চলছে মাধ্যমিক, বিধায়ক মাইক ফুঁকলেন, গায়ক বিডিও

মাধ্যমিক পরীক্ষা যত ক্ষণ চলছে, রাজ্যের কোথাও মাইক বাজানোর নিয়ম নেই। অথচ এই সরকারি নির্দেশ স্রেফ তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে উলুবেড়িয়ায় বাণীবন গোহালবেড়িয়া উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নতুন ভবনের উদ্বোধনে দিব্যি মাইক ফোঁকা হল।

Advertisement

নুরুল আবসার

উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:১৫
Share:

গান গাইছেন বিডিও দেবব্রত রায়। বুধবার উলুবেড়িয়ায়। ছবি: সুব্রত জানা।

মাধ্যমিক পরীক্ষা যত ক্ষণ চলছে, রাজ্যের কোথাও মাইক বাজানোর নিয়ম নেই। অথচ এই সরকারি নির্দেশ স্রেফ তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে উলুবেড়িয়ায় বাণীবন গোহালবেড়িয়া উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নতুন ভবনের উদ্বোধনে দিব্যি মাইক ফোঁকা হল।

Advertisement

কারও চোখের আড়ালে নয়। ব্লক প্রশাসন আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করলেন উলুবেড়িয়া উত্তর কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক নির্মল মাজি। অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের সঙ্গে সমবেত সঙ্গীতে গলা মেলালেন উলুবেড়িয়া ২-এর বিডিও দেবব্রত রায়।

হাওড়া জেলা প্রশাসনের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘মাধ্যমিক পরীক্ষা চলার সময়ে মাইক বাজানোর ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তা সত্ত্বেও বাণীবন গোহালবেড়িয়া গ্রামে কী করে বিডিওর উপস্থিতিতেই এত সব ঘটল, সে বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।” বিডিও-র দাবি, “কাছাকাছি কোনও মাধ্যমিক পরীক্ষাকেন্দ্র নেই। ফলে কারও কোনও অসুবিধা হয়নি।” বিধায়কের দাবি, “যথেষ্ট নিচু আওয়াজে মাইক বাজানো হয়েছে। কোনও নিয়ম ভাঙা হয়নি।”

Advertisement

অনুষ্ঠান স্থলের একেবারে কাছে কোনও পরীক্ষা কেন্দ্র নেই, তা ঠিকই। তবে কিলোমিটার দুয়েকের মধ্যে বাণীবন গার্লস হাইস্কুলে মাধ্যমিক পরীক্ষার কেন্দ্র হয়েছে। পরীক্ষার্থীদের অনেকেই গোহালবেড়িয়া এলাকার ছাত্রছাত্রী। দুপুর ১২টা থেকে পরীক্ষা শুরু। অনুষ্ঠান শুরু হয় তার দু’ঘণ্টা আগে, সকাল ১০টায়।

এলাকাবাসীর বড় অংশের অভিযোগ, সকাল ৮টা থেকেই মাইক বাজানো শুরু হয়ে গিয়েছিল। উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নতুন বাড়ির ছাদে চারকোণে চারটি চোঙা ও একাধিক বক্সে গান বাজতে থাকে। বেলা ১০টা থেকে শুরু হয় বক্তৃতা, গান, আবৃত্তি, নৃত্যানুষ্ঠান। বিধায়ক নির্মলবাবু বক্তৃতা শুরু করেন বেলা ১১টা নাগাদ।

তত ক্ষণে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের শেষ কয়েক ঘণ্টার প্রস্তুতি শিকেয় উঠে গিয়েছে। একাধিক ছাত্রছাত্রীর অভিযোগ, মাইকের শব্দে পড়ায় মন বসা দূরস্থান, তাদের উল্টে মাথা ধরে যাচ্ছিল। ওই অবস্থাতেই তারা পরীক্ষা কেন্দ্রের উদ্দেশে রওনা হয়।

প্রায় এক ঘণ্টা বক্তৃতা চলার পরে দুপুর ১২টা নাগাদ এক অঙ্গনওয়াড়ি এবং এক আশা কর্মী গান গাইতে মঞ্চে ওঠেন। তাঁদের সঙ্গে গলা মেলান বিডিও দেবব্রত রায় ‘ধনধান্য পুষ্প ভরা, আমাদের এই বসুন্ধরা’। তিন-চারশো দর্শকের হাততালিও বাজতে থাকে। এ সব পাট চুকতে-চুকতে বেলা ২টো গড়িয়ে যায়।

এ দিন অনুষ্ঠান চলার মাঝেই এলাকার অনেকে বিরক্তি প্রকাশ করে ফেলেন। ব্লক প্রশাসনের অনুষ্ঠান হলেও সেখানে আমন্ত্রণ পাননি উলুবেড়িয়া-২ পঞ্চায়েত সমিতির সিপিএম সদস্য শিবপ্রতীম মণ্ডল। তিনি বলেন, “মাধ্যমিক চলাকালীন যখন মাইক বাজানোয় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, প্রশাসনিক কর্তার সামনেই কী ভাবে এ সব ঘটল, বুঝলাম না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন