ডাকাতদের ধরার চেষ্টাই করলেন না তো কেউ!

মঙ্গলবার সন্ধ্যা তখন সাড়ে সাতটা হবে। কিছুক্ষণ আগেই বড় মেয়েটা ছোট মেয়েকে কোচিং ক্লাসে পৌঁছে দিতে গিয়েছে। ওরা চলে যাওয়ার পরে শোয়ার ঘরে জামাকাপড় গোছাচ্ছিলাম।

Advertisement

নিতু সিংহ

শেষ আপডেট: ১১ মে ২০১৭ ০৩:০০
Share:

ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছেন রিঙ্কি এবং নিতু। বুধবার। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

মঙ্গলবার সন্ধ্যা তখন সাড়ে সাতটা হবে। কিছুক্ষণ আগেই বড় মেয়েটা ছোট মেয়েকে কোচিং ক্লাসে পৌঁছে দিতে গিয়েছে। ওরা চলে যাওয়ার পরে শোয়ার ঘরে জামাকাপড় গোছাচ্ছিলাম। হঠাৎ দেখি মুখে কালো কাপড় বাঁধা একটা লম্বা-চওড়া লোক ড্রয়িং রুমে দাঁড়িয়ে। সঙ্গে কোমরে রিভলভার গোঁজা একটা বেঁটেখাটো লোক। তারও মুখে কালো কাপড় বাঁধা। দু’জনেই সরাসরি আমার দিকে তাকিয়ে ছিল। ওরা কারা, কেন ঢুকেছে আমাদের বাড়ি সেটা জানতে চাওয়ার আগেই আমাকে ধাক্কা দিয়ে দু’জনেই শোয়ার ঘরে ঢুকে পড়ল। আমার স্বামী অনিল সিংহের নাম করে জানতে চাইল, এটা তাঁরই ফ্ল্যাট কি না।

Advertisement

ততক্ষণে আমি বুঝে গিয়েছি, খুব খারাপ কিছু একটা ঘটতে চলেছে। কোনওমতে আলামারির চাবি বন্ধ করে ‘চোর চোর’ বলে চিৎকার শুরু করি। মুহূর্তের মধ্যে কোমর থেকে রিভলভার বার করে মুখ বন্ধ করার জন্য হুমকি দিয়ে ওঠে বেঁটে লোকটা। কিন্তু মুখ বন্ধ করে থাকলে তো বিপদটা আরও বাড়বে। তাই আমি ফের চেঁচিয়ে উঠলাম। সঙ্গে সঙ্গে রিভলভারের বাঁট দিয়ে আমার মাথায় সজোরে আঘাত করার চেষ্টা করল ও। আমি মাথা সরিয়ে নিতেই আঘাতটা এসে পড়ল আমার ডানহাতের কব্জির উপরে। বুঝতে পারলাম, একা পারব না। লোকজন ডাকতে হবে।

এর মধ্যেই প্রশ্নটা মাথায় উঁকি দিল। লোকদুটো ঢুকল কী ভাবে? ফ্ল্যাটে ঢোকার মূল দরজা ও কোল্যাপসিব্‌ল গেট সব সময়ে বন্ধ থাকে। তা হলে? মনে পড়ে যায় কিছুক্ষণ আগেই মেয়েরা বেরিয়েছে। দরজা খোলা ছিল। আর সেই সুযোগটাকেই কাজে লাগিয়েছে ওরা।

Advertisement

ওই মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নিই লোক ডাকতে হবে পাশের ফ্ল্যাট থেকে। দুই দুষ্কৃতীর পাশ দিয়ে চিৎকার করতে করতে ছুটে যাই ফ্ল্যাটের সদর দরজার দিকে। কিন্তু দরজা ভিতর থেকে আগেই বন্ধ করে দিয়েছে ওরা। বেঁটে লোকটা আমাকে পিছন থেকে জাপ্টে ধরার চেষ্টা করে। মরিয়া হয়ে ওকে সজোরে ধাক্কা দিই। আমার ধাক্কায় লোকটা মেঝেতে পড়ে যায়। আর পড়ার সময়ে সজোরে মাথা ঠুকে যায় দেওয়ালে। রিভলভারটিও হাত থেকে ছিটকে গিয়ে ঢুকে যায় ঘরের সোফার তলায়। তাতেই ঘাবড়ে যায় দু’জনে।

আরও পড়ুন: থানায় দাঁড়িয়েই সপা-টে চড় পুলিশ অফিসারকে!

শিবপুরের অলোকা সিনেমার পিছনে উপেন্দ্র রায় লেনের তস্য গলির মধ্যে একটি পাঁচতলা ফ্ল্যাটবাড়ির তিনতলায় আমরা থাকি। আমার দেওর সুনীলেরও দুই মেয়ে। ঘটনার সময়ে দুই মেয়েকে নিয়ে ছোট দেওরের স্ত্রী রিঙ্কিও ফ্ল্যাটেই ছিল। ও পুজো করছিল। আমার চিৎকার শুনে ছুটে বেরিয়ে আসে রিঙ্কি। চিৎকার করে লোক ডাকতে শুরু করে দেয়।

পরিস্থিতি ঘোরালো হয়ে উঠেছে বুঝতে পেরে দুই দুষ্কৃতীই তখন দরজা খুলে চম্পট দেয়। ততক্ষণে পাড়ার অনেক লোক ফ্ল্যাটের নীচে জড়ো হয়েছিলেন। কিন্তু অবাক হয়ে দেখলাম কেউ ওই দু’জনকে আটকানোর চেষ্টা করলেন না। বিনা বাধায় লোক দু’টি ফ্ল্যাট থেকে নেমে উধাও হয়ে গেল।

পরে পুলিশ এল। সোফার তলা থেকে রিভলভারটাও উদ্ধার করে নিয়ে গেল। আমাদের অনেক বাহবাও দিল। কিন্তু আমার মনের মধ্যে খচখচ করছে। কেন পাড়ার কেউ ওদের আটকানোর চেষ্টা করলেন না? এমন গা বাঁচানো মানসিকতাই কি তা হলে ভরসন্ধ্যায় কারও বাড়ি চড়াও হওয়ার মতো দুঃসাহস জোগায় সমাজবিরোধীদের?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন