উন্নয়নের কর্মকাণ্ডই ‘ভোগান্তি’র কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বালিতে।
পানীয় জলের পাইপ বসাতে বেশ ক’মাস ধরে বালি পুর-এলাকার সব রাস্তা খুঁড়ে কাজ করছে কেএমডিএ। কিন্তু অধিকাংশ রাস্তা এখনও ভাঙাচোরা হয়ে রয়েছে। খোয়া ফেলে গর্ত বোজানোর চেষ্টা করায় তা আরও বিপজ্জনক আকার ধারণ করেছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, খারাপ রাস্তার জন্য প্রতি মুহূর্তে দুর্ঘটনা ঘটছে ওই সব এলাকায়। কিন্তু পুর-কর্তৃপক্ষ কেএমডিএ-র সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থাই নিচ্ছেন না। রাস্তার বেহাল দশার জন্য কেএমডিএ ও পুর-কর্তৃপক্ষ একে অপরের ঘাড়ে অসহযোগিতা ও সমন্বয়ের অভাবের অভিযোগ তুলেই দায় সেরেছেন।
বালি পুর-এলাকায় পানীয় জলের সমস্যা মেটাতে ক’মাস আগে বেলুড়ে জল-প্রকল্প তৈরি করেছে কেএমডিএ। সেখান থেকে জলের লাইন নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বিভিন্ন এলাকার ওভারহেড ট্যাঙ্কে। আবার ওভারহেড ট্যাঙ্ক থেকে এলাকায় জল সরবরাহ করতে পাইপলাইন বসানো হচ্ছে। এই সমস্ত কাজের জন্য ছ’-সাত মাস আগে থেকেই বালির বিভিন্ন অঞ্চলে রাস্তা খুঁড়তে শুরু করেছে কেএমডিএ।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, বালি পুরসভার ৩৫টি ওয়ার্ডের সব এলাকায় রাস্তা খোঁড়া হয়েছে অপরিকল্পিত ভাবে। কোথাও জেসিপি মেশিন দিয়ে রাস্তা খুঁড়তে গিয়ে ধস নেমেছে। কোথাও জলের পাইপ, সিইএসসি-র কেব্ল ছিঁড়ে বিপত্তি বেড়েছে। আবার রাস্তা খোঁড়ার পরে শুধু মাটি ফেলে গর্ত বুজিয়ে কাজ সারা হয়েছে। বৃষ্টির জলে সেই মাটি ধুয়ে বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বর্ষার সময়ে ভাঙা রাস্তা জলমগ্ন হয়েও বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল।
তবে পুজোর আগে বাসিন্দা ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের দাবিতে মাটি তুলে খোয়া ফেলে গর্ত বুজিয়ে প্রাথমিক ভাবে সামাল দেওয়া হয়েছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, রাস্তার হাল এত খারাপ যে খোয়ায় চাকা পড়ে মোটরবাইক পিছলে যাচ্ছে, রিকশা উল্টে যাচ্ছে, অ্যাম্বুল্যান্স পর্যন্ত ঠিক ভাবে ঢুকতে পারছে না অনেক এলাকায়।
তবে এই সমস্যার জন্য পুরসভার ও কেএমডিএ-র সমন্বয়ের অভাবকেই মূল কারণ বলে মনে করেন বাম পরিচালিত বালি পুরসভার বিরোধী কাউন্সিলরেরা। বালি পুরসভার তৃণমূল কাউন্সিলর তথা বিরোধী দলনেতা রেয়াজ আহমেদ বলেন, “পুরসভা রাস্তা নিয়ে কেএমডিএ-র সঙ্গে কখনও কোনও আলোচনা করেছে বলে জানা নেই। শুধু বোর্ড মিটিংয়ে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে চলেছেন চেয়ারম্যান।” আর এক তৃণমূল কাউন্সিলর শ্যামা পারভিন বলেন, “সরকারকে বদনাম করতেই কেএমডিএ-র সঙ্গে কোনও সমন্বয় রেখে চলেন না বালি পুরসভার সিপিএম পুর-প্রধান। রাস্তা সারাইয়ের বিষয়টি নাগরিক পরিষেবার মধ্যে পড়ে। এতে কোনও দলাদলি চলে না।”
অন্য দিকে, কেএমডিএ-র ডিজি (ওয়াটার প্রোজেক্ট) রজতমোহন চট্টোপাধ্যায়ও এ জন্য পুরসভার অসহযোগিতাকেই দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, “রাস্তায় কাজের জন্য বিভিন্ন অনুমতি পেতে ও অন্যান্য কোনও বিষয়েই পুরসভা আমাদের সহযোগিতা করেনি। রাস্তা খোঁড়ার আগে ওঁদের সঙ্গে কথা বলেই কাজ করা হয়েছে।” তিনি আরও জানান, রাস্তা সারানোর জন্য টেন্ডার তৈরি হয়ে গিয়েছে।
তবে বালি পুরসভার চেয়ারম্যান সিপিএমের অরুণাভ লাহিড়ী অবশ্য তাঁদের তরফে অসহযোগিতার অভিযোগ মানতে নারাজ। তাঁর কথায়, “কেএমডিএ বর্ষার পরে রাস্তা সারানোর জন্য দাবি করেছিল। তা আমরা মেনে নিয়েছিলাম। পুজোর আগে রাস্তা সারাতে বলেছিলাম। কিন্তু কাজ হয়নি। তবে ওঁদের টেন্ডার হয়েছে। আশা করি কাজ শুরু হবে।” এই চাপান-উতোরে আরও কত দিন ভাঙা রাস্তায় খুঁড়িয়ে চলতে হবে, তা নিয়েই আশঙ্কায় বালি।