প্রতীকী ছবি।
প্রতারিত হলে আম-নাগরিকেরা পুলিশেরই দ্বারস্থ হন। কিন্তু এ বার কলকাতা পুলিশের এক পদস্থ কর্তার হাতেই প্রতারিত হওয়ার অভিযোগ আনলেন রামচন্দ্র বিশ্বাস নামে মুর্শিদাবাদের এক ব্যক্তি। তাঁর অভিযোগ, চাকরি দেওয়ার নাম করে কলকাতা পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের ডিসি (২) স্বাধীন সাহা ও তাঁর কয়েক জন অধস্তন কর্মচারী প্রায় সাড়ে ২১ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। রামচন্দ্রবাবু সরাসরি আলিপুর আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। আদালতের নির্দেশে মানিকতলা থানা প্রতারণা ও দুর্নীতির মামলা রুজু করেছে।
মামলা রুজুর ব্যাপারে স্বাধীনবাবু বলেন, ‘‘আমার এ ব্যাপারে কিছু জানা নেই। তবে বিভাগীয় তদন্ত চলছে।’’ লালবাজার সূত্রের খবর, চলতি মাসে তাঁর চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার কথা।
রামচন্দ্রবাবু আদালতকে জানিয়েছেন, তিনি এবং অভিযুক্ত এক স্কুলে প়ড়েছেন। ২০১৬ সালের ২৬ জানুয়ারি গ্রামে গিয়ে তাঁর ছেলে মধুসূদনকে পুলিশে চাকরির জন্য আবেদন করতে বলেন স্বাধীনবাবু। সাহায্যের প্রস্তাবও দেন। তখন তিনি কলকাতা সশস্ত্র পুলিশের পঞ্চম ব্যাটেলিয়নে সহকারী কমিশনার পদে ছিলেন। কিছু দিন পরে কলকাতা পুলিশের কনস্টেবল পদে চাকরির পরীক্ষায় ডাক পান মধুসূদন। তার পরেই স্বাধীনবাবুর সঙ্গে দেখা করেন তাঁরা। সে সময় এক কনস্টেবলের সামনেই চাকরি পাইয়ে দেওয়ার জন্য ৭ লক্ষ টাকা চান অভিযুক্ত। তিনি দেহরক্ষীর হাতে ওই টাকা দিতে বলেন বলেও রামচন্দ্রের অভিযোগ।
অভিযোগকারীর দাবি, ওই বছর সেপ্টেম্বরে রেসকোর্সে কলকাতা পুলিশের নিয়োগ পরীক্ষার সময় তাঁদের গ্রামের আরও দুই যুবকের কাছ থেকে মাথাপিছু ৭ লক্ষ টাকা নেওয়া হয়। ওই যুবকদের এক জন শারীরিক সক্ষমতার পরীক্ষায় পাশ না করায় অতিরিক্ত ৫০ হাজার টাকা দেন। অভিযোগ, টাকা নেওয়া হলেও চাকরি দেওয়া হয়নি। বারবার টাকা চেয়েও ফেরত পাননি রামচন্দ্র। এর মাঝেই স্বাধীনবাবু পদোন্নতি পেয়ে ডেপুটি কমিশনার হন। টাকা চাইলে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।
লালবাজার সূত্রের খবর, পুলিশ কমিশনারের কাছেও এই সংক্রান্ত অভিযোগ পৌঁছেছে। বিভাগীয় তদন্তের পাশাপাশি দুই কনস্টেবলকে সাসপেন্ডও করা হয়েছে। একটি সূত্র জানাচ্ছে, কলকাতা পুলিশের কনস্টেবল নিয়োগ প্রক্রিয়ার মধ্যে যুক্ত ছিলেন স্বাধীনবাবু। ২০১৭ সালের মাঝামাঝি নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ হয়েছিল। তার পরে টাকা দিয়ে চাকরি না পাওয়ার একাধিক অভিযোগ উঠেছিল। কিন্তু কোনওটির ক্ষেত্রেই মামলা রুজু হয়নি। কিছু ক্ষেত্রে অভিযুক্তদের সাসপেন্ড করে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছিল। প্রশ্ন উঠেছে, ডিসি পদের অফিসারের বিরুদ্ধে মামলা রুজু হওয়ার পর এ বার বাকি অভিযোগ নিয়েও কি নড়ে বসবে লালবাজার?