নেই পর্যাপ্ত যন্ত্র, হুগলিতে শব্দের মাত্রা নির্ধারণে প্রশ্ন

জেলা পুলিশের এক প্রবীণ অফিসার বলেন, ‘‘কানে শুনে শুধুমাত্র অনুমানের উপর ভিত্তি করে কারও বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যায় না।

Advertisement

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০১৯ ০১:৩৫
Share:

বিভিন্ন ধরনের চকলেট বোমা। নিজস্ব চিত্র

কালীপুজোয় শব্দবাজি এবং ডিজে রুখতে হুগলিতে পুলিশের প্রচারের অন্ত নেই। কিন্তু ‘সাউন্ড লিমিটার’ নামে যে যন্ত্রের সাহায্যে শব্দের তীব্রতা মাপা হয়, তা কি হুগলিতে পুলিশের হাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে আছে?

Advertisement

পরিবেশপ্রেমীরা তো বটেই, জেলার প্রবীণ পুলিশ অফিসাররাও দাবি করেছেন, চন্দননগর কমিশনারেট এবং জেলা (গ্রামীণ) পুলিশ— কোনও পক্ষের হাতেই ওই যন্ত্র পর্যাপ্ত নেই। থাকলেও থানাপিছু একটি। ফলে, কালীপুজোর রাতে শুধুমাত্র নজরদারি চালিয়ে শব্দবাজি বা ডিজে-র দাপট পুলিশ পুরোপুরি নির্ধারণ করতে পারবে না। ফলে, ব্যবস্থাও নেওয়া যাবে না।

জেলা পুলিশের এক প্রবীণ অফিসার বলেন, ‘‘কানে শুনে শুধুমাত্র অনুমানের উপর ভিত্তি করে কারও বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। আদালতে অপরাধ প্রমাণ করা দুরূহ হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে প্রযুক্তির উপর নির্ভর করতেই হবে। অর্থাৎ, সাউন্ড লিমিটার জরুরি। পুলিশের হাতে তা না-থাকায় সাধারণ মানুষকে সতর্ক করা ছাড়া আমাদের হাতে অন্য কোনও রাস্তা নেই।’’

Advertisement

পুলিশকর্তারা সমস্যার কথা মানছেন। জেলার সব থানা যে এখনও ওই যন্ত্র পায়নি, সে কথাও তাঁরা ঠারেঠোরে স্বীকার করেছেন। তবে, এ জন্য শব্দবাজির বিরুদ্ধে অভিযানে খামতি থাকবে না বলে তাঁদের দাবি। চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘‘দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ থেকে আমাদের অফিসারদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে শব্দের মাত্রা মাপার ক্ষেত্রে। সাউন্ড লিমিটার যন্ত্র নিয়ে কিছু সমস্যা থাকায় পর্ষদের অফিসারদের সঙ্গে পুলিশ মিলিত ভাবে কাজ করবে।’’ জেলা (গ্রামীণ) পুলিশ সুপার তথাগত বসু বলেন, ‘‘পর্ষদের থেকে কিছু সাউন্ড লিমিটার দেওয়া হয়েছিল। সেগুলো থানায় থানায় বিলি করা হয়েছে।’’

ডিজে বা শব্দবাজির আওয়াজ কতটা মাত্রাছাড়া হল, তা বলে দেয় ওই যন্ত্র। কয়েকটি থানায় ওই যন্ত্র মালখানায় পড়ে রয়েছে বলে পুলিশেরই একাংশের দাবি। ফলে, যন্ত্রটি ঠিক কতটা কার্যকর অবস্থায় রয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কালীপুজোর রাতে বিভিন্ন থানা এলাকায় পুলিশের একাধিক ‘টিম’ শব্দবাজির উপরে নজরদারি চালাতে নামে। কিন্তু পুলিশের একটি টিম সাউন্ড-লিমিটার নিয়ে বেরোলে অন্যদের হাত ফাঁকাই রয়ে যাবে মনে করছেন অনেকে। চন্দননগরের বাসিন্দা, পরিবেশবিদ বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘শব্দবাজি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের পরিকাঠামো নেই। আর পর্ষদের ইচ্ছা নেই। এই আবহে একমাত্র মানুষের সচেতনতা বাড়ানোর উপরই আমাদের ভরসা করতে হবে। বিভিন্ন সংগঠন সচেতনতার কাজ করে চলেছে।’’ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ অবশ্য জানিয়েছে, ‘ওয়েবেল’ সংস্থাকে ওই যন্ত্রের বরাত দেওয়া হয়েছে। তাদের কাছ থেকে পাওয়া গেলেই প্রতিটি থানাকে ‘সাউন্ড লিমিটার’ দিয়ে
দেওয়া হবে।

হুগলিতে শহরাঞ্চলের তুলনায় গ্রামেই শব্দবাজির দাপট বেশি। জাঙ্গিপাড়া, চণ্ডীতলা, ধনেখালি, পোলবা, আরামবাগ এবং তারকেশ্বর এলাকায় বেআইনি ভাবে প্রচুর শব্দবাজি তৈরি হয়। ওই সব এলাকায় বিভিন্ন সময়ে শব্দবাজি তৈরি করতে গিয়ে বিস্ফোরণে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। চন্দননগর কমিশনারেটে একমাত্র ডানকুনি থানা এলাকায় শব্দবাজি তৈরির চল রয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন