রেললাইন ধরে কাঁদতে কাঁদতে হাঁটছিলেন বৃদ্ধা, ছুটে আসছিল ট্রেন, তার পর...

সকাল সওয়া ৭টা নাগাদ বাগনান স্টেশনে বসে খবরের কাগজ বিক্রি করছিলেন বিক্রমাদিত্য ঘোষ। হঠাৎ লক্ষ করেন রেল লাইন ধরে কাঁদতে কাঁদতে হাঁটছেন এক বৃদ্ধা। উল্টো দিক থেকে ছুটে আসছে ডাউন পাঁশকুড়া লোকাল।

Advertisement

সুব্রত জানা

বাগনান শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:০০
Share:

থানায় বসেও কেঁদে চলেছেন বৃদ্ধা। (ইনসেটে) বিক্রমাদিত্য। নিজস্ব চিত্র

সকাল সওয়া ৭টা নাগাদ বাগনান স্টেশনে বসে খবরের কাগজ বিক্রি করছিলেন বিক্রমাদিত্য ঘোষ। হঠাৎ লক্ষ করেন রেল লাইন ধরে কাঁদতে কাঁদতে হাঁটছেন এক বৃদ্ধা। উল্টো দিক থেকে ছুটে আসছে ডাউন পাঁশকুড়া লোকাল। হর্নের শব্দে ভ্রূক্ষেপ নেই বৃদ্ধার। মুহূর্ত দেরি করেননি বিক্রম, ছুটে গিয়ে টেনে আনেন বৃদ্ধাকে। তখনও কেঁদে চলেছেন তিনি।

Advertisement

অনেক কষ্টে তাঁকে জিজ্ঞাসা করে জানা গিয়েছে, বাড়িতে ছেলে-বৌয়ের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে আত্মঘাতী হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পঁচাত্তর বছরের আঙুরবালাল মাহাতা। কিন্তু কিছুতেই ঠিকানা বলতে চান না— বাধ্য হয়েই থানায় নিয়ে গিয়েছিলেন বিক্রম। থানায় বৃদ্ধা জানিয়েছেন তিনি বাকসি এলাকার বাসিন্দা।

পুলিশ ওই বৃদ্ধার ছেলেকে থানায় নিয়ে এলে তিনি সাফ বলে দেন, ‘‘মায়ের মাথা খারাপ। সকালে কখন বেরিয়ে গিয়েছে জানি না। পড়শিরা বলল মা থানায় গিয়ে বসে রয়েছে।’’

Advertisement

থানায় বসে আঙুরবালাদেবী বলেছেন, প্রায় ৩০ বছর আগে মারা গিয়েছেন তাঁর স্বামী। একমাত্র ছেলে আনন্দ কাজ করে কলকাতার এক রেস্তরাঁয়। সেখানেই থাকেন। প্রথমবার ছেলের বিয়ে দিয়েছিলেন নিজে। কিন্তু সে বার বৌমা মারা যায় কিছুদিনের মধ্যেই। দ্বিতীয়বার বিয়ে করে বৌ ঘরে আনে ছেলে। সেই থেকেই অশান্তি। একটি চোদ্দো বছরের নাতনিও রয়েছে আঙুরবালার।

চোখের জল ফেলে বৃদ্ধা বলেন, ‘‘ছেলে বাড়ি থাকে না, বৌ খেতে দেয় না। মারধর করে। বাড়ি থেকে বের করে তালা দিয়ে দেয়। ছেলেকে বললে বিশ্বাস করে না এ সব।’’

শনিবার বাড়ি ফিরেছিলেন বছর পঞ্চাশের আনন্দ। অভিযোগ, সে দিন ছেলের সঙ্গেও ঝগড়া হয় মায়ের। এমনকি ছেলে-বৌ দু’জনে তাঁকে মারধর করে। তারপরই আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আনন্দ ও তাঁর স্ত্রী লক্ষ্মী। লক্ষ্মী বলেন, ‘‘শাশুড়িই গালিগালাজ করেন। তাই অশান্তি। এমন যে করবেন কী করে জানব!’’

আরও পড়ুন: রোগীর মুখই দেখতে পাই না, যাব কেন তবে!

বিক্রম বলেন, ‘‘প্রথম থেকেই আমি বুঝতে পারছিলাম, কিছু একটা সমস্যা আছে। তাই আর দেরি করিনি। প্লাটফর্মে নিয়ে এসে চা বিস্কুট খাওয়ালাম। তাও কিছু বলতে চাইছিলেন না দিদা। শুধু কাঁদছিলেন।’’

পুলিশ অবশ্য ছেলের কাছ থেকে মুচলেকা লিখিয়ে নিয়েছে। এমন ঘটনা আর ঘটলে যে আইনি পদক্ষেপ করা হবে তা নিয়ে সচেতন করে দেওয়া হয়েছে আনন্দকে। বৃদ্ধাকেও আশ্বাস দেওয়া হয়েছে যে কোনও রকম সাহায্যের। হাওড়া (গ্রামীণ) জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘ছেলেকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। সিভিক ভলান্টিয়াররা নিয়মিত খোঁজ নেবেন।’’ বিক্রমের সাহসের প্রশংসাও করেন তিনি।

বিক্রম এ দিন বলেছেন, ‘‘আমারা ঠিক খোঁজ রাখব দিদা কেমন আছেন। গোলমাল হলে আমরা তো আছিই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন