পৃথ্বীরাজ দত্ত।
বন্ধুকে ছাড়তে রাজপুরে গিয়েছিলেন। কথা ছিল বাঁশদ্রোণীর কাছ থেকে বাবাকে তুলে নিয়ে বাড়ি ফিরবেন। কিন্তু বাবার কাছে পৌঁছনোর আগেই পণ্যবাহী লরির চাকায় পিষে মৃত্যু হল ছেলের। বৃহস্পতিবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু রোডের উপরে নেতাজিনগর থানা এলাকায়। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম পৃথ্বীরাজ দত্ত (২৬)। বাড়ি নেতাজিনগর থানা এলাকারই কালীতলা পার্কে।
পুলিশ সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১১টা নাগাদ লক্ষ্মীনারায়ণ সেতুর উপর থেকে মোটরবাইক নিয়ে নামছিলেন পৃথ্বীরাজ। আচমকা একটি লরি এসে সজোরে ধাক্কা মারে তাঁর বাইকটিতে। তাতে তিনি ছিটকে রাস্তার উপরে পড়ে গেলে তাঁর মাথার উপর দিয়েই লরির চাকা চলে যায়। স্থানীয় লোকজন সঙ্গে সঙ্গে লরিটিকে আটকে নেতাজিনগর থানায় খবর দেয়।
পুলিশ পৃথ্বীরাজকে উদ্ধার করে এম আর বাঙুর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এ দিকে তখনও বাঁশদ্রোণীর মোড়ে পৃথ্বীরাজের বাবা বাণীব্রত দত্ত অপেক্ষা করছিলেন। পরে ছেলের মোবাইল হাতড়ে পুলিশ যখন তাঁকে ফোন করে ততক্ষণে সব শেষ।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
শোকাহত: ছেলের মৃত্যুর খবর শুনে পৃথ্বীরাজের মা। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র
শুক্রবার সকালে পৃথ্বীরাজের কালীতলা পার্কের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল বাড়ি ভর্তি লোকজন। বাইরে অপেক্ষা করছে পৃথ্বীরাজের স্কুল, কলেজ থেকে শুরু করে ছোটবেলার বন্ধুরা। সকলে পৃথ্বীরাজকে ‘রাজা’ বলে ডাকেন। ভিতরে দশ ফুট বাই দশ ফুটের দু’টি ঘর। সামনে সরু একফালি বারান্দা। দু’টি ঘরেই ভর্তি লোকজন আর আত্মীয়স্বজনে। এমনই একটি ঘরের খাটে বসে রয়েছেন পৃথ্বীরাজের বাবা বাণীব্রত দত্ত এবং পাশের একটি চেয়ারে মা জলি দত্ত। দু’জনই ছেলের মৃত্যুর খবর বিশ্বাস করতে পারছেন না। শুধু বাবা-মা নয়। বছর ৮৭-র বৃদ্ধা ঠাকুরমাও থম মেরে বসেছিলেন একমাত্র নাতির মৃত্যুর শোকে।
মাঝে মাঝেই মা জলিদেবী নিজের মনেই কথা বলে চলেছেন। কখনও ছেলের স্কুলের গল্প করছেন। কখনও কলেজের কথা। সে সব থেকেই জানা গেল, অ্যাসেম্বলি অব গড চার্চ থেকে পাশ করার পরে স্কটিশ চার্চ কলেজে জীববিদ্যা নিয়ে পৃথ্বীরাজ স্নাতক পাশ করেন। পরে এমবিএ করে একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজও করেছিলেন। কিন্তু সেটি ছে়ড়ে দিয়ে বর্তমানে বিভিন্ন সরকারি চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। নানা কথার মাঝেই জলিদেবীর অভিযোগ, ‘‘ছেলের মাথায় হেলমেট ছিল। রাস্তার এক পাশ দিয়েই আসছিল। তার পরেও কী করে লরি ওকে মেরে চলে গেল?’’ কখনও আবার তাঁর হতাশ চোখে প্রশ্ন, ‘‘কে হাল ধরবে আমাদের শেষ জীবনে!’’
পৃথ্বীরাজের এক আত্মীয়া জানালেন, বাণীব্রতবাবু গড়িয়ায় একটি গির্জার ফাদার। তবে পাশাপাশি শিক্ষকতা করেন। তা থেকেই রোজগার করে ছেলেকে পড়াশোনা করিয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাতে কোচিং সেন্টারে পড়িয়ে বাঁশদ্রোণী মোড়ে দাঁড়িয়েছিলেন ছেলের অপেক্ষায়। আর তখনই দুর্ঘটনা ঘটে। পরে হাসপাতালে যখন স্ত্রীকে নিয়ে যান তত ক্ষণে ছেলের মৃত্যু হয়েছে।