ক্লাস চালু করতে নির্দেশ কর্তৃপক্ষকে, জট কাটেনি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে

পঠনপাঠনের স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফেরাতে গুপ্তিপাড়ার ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ কর্তৃপক্ষকে তৎপর হতে বলল রাজ্যের প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গুপ্তিপাড়া শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:২৪
Share:

প্রতিবাদ: টানা আন্দোলনে ছাত্ররা। ছবি: সুশান্ত সরকার

পঠনপাঠনের স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফেরাতে গুপ্তিপাড়ার ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ কর্তৃপক্ষকে তৎপর হতে বলল রাজ্যের প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

Advertisement

কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের একাংশের দড়ি-টানাটানির জেরে অচলাবস্থা চলছে গুপ্তিপাড়ার বেসরকারি কলেজটিতে। ক্লাস না হওয়ায় টানা চারদিন ধরে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের আটক করে রেখেছেন ছাত্রছাত্রীরা। ঘেরাও হয়ে থাকা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দাবি, কর্তৃপক্ষ নজর না দেওয়াতেই ক্লাস হচ্ছে না। অন্য দিকে, পরিস্থিতির জন্য কর্তৃপক্ষের তরফে কয়েকজন শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর দিকে আঙুল তোলা হয়েছে। ছেলেমেয়েদের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন পড়ুয়াদের অভিভাবকরাও।

এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার রাজ্য প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য সৈকত মৈত্র কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। পরে সৈকতবাবু বলেন, ‘‘২৪ ঘণ্টার মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষকে। শিক্ষক, ছাত্রছাত্রী সব পক্ষের সঙ্গে সমন্বয় রেখেই কলেজ চালাতে হবে।’’

Advertisement

অবিলম্বে ক্লাস চালুর দাবিতে মঙ্গলবার থেকে ঘেরাও শুরু করেন কয়েকশো ছাত্রছাত্রী। শুক্রবারও একই পরিস্থিতি ছিল। গোলমালের আশঙ্কায় কলেজে যান হুগলি জেলা (গ্রামীণ) পুলিশের আধিকারিকরা। পড়ুয়ারা জানান, বুধবার থেকে কয়েক জন ছাত্রছাত্রী অনশন শুরু করেন। এ দিন বিকেলে তাঁদের মধ্যে অর্ঘ্য ধর এবং সৌদামিনী গুপ্ত ন‌ামে দ্বিতীয় বর্ষের দুই পড়ুয়া অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁদের বলাগড় গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।

কলেজের স্বাভাবিক পরিবেশ ফেরানোর দাবিতে এ দিন পড়ুয়াদের তরফে চিঠি পাঠানো হয় সহ-উপাচার্যের কাছে। চতুর্থ বর্ষের ছাত্র অমৃতেন্দু দাস বলেন, ‘‘দ্রুত ক্লাস চালুর ব্যবস্থা এবং স্থায়ী অধ্যক্ষ নিয়োগ করা হোক। এই দাবিতে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান এবং অনশন চলছে। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলনের রাস্তা ছাড়ব না।’’

ঘেরাও হওয়া শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অনেকেই বেজায় ফাঁপড়ে পড়েছেন। তাঁরা জানান, তাঁদের বাড়ির লোকজনও উদ্বিগ্ন। ঘনঘন ফোন করছেন তাঁরা। এক শিক্ষিকা বলেন, ‘‘বাড়িতে ছ’মাসের বাচ্চা আছে। কিন্তু চার দিন ধরে বাড়ি ফিরতে পারছি না। খুব চিন্তায় আছি। বাড়ির লোকজনও দুশ্চিন্তা করছেন।’’

কলেজের প্রতিষ্ঠাতা প্রদীপ চৌধুরী ও তাঁর কয়েকজন ঘনিষ্ঠের সঙ্গেই যৌথভাবে ওই কলেজটি পরিচালনা করে একটি বেসরকারি সংস্থা। কলেজ সূত্রের খবর, অধ্যক্ষ অরিন্দম রায়ের বিরুদ্ধে কয়েকজন শিক্ষকের বনিবনা হচ্ছিল না। তাঁদের বক্তব্য, টাকা-পয়সা সংক্রান্ত কিছু নিয়ে তাঁরা কর্তৃপক্ষের কাছে দরবার করছিলেন। সেই নিয়ে গত অগস্ট মাসে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তাঁদের বৈঠক হয়। নতুন অধ্যক্ষ নিয়োগের প্রতিশ্রুতি দেন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তা করা হয়নি। দু’জন শিক্ষকের ডিসেম্বর মাসের বেতনও ‘অকারণে’ আটকে দেওয়া হয়।

কলেজ কর্তৃপক্ষ অভিযোগ মানেননি। তাঁদের পাল্টা দাবি, অধ্যক্ষ দক্ষতার সঙ্গে কলেজ চালাচ্ছিলেন। ফাঁকি বরদাস্ত করছিলেন না। গুটিকতক শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীর সমস্যা হচ্ছে সেটা নিয়েই। তাঁরাই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামেন। তাঁদের কাজকর্মে কলেজের স্বাভাবিক ছন্দ নষ্ট হয়। সেই কারণেই দুই শিক্ষকের এক মাসের বেতন আটকানো হয়। তবে তাঁদের সঙ্গে কথা বলে তা মিটিয়ে দেওয়া হবে। কলেজের এক কর্তা বৃহস্পতিবার জানিয়েছিলেন‌, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।

শুক্রবার কলেজ কর্তৃপক্ষের তরফে কারও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন