এ ভাবেই বাড়ছে একের পর এক আবাসন। ছবি: দীপঙ্কর দে।
কৃষি না শিল্প— এই বিতর্ক পিছনে ফেলে এখন সিঙ্গুরে মাথা তুলছে একের পর এক আবাসন। লাফিয়ে বাড়ছে জমির দাম। গত কয়েক বছরে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে এটিএম-এর সংখ্যা লাফিয়ে বেড়েছে। সেই পরিসংখ্যানই বলছে, সিঙ্গুরে ব্যবসা বাড়ছে। বাড়ছে জনসংখ্যার চাপ। কিন্তু পরিষেবার নিরিখে সার্বিক চেহারাই এখনও পেল না শহরটা।
গত কয়েক বছরে সিঙ্গুর শহর বেড়েছে অনেকটাই। গড়পড়তা রাস্তাঘাট আগের তুলনায় কিছুটা ভাল হয়েছে। কিন্তু উন্নত শহরের পদবাচ্য হতে চাই কতগুলি প্রাথমিক শর্ত। নিকাশি, পানীয় জল, আলো বা রাস্তার পরিসর আদৌ কতটা ব্যবহারের উপযুক্ত সেই প্রশ্ন উঠেছে। শহরের বসবাসের সুবিধা, যোগাযোগ ব্যবস্থার দিকে এক নজর দেওয়া যাক।
হাওড়া-তারকেশ্বর শাখার সিঙ্গুর স্টেশনকে ঘিরেই শহরের বেড়ে ওঠা। স্টেশনের ঢিলছোড়া দূরত্বে বাজার, স্কুল, হাসপাতাল, থানা, বিডিও, পঞ্চায়েত অফিস। সরকারি নানা কাজে দূরের গ্রাম থেকে প্রতিদিন বহু মানুষ আসেন। তাই বাইরের মানুষের বাড়তি চাপ থাকে। কিন্তু এই উপরি চাপ নেওয়ার পরিকাঠামো কি আদৌ আছে এই শহরের? সোজা উত্তর—নেই।
স্টেশন লাগোয়া প্রধান রাস্তা অত্যন্ত অপরিসর। রাস্তার ধারেই বাস আর অটোস্ট্যান্ড। রাস্তার দু’ধারে দোকানের পসরা। দোকান উপছে রাস্তায় চলছে বিকিকিনি। ফল-ফুল বা গাছওয়ালা রাস্তার উপর ডালি সাজিয়ে বসেন। তাতে ছোট রাস্তা আরও ছোট হচ্ছে। হাঁটার জায়গা মেলা ভার। অবশ্য এ সব নিয়ে বিশেষ ভাবিত নয় পুলিশ-প্রশাসন। তার উপর আর এক যন্ত্রণা লেভেল ক্রসিং। লেভেল ক্রশিং বন্ধ হলেই রাস্তার দু’দিকে গাড়ির লাইন জমতে থাকে। পরিণামে যানজট। কাজে বেরিয়ে নাকাল হন মানুষ। বাসিন্দাদের প্রশ্ন, “রেল বা রাজ্য প্রশাসন কেন সিঙ্গুরে সাবওয়ে নির্মাণের জন্য ভাবছেন না?”
ঘটনাচক্রে এই জনপদেই রাজ্যের এক জোড়া মন্ত্রীর বাস। মানুষের প্রত্যাশা ছিল, তাঁদের কাঁধে ভর করেই এই শহর সার্বিক উন্নয়নের চেহারা পাবে। কিন্তু মানুষের আক্ষেপ, দেখতে দেখতে বর্তমান রাজ্য সরকারের বয়স চার বছর ছুঁইছুঁই। কিন্তু সেইভাবে গলা উঁচিয়ে বলার মতো শহরের কাজের কাজ হল কই? মানুষ প্রশ্ন তুললেও কিন্তু এক সময় রাজ্য রাজনীতির আকর্ষণের কেন্দ্রে থাকা এই শহর যে নতুন কোনও উদ্যোগ আদৌ দেখেনি, তা কিন্তু নয়। নতুন কলেজ হয়েছে, ট্রমা কেয়ার সেন্টার তৈরির ঘোষণা হয়েছে। তার জন্য জমি বাছা হয়েছে। কিন্তু ওই পর্যন্তই। ঘটনা হচ্ছে, প্রস্তাবিত হাসপাতাল এবং কলেজ নিয়ে বিস্তর প্রশ্ন উঠেছে। কলেজ ভবন তৈরির শুরুতেই হোঁচট খেয়েছে কাজ। নির্মাণ সামগ্রীর মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কলেজের সামনে রাস্তা তৈরি হলেও তার টেন্ডার ডাকা নিয়েও অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে বিস্তর জলঘোলা হয়। জেলা প্রশাসন ইতিমধ্যেই ওই অভিযোগের তদন্তে নেমেছে। হাসপাতাল তৈরির কাজও গতি পায়নি।
যত সময় যাচ্ছে সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, আর পাঁচটা সরকারি ঘোষণার মতো এই জোড়া ঘোষণা কথার কথা নয় তো? কেননা, কলেজ নিয়ে কর্তৃপক্ষ নানা সমস্যায় পড়ছেন। স্থানীয় একটি স্কুলে অস্থায়ী ভাবে কলেজ চলছে। কথা ছিল, দ্রুত কলেজ ভবন নির্মাণ হবে। কিন্তু এখনও তা তৈরি না হওয়ায় স্কুল ও কলেজ দুই কর্তৃপক্ষই ফাঁপড়ে। ছাত্রছাত্রীদের অবস্থাও একই।
এই আবহে সিঙ্গুরবাসীর প্রস্তাব, পুরসভায় উন্নীত করা হোক এই জনপদকে। একদিকে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে, অন্যদিকে রেল লাইন রয়েছে শহরে। রেল-সড়কের এই যোগাযোগ ব্যবস্তায় একমাত্র পুর-শহর হলেই সিঙ্গুর উন্নয়নের মুখ দেখবে। রাস্তা, নিকাশির উন্নতি হবে।
এই আওয়াজ শেষ পর্যন্ত প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তর পর্যন্ত পৌঁছয় কি না, সেটাই এখন দেখার।
(চলবে)