয়েছিলাম। পরে ফোন করে বলি, ও বেঁচে রয়েছে। ওই দু’দিনের কথা মনে পড়লে এখনও শিউরে উঠছি।’’
গত ১০ অগস্ট দেওঘর থেকে প্রকাশকে এনে ব্যান্ডেল ইএসআই হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দেওয়া হয়। প্রকাশের ভাই লক্ষণ রেড্ডি মনে করছেন, এই ঘটনায় তাঁর দাদার পুনর্জন্ম হল।