Biswa Bangla University

বিশ্বভারতীর সঙ্গে কি টক্কর নতুন পড়শি বিশ্ববাংলা বিশ্ববিদ্যালয়ের

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মুক্তচিন্তা-দর্শনকে পাথেয় করে পথ চলা শুরু করবে বিশ্বভারতীর অদূরে নির্মীয়মাণ ‘বিশ্ববাংলা বিশ্ববিদ্যালয়’।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০২০ ০৪:৩৩
Share:

তৈরি হচ্ছে বিশ্ববাংলা বিশ্ববিদ্যালয়। —নিজস্ব চিত্র

বিশ্বভারতী আছেই। এ বার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মুক্তচিন্তা-দর্শনকে পাথেয় করে পথ চলা শুরু করবে বিশ্বভারতীর অদূরে নির্মীয়মাণ ‘বিশ্ববাংলা বিশ্ববিদ্যালয়’। সোমবার বোলপুরের প্রশাসনিক বৈঠকের মঞ্চ থেকে সেই যাত্রাপথের মূল সুর বেঁধে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য নিযুক্ত হয়েছেন বিশ্বভারতীর প্রাক্তন ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য স্বপন দত্ত।

Advertisement

এ দিন প্রশাসনিক সভার মঞ্চ থেকেই মুখ্যমন্ত্রী পরিষ্কার করেছেন, রাজ্য প্রশাসন ঠিক কী চাইছে। উপাচার্য স্বপনবাবুর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘আমি চাই বিশ্ববাংলা বিশ্ববিদ্যালয়েও রবীন্দ্র-সংস্কৃতির প্রকাশ ঘটুক। বিশেষত, এখানকার ছাত্র-ছাত্রীরা নৃত্য, সঙ্গীত, শিল্পকলা প্রভৃতি বিষয়ে পারদর্শী হোক।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘বিশ্বভারতীতে যে ভাবে পৌষমেলা থেকে শুরু করে সবই বন্ধ হয়ে গিয়েছে, ওগুলো আপনারা আস্তে আস্তে নিয়ে নিন। মানে নিজেদের জায়গায় নিয়ে নিন।’’ বিশ্বভারতীতে পাঁচিল-বিতর্ক নতুন নয়। সেই প্রসঙ্গ তুলেও মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “সব জায়গায় পাঁচিল তুলে দিলে তো সেলফিশ জায়েন্টের কথা চলে আসবে! আমরা চাই রবীন্দ্রনাথের মুক্তশিক্ষার আদর্শ আপনারা এখানে নিয়ে আসুন। আর স্বপনবাবু যেহেতু বিশ্বভারতীতে উপাচার্যের দায়িত্ব সামলেছেন, তাই তিনি সবটাই জানেন।”

২০১৭ সালে মুখ্যমন্ত্রী বোলপুর সংলগ্ন শিবপুরে বিশ্ববাংলা বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণের ঘোষণা করেন। ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ প্রায় ৭০-৮০ শতাংশ শেষ বলেও তিনি এ দিন জানান। বাকি কাজ দ্রুত শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় চালু করার কথাও বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। উপাচার্য স্বপনবাবু জানিয়েছেন, ২০ একর জায়গা জুড়ে ক্লাসরুম, ছাত্রীনিবাস, কলাবিভাগ, বিজ্ঞান বিভাগ, কার্যালয়, স্পোর্টস কমপ্লেক্স সহ বিভিন্ন নির্মাণের কাজ চলছে। মোট বরাদ্দ ৩৬০ কোটি টাকারও বেশি। আগামী জানুয়ারি থেকেই বাংলা, ইতিহাস ও ইংরেজি বিভাগে স্নাতকোত্তরে ভর্তি হবে। আবেদনপত্র গ্রহণের কাজও শুরু হয়েছে। স্বপনবাবু বলেন, ‘‘এখন অনলাইনে ক্লাস হবে। ছ’মাসের মধ্যেই নির্মাণের কাজ কিছুটা সম্পূর্ণ করার চেষ্টা হচ্ছে।’’ ২০২২ সালের শুরুতেই বিশ্ববিদ্যালয় সম্পূর্ণ চেহারা লাভ করবে বলেও আশাবাদী তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের ভিত্তিতে তিনি বলেন, “বিশ্ববাংলার অ্যাক্টে রাবীন্দ্রিক চিন্তাভাবনাকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বাংলার কৃষ্টি, সংস্কৃতি, সাহিত্য, কলা প্রভৃতিকে জাতীয় তথা আন্তর্জাতিক স্তরে পৌঁছে দেওয়ার বিষয়কে আমরা নিশ্চয় গুরুত্ব দেব।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: তাঁর মতোই লক্ষ্য অমর্ত্য সেন, সরব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

আরও পড়ুন: অমর্ত্যকে নিয়ে সঙ্ঘাতের জের? বিশ্বভারতীকে দেওয়া রাস্তা ফিরিয়ে নিলেন মমতা

নতুন আরও একটি বিশ্ববিদ্যালয় ও তার মত-পথ নিয়ে নানা মত জানিয়েছেন বিশিষ্টেরা। ইতিহাসবিদ ও বিশ্বভারতীর প্রাক্তন উপাচার্য রজতকান্ত রায়ের কথায়, ‘‘বিশ্বভারতী দীর্ঘদিন কেন্দ্রীয় অনুদান পায়নি। তাতে কাজে বিঘ্ন ঘটছে। রাজ্য সরকারের উদ্যোগে নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কী মাত্রা যোগ করবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।’’ আর এক ইতিহাসবিদ সুগত বসু অবশ্য আশাবাদী। তিনি বলছেন, ‘‘এখনও আশা করব বিশ্বভারতীর গরিমা পুনরুদ্ধার করা যাবে। নতুন শিক্ষাঙ্গনের প্রতিও শুভেচ্ছা থাকল। সেখানে যেন রবীন্দ্র আদর্শ অনুসরণ করে শিক্ষার মুক্ত পরিবেশ গড়ে ওঠে।’’ কবি জয় গোস্বামীর মতে, ‘‘মমতা রবীন্দ্রশিক্ষা, চিন্তার ধারা বহমান রাখার কাজ করছেন। সব বাঙালির তাতে সাধুবাদ জানানো উচিত।’’ রাজ্যসভার বিজেপি সাংসদ স্বপন দাশগুপ্তের কটাক্ষ, ‘‘বিশ্ববাংলা বিশ্ববিদ্যালয়কে উনি রবীন্দ্র আদর্শে গড়তে চাইছেন। তাতে কেউ বাধা দিচ্ছে না। তবে রাজ্য সরকারের পরিচালনায় থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলি দেখলে ওঁর শিক্ষানীতির প্রতি কারও আস্থাই বাড়বে না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement