চলছে প্রাথমিক কাজ। ছবি: দীপঙ্কর দে।
দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে হাওড়া-বর্ধমান কর্ড শাখার কামারকুণ্ডু স্টেশনের কাছে লেভেল ক্রসিংয়ে যানজটে নাজেহাল হন মানুষ। দুর্ভোগ এড়াতে ওই লেভেল ক্রসিংয়ের উপরে উড়ালপুলের দাবিও বহু দিনের। অবশেষে, সেই উড়ালপুলের জন্য মাটি পরীক্ষার কাজ শুরু করল পূর্ব রেল। শীঘ্রই রেলের পদস্থ কর্তারা এলাকাটি পরিদর্শনে যাবেন বলে পূর্ব রেল সূত্রে জানা গিয়েছে।
উড়ালপুলটি তৈরির জন্য সম্প্রতি আরামবাগের তৃণমূল সাংসদ আফরিন আলি (অপরূপা পোদ্দার) রেল-কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তারপরই বিষয়টি নিয়ে নাড়াচাড়া হয়। সাংসদ বলেন, “চেষ্টা করছি উড়ালপুলটি যাতে দ্রুত তৈরি করা যায়। রেলের একটি প্রতিনিধি দল শীঘ্রই ওই জায়গায় গিয়ে পুরো বিষয়টি পরিকল্পনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ করবেন।” পূর্ব রেলের এক কর্তা জানান, যানজট এড়াতে উড়ালপুলটি দ্রুত নির্মাণের চেষ্টা হচ্ছে।
কলকাতার সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলির যোগাযোগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা তারকেশ্বর-বৈদ্যবাটি রোড। এই রাস্তার সঙ্গেই দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে এবং দিল্লি রোডের মতো গুরুত্বপূর্ণ সড়কপথেরও সংযোগ রয়েছে। অথচ, এই রাস্তার উপরই হাওড়া-বর্ধমান কর্ড শাখার কামারকুণ্ডুর মতো গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনের লেভেল ক্রসিংয়ে কোনও উড়ালপুল নেই। ওই রেললাইন দিয়ে হাওড়া-দিল্লি এবং শিয়ালদহ-দিল্লি রাজধানী এক্সপ্রেস-সহ বহু গুরুত্বপূর্ণ ট্রেন চলে।
ফলে, বারেবারে বন্ধ হয় লেভেল ক্রসিংয়ের গেট। থমকে যায় যানবাহন। অথচ, সড়কপথে প্রচুর গাড়ি যাতায়াত করে এই গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটি দিয়ে। ওই পথ ধরেই তারকেশ্বর মন্দিরে যান বহু পুণ্যার্থী। বাঁকুড়া, দুই মেদিনীপুর, বর্ধমান জেলার সঙ্গে কলকাতা এবং লাগোয়া জেলাগুলির যোগাযোগেরও গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা এটি। ফলে, রাস্তায় সব সময়েই ভিড় থাকে। কিন্তু লেভেল ক্রসিংয়ের গেট দীর্ঘ ক্ষণ বন্ধ থাকায় নাজেহাল হন সাধারণ মানুষ। তাই সমস্যার সমাধানের জন্য রেললাইনের উপর উড়ালপুলের দাবি জানিয়ে আসছিলেন এলাকার মানুষজন-সহ ভুক্তভোগীরা।
পূর্ব রেল সূত্রের খবর, কয়েক দিন আগে ওই এলাকায় মাটি পরীক্ষার কাজ শুরু হয়েছে। রেলকর্তারা এলাকাটি পরিদর্শনের পরেই কাজে গতি আসবে। লেভেল ক্রসিংয়ের রাস্তার দু’ধারে বেশ কয়েকটি দোকান দীর্ঘদিন ধরেই রয়েছে। উড়ালপুলটি তৈরির জন্য সেই দোকানগুলিকে আপাতত সরিয়ে দিতে হবে। রেলের ম্যাপ অনুযায়ী দোকানগুলিকে ঠিক কোনও এলাকায় স্থানান্তরিত করা হবে তা সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনার পরেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
হরিপালের বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী বেচারাম মান্না বলেন, “দীর্ঘদিন আগেই ওই উড়ালপুলের জন্য বাজেটের টাকা বরাদ্দ হয়ে পড়ে রয়েছে। কিন্তু কাজ হয়নি। সম্প্রতি রেলের তরফে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। আশা করি শীঘ্রই উড়ালপুলের কাজ হবে।”
মাটি পরীক্ষার কাজ শুরু হওয়ায় খুশি ওই এলাকার মানুষজন। গাড়ি-চালকেরাও কিছুটা স্বস্তিতে। তাঁরাও চান, দ্রুত উড়ালপুলের কাজ শুরু করা হোক। ওই পথে গাড়ি নিয়ে ঘনঘন যাতায়াত করেন, এমনই এক গাড়ির চালক বলেন, “বিকেলের দিকে যখন দূরপাল্লার অনেক ট্রেন যায় তখন একবার রেলগেট বন্ধ হলে ত্রিশ-চল্লিশ মিনিট দাঁড়াতে হয়। সব কাজ পণ্ড হয়। উড়ালপুল হলে সেই সমস্যা মিটবে। অনেক আগেই এটা হওয়া উচিত ছিল।”