Arpan Das

পোষ্যের টানা চিৎকারে উদ্ধার যুবকের পচাগলা ঝুলন্ত দেহ

এ দিকে, অনেক দিন বন্দি থেকে খেপে গিয়ে পোষ্যটিকে সামলাতে স্থানীয় ডগ হ্যান্ডলার সনৎ হাজরাকে ডেকে আনা হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০২০ ০৫:১৩
Share:

এই পোষ্যের চিৎকার শুনেই উদ্ধার হয় অর্পণ দাসের (ইনসেটে) দেহ। সোমবার, বালিতে। নিজস্ব চিত্র

জানলা-দরজা বন্ধ। অথচ বাড়ির ভিতর থেকে চিৎকার করছে কুকুর। দিন দুয়েক ধরে অনবরত সেই ডাক শুনে সন্দেহ হচ্ছিল স্থানীয়দের। ওই পোষ্যের মালিক বছর তেত্রিশের যুবককেও বেশ কয়েক দিন ধরে দেখতে পাচ্ছিলেন না স্থানীয়েরা। খবর যায় দমকল ও পুলিশে। দরজা ভেঙে উদ্ধার করা হয় কুকুরটিকে। ভিতরে তল্লাশি চালাতেই একটি ঘর থেকে উদ্ধার হয় ওই যুবকের পচাগলা ঝুলন্ত দেহ! ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার, বালির আনন্দনগরে।একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করেছেন নিশ্চিন্দা থানার তদন্তকারীরা।

Advertisement

পুলিশ জানিয়েছে, মৃত যুবকের নাম অর্পণ দাস। বালির ঘোষপাড়া বাজারে তাঁর বাবা প্রদীপবাবুর একটি সোনার দোকান রয়েছে। সেটি অর্পণই দেখাশোনা করতেন। পুলিশ সূত্রের খবর, আনন্দনগরে প্রায় পাঁচ কাঠা জমির উপরে অর্পণদের বাড়ি। তাঁর মা অপর্ণাদেবী মারা গিয়েছেন বছর চারেক আগে। প্রতিবেশীরা জানান, বছর দুয়েক আগে পরিচিত এক ব্যক্তির সঙ্গে চেন্নাইয়ে চোখের চিকিৎসা করাতে যাওয়ার পথে নিরুদ্দেশ হয়ে যান প্রদীপবাবু। অনেক খোঁজ করেও সন্ধান মেলেনি ওই প্রৌঢ়ের। তার পর থেকে গোটা বাড়িতে একাই থাকতেন অর্পণ। সঙ্গী বলতে স্পেনিয়াল প্রজাতির ওই কুকুরটি। প্রতিবেশীদের বক্তব্য, কারও সঙ্গেই সে ভাবে মেলামেশা করতেন না ওই যুবক। বাড়ির কেবল লাইনও কেটে দিয়েছিলেন। বেশিরভাগ দিন সব জানলা-দরজাই বন্ধ থাকত।

অর্পণের এক জেঠতুতো দাদা রাজু দাস বলেন, ‘‘দোকানে যাতায়াতের পথে দেখা হলে অনেক কথা বলত। ২৮ সেপ্টেম্বর শেষ দেখা হয়েছিল। তার দু’দিন পর থেকেই ভাইকে ফোনে পাচ্ছিলাম না।’’ মাঝেমধ্যে দু’-তিন দিনের জন্য ঘুরতে চলে যেতেন অর্পণ। এ বারেও তেমনই গিয়েছেন মনে করেছিলেন রাজু-সহ প্রতিবেশীরাও। তাঁরা জানান, ৩০ সেপ্টেম্বরের পর থেকেই আর রাস্তায় দেখা যায়নি অর্পণকে। গত শনিবার থেকে খুব চিৎকার শুরু করে কুকুরটি। প্রথমে আশপাশের লোকজন ভেবেছিলেন পোষ্যটি হয়তো এমনিই চেঁচাচ্ছে। কিন্তু দু’দিন অনবরত ডাক শুনেই সন্দেহ হয় তাঁদের।

Advertisement

এ দিন নিশ্চিন্দা থানার পুলিশ ও দমকল বাহিনী বাড়িতে ঢোকার লোহার গেট ও কোল্যাপসিবল গেটের তালা ভাঙা মাত্রই লাফিয়ে বাইরে আসে পোষ্যটি। এর পরে দমকল ও পুলিশ বাহিনী বাড়ির দোতলায় তল্লাশি শুরু করেন। সেখানে কিছু না পেয়ে একতলায় খোঁজাখুঁজি করতেই একটি অন্ধকার ঘরের সিলিং থেকে দড়ির ফাঁস দেওয়া অবস্থায় উদ্ধার করেন অর্পণকে। যুবকের দেহে এতটাই পচন ধরে গিয়েছিল যে মুখের হাড়গোড় বেরিয়ে এসেছিল। ঘর থেকে কোনও সুইসাইড নোট মেলেনি। পাশেই ছিল একটি কাঠের বড় টুল।

এ দিকে, অনেক দিন বন্দি থেকে খেপে গিয়ে পোষ্যটিকে সামলাতে স্থানীয় ডগ হ্যান্ডলার সনৎ হাজরাকে ডেকে আনা হয়। কোনও মতে কুকুরটিকে বাগে এনে উল্টো দিকের বাড়ির জানলার সঙ্গে চেন দিয়ে বেঁধে রাখেন তিনি। সনৎ বলেন, ‘‘প্রায় দু’বছর বয়স কুকুরটির। বেশ কয়েক দিন কিছু খেতে পায়নি সে। অন্ধকারে আটকে ছিল। তাই ক্ষেপে গিয়ে কামড়াতে আসছিল।’’ আপাতত কুকুরটিকে সনতের হেফাজতেই রাখা হয়েছে।

পুলিশের অনুমান, মানসিক অবসাদ থেকেই এমন করেছেন ওই যুবক। অর্পণের দাদা রাজু বলেন, ‘‘ছোট থেকেই ভাইকে মিশতে দিতেন না কাকু-কাকিমা। কোনও বন্ধুও ছিল না। কেন যে এমন করল বুঝতে পারছি না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন