আতঙ্ক: হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বিকাশবাবুকে।
ফের হুগলিতে প্রকাশ্যে দিনের ব্যস্ত সময়ে গুলি চলল। এক পেট্রল পাম্পের ম্যানেজারকে খুনের চেষ্টা করে কয়েক লক্ষ টাকা ভর্তি ব্যাগ নিয়ে চম্পট দিল মোটরবাইকে আসা দুষ্কৃতীরা।
ঘটনাস্থল বলাগড়। সোমবার সময় তখন সকাল সওয়া ১০টা। রক্তাক্ত অবস্থায় বিকাশ দাস নামে ওই পাম্প ম্যানেজারকে লুটিয়ে পড়তে দেখে হাড়হিম হয়ে যায় এলাকাবাসীর। অনেকের স্মৃতিতে ফিরে আসে বছর খানেক আগে গুপ্তিপাড়ায় দুষ্কৃতীদের মধ্যে গুলির লড়াইয়ের ঘটনা।
বছর কয়েক ধরেই হুগলির নানা প্রান্তে দুষ্কৃতীদের বাড়বাড়ন্তে তটস্থ সাধারণ মানুষ। সম্প্রতি বাঁশবেড়িয়ায় এক যুবক গুলিবিদ্ধ হন। কিছু দিন আগে পান্ডুয়ার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে ঢুকে টাকা লুট করে সশস্ত্র দুষ্কৃতীরা। গত কয়েক মাসে চন্দননগর কমিশনারেটে কখনও কোন্নগরে যুবতী গুলিতে খুন হয়েছেন, কখনও নির্মীয়মাণ আবাসনে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা হয়েছে, কখনও চুঁচুড়ায় গুলি চলেছে। সেই তালিকায় এ বার বলাগড়।
বিকাশবাবুকে পুলিশ প্রথমে জিরাট গ্রামীণ হাসপাতালে পাঠায়। সেখান থেকে তাঁকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করানো হয়। তাঁর ডান হাতের কনুইয়ে দু’টি গুলি লাগে। একটি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। এক ব্যবসায়ী রাস্তায় বেঞ্চ পেতে দুষ্কৃতীদের আটকানোর চেষ্টা করেন। তাঁকে পাশ কাটিয়ে দুষ্কৃতীরা চলে যায়। জেলা (গ্রামীণ) পুলিশের ডিএসপি (শৃঙ্খলা ও প্রশিক্ষণ) প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় ঘটনাস্থলে আসেন। তিনি বলেন, ‘‘দুষ্কৃতীদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। রাস্তার ধারের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আশা করছি, শীঘ্রই ঘটনার কিনারা করা যাবে।’’ তবে, বিকেল পর্যন্ত বিভিন্ন রাস্তায় তল্লাশি চালিয়েও পুলিশ দুষ্কৃতীদের টিকি ছুঁতে পারেনি।
এখানেই গুলিবিদ্ধ হন বিকাশবাবু (বাঁ দিকে) তদন্তে পুলিশ (ডান দিকে)। নিজস্ব চিত্র।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কোরলা এলাকার একটি পাম্পের ম্যানেজার, বছর আটচল্লিশের বিকাশবাবু সোমরা বাজারে ভাড়া থাকেন। এ দিন সকাল সওয়া ১০টা নাগাদ পাম্প থেকে একটি নাইলনের ব্যাগে কয়েক লক্ষ টাকা নিয়ে সাইকেলে তিনি বলাগড় বাজারে ব্যাঙ্কে জমা দিতে যাচ্ছিলেন। বাসস্ট্যান্ডের কাছ থেকে স্টেশনের দিকে যাওয়ার রাস্তা ধরেন। রাস্তার মাঝে উল্টো দিক থেকে একটি মোটরবাইকে তিন দুষ্কৃতী এসে তাঁর পথ আগলে দাঁড়ায়। তাদের মুখ গামছায় বাধা ছিল। দুষ্কৃতীরা বিকাশবাবুর ব্যাগ ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে তিনি বাধা দেন। দুষ্কৃতীরা পর পর তিনটি গুলি চালায়। বিকাশবাবু লুটিয়ে পড়তেই টাকার ব্যাগ নিয়ে দুষ্কৃতীরা বাসস্ট্যান্ডের দিকে পালায়।
ঘটনাস্থলে সেই সময়ে লোকজন কম ছিল। বাসস্ট্যান্ড ও রেল স্টেশন কাছেই। থানাও মেরেকেটে এক কিলোমিটার। তার মধ্যে কী করে দুষ্কৃতীরা এমন কাণ্ড ঘটাতে সাহস পায়, এ প্রশ্ন উঠেছে। তদন্তকারীরা মনে করছেন, রীতিমতো খোঁজখবর নিয়েই দুষ্কৃতীরা অপেক্ষাকৃত ফাঁকা জায়গায় ‘অপারেশন’ সারে।
পেট্রল ডিলারদের সংগঠনের নিয়ম অনুযায়ী, মোটরবাইক বা গাড়িতে কমপক্ষে দু’জনের টাকা নিয়ে যাওয়ার কথা। কোরলার ওই পাম্পটির মালিক মৃণাল দাস বলেন, ‘‘কর্মী কম থাকায় বিকাশবাবু সাইকেলে একাই টাকা নিয়ে যাচ্ছিলেন। সাড়ে ৬ লক্ষ টাকা ছিল।’’ শ্যামল বিশ্বাস নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘দুঃসাহসিক কাণ্ড। ভয়ে কাঁটা হয়ে যাচ্ছি।’’ এক গ্রামবাসীর কথায়, ‘‘রাস্তায় আলো নেই। রাতে তো আরও ভয়ানক ঘটনা
ঘটতে পারে!’’