মমতার অনুকূলে রান্নাঘরই সেই মেয়ের পড়ার ঘর

সেই নড়বড়ে দোকানে দাঁড়িয়ে ১০ জুলাইয়ের সেই ঘটনার কথা বলছিলেন অনুকূল। তিনি বলেন, “আমাকে মুখ্যমন্ত্রী ডেকে জানতে চান, কী লাগবে। শুধু বললাম, মেয়েটাকে পড়াতে পারছি না। আমায় ৬ হাজার টাকা দেন তিনি।”

Advertisement

অনির্বাণ রায়

শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৮ ০৪:৪২
Share:

পাঠে মন: সঞ্চিতা কুড়ি। ছবি: সন্দীপ পাল

খকখক কাশি দিলে ঠকঠক নড়ে! ফাটাপুকুরের জাতীয় সড়কের পাশে চায়ের দোকান দেখে, সুকুমার রায়ের বুড়ির বাড়ি ছড়ার এই লাইনই মনে পড়ে। চায়ের দোকান বটে, তবে সেখানে বাড়ির রান্নাও হয়। কারণ, ইন্দিরা আবাস যোজনায় পাওয়া বাড়ির রান্নাঘরটি মেয়ে সঞ্চিতাকে পড়ার জন্য ছেড়ে দিয়েছেন অনুকূল কুড়ি। শনিবার কলকাতায় ২১শে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে সেই মেয়েকে পড়ানোর যাবতীয় ভার গ্রহণের কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “কোচবিহার থেকে ফেরার পথে জলপাইগুড়িতে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন ওই বৃদ্ধ। তাঁকে ডেকে কথা বলি। আমাকে মা বলে ডেকে উনি জানান, অভাবের কারণে মেয়ের পড়াশোনা হচ্ছে না।” তার পরে মমতা বলেন, ‘‘আমি ফিরে এসে মেয়েটির সঙ্গে যোগাযোগ করি। ওর পড়াশোনার যাবতীয় ব্যবস্থা করে দিই। ওকে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে এসেছি।’’

সেই নড়বড়ে দোকানে দাঁড়িয়ে ১০ জুলাইয়ের সেই ঘটনার কথা বলছিলেন অনুকূল। তিনি বলেন, “আমাকে মুখ্যমন্ত্রী ডেকে জানতে চান, কী লাগবে। শুধু বললাম, মেয়েটাকে পড়াতে পারছি না। আমায় ৬ হাজার টাকা দেন তিনি।” জেলা প্রশাসন সূত্রে বলা হচ্ছে, অনুকূল ও তাঁর মেয়ের জন্য বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের টাকা এর মধ্যেই মঞ্জুর হয়েছে, যা সব মিলিয়ে ৫০ হাজার টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।

Advertisement

এক বছর আগে স্নাতক হয়েছেন সঞ্চিতা। এডুকেশন নিয়ে স্নাতকোত্তর পড়ার ইচ্ছে ছিল। দাদা দুর্ঘটনায় পঙ্গু হয়ে যাওয়ার পরে তিনিই বাবা-মায়ের শিবরাত্রির সলতে। তাঁকে আরও পড়াতে চান অনুকূল। সঞ্চিতা বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী আমার কথা বলেছেন, ভাবতেই পারছি না। এ বার হয়তো এমএ পড়ার সাধ পূরণ হবে।’’ একটু থেমে বলেন, “একটা চাকরি পেলে বাবা-মা-দাদাকে খাওয়াতে পারতাম। ক’দিন পরে তো দোকানটাও থাকবে না।” মাসখানেকের মধ্যে জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের ধাক্কায় চলে যাবে ওই নড়বড়ে দোকান। অনুকূলের তবু প্রত্যয়, ‘‘আজ আমার মেয়ের পড়ার ভার নেওয়ার কথা বললেন। মা (মুখ্যমন্ত্রী) কিছু একটা ঠিক করবেন।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement