শ্রমিক মেলা বয়কটের সিদ্ধান্ত কিছু সংগঠনের

হুগলিতে বেশ কয়েক বছর ধরেই ডানলপ এবং হিন্দমোটর কারখানা বন্ধ। গত বছরে বন্ধ হয়ে গিয়েছে গোন্দলপাড়া, ইন্ডিয়া এবং হেস্টিংস জুটমিল। ভদ্রেশ্বরের বেলিস ম্যালকমস্ কারখানাও দীর্ঘদিন ধরেই বন্ধ।

Advertisement

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

চন্দননগর শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০১৯ ০৪:৩৩
Share:

প্রস্তুতি: চলছে মণ্ডপ বাঁধার কাজ। নিজস্ব চিত্র

ঢাকঢোল পিটিয়ে রাজ্য শ্রম দফতর চন্দননগরে শ্রমিক মেলার আয়োজন করেছে। আগামী শুক্র ও শনি— দু’দিনের ওই মেলা হবে নাড়ুয়া গড়ের ধারের রবীন্দ্র স্মৃতি সঙ্ঘের ময়দানে। কিন্তু মেলা বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলায় শ্রমিক কল্যাণের কাজে যুক্ত কয়েকটি সংগঠন। তাদের অভিযোগ, জেলায় বহু কল-কারখানা ও জুটমিল বন্ধ। সে সব খোলার ক্ষেত্রে শ্রম দফতর কোনও ভূমিকা পালন করছে না।

Advertisement

এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি চন্দননগরের উপ-শ্রম কমিশনার কিংশুক সরকার। তিনি বলেন, ‘‘মূলত শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা এবং সচেতনতা বাড়ানোর উদ্দেশ্যেই মেলার আয়োজন। অন্য কোনও বিষয়ে কোনও বক্তব্য নেই।’’

হুগলিতে বেশ কয়েক বছর ধরেই ডানলপ এবং হিন্দমোটর কারখানা বন্ধ। গত বছরে বন্ধ হয়ে গিয়েছে গোন্দলপাড়া, ইন্ডিয়া এবং হেস্টিংস জুটমিল। ভদ্রেশ্বরের বেলিস ম্যালকমস্ কারখানাও দীর্ঘদিন ধরেই বন্ধ। সব ক্ষেত্রেই শ্রমিকেরা তাঁদের নায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ। এই অবস্থায় মূলত তিনটি সংগঠন (আইনি সহায়তা কেন্দ্র, প্রবীণ নাগরিক অধিকার রক্ষা মঞ্চ এবং অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক কল্যাণ সমিতি) এ বার মেলা বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাশে পেয়েছে আরও কয়েকটি ছোট সংগঠনকে। কিন্তু গতবারের মেলায় ওই সংগঠনগুলি যোগ দিয়েছিল।

Advertisement

এ বার বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়ে অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক কল্যাণ সমিতির সম্পাদক গৌতম গুহরায় বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারের শ্রমিক বিরোধী নানা অনৈতিক পদক্ষেপের প্রতিবাদে আমরা মেলায় সামিল হচ্ছি না। জেলায় বন্ধ কল-কারখানা খোলার দাবিতে আমরা শীঘ্রই বিক্ষোভ-সমাবেশ করব।’’ প্রবীণ সিটু নেতা তথা প্রাক্তন সাংসদ শান্তশ্রী চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘হিন্দমোটর কারখানা খোলার দাবিতে শুধু আন্দোলন নয়, আমরা শ্রম দফতরে বারবার চিঠি দিয়েছি। সরকারি ভাবে চিঠির প্রাপ্তিস্বীকার পর্যন্ত করা হয় না।’’

সংগঠনগুলির বক্তব্য, মূলত তিনটি কারণে তারা শ্রমিক মেলায় যোগ দিচ্ছে না। প্রথমত, কারখানা এবং জুটমিল কর্তৃপক্ষ নিয়মবিরুদ্ধ ভাবে তাঁদের প্রতিষ্ঠান বন্ধ করেছেন। রাজ্য সরকারের কাছে কারখানা বন্ধকে ‘বেআইনি’ ঘোষণা করার দাবি জানানো হলেও তা কার্যকর হয়নি। দ্বিতীয়ত, ওই সমস্ত বন্ধ কারখানা এবং জুটমিল খোলার দাবিতে শ্রমিকেরা যখন আদালতে আইনি লড়াই লড়েন, তখন রাজ্য সরকার নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে বলে অভিযোগ। কারখানা খোলা বা শ্রমিকদের পাওনার দাবির পক্ষে সরকারি আইনজীবীরা ভূমিকা পালন করেন না বলেও অভিযোগ। তৃতীয়ত, ভিন্‌ রাজ্য থেকে পশ্চিমবঙ্গের অন্তত ৭০০ ইটভাটা এবং অন্য প্রতিষ্ঠানে শ্রমিকেরা অস্থায়ী ভাবে কাজে আসেন। কেন্দ্র সরকারের নিয়ম অনুয়ায়ী রাজ্য সরকারের শ্রম দফতরের তাঁদের নাম ‘রেজিস্ট্রি’ করা বিধি। কিন্তু এখানে তা হয় না। ফলে, শিশু শ্রমিকদের নিয়ম বিরুদ্ধ ভাবে কাজে লাগানো হয়। শিক্ষা থেকে তারা বঞ্চিত হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন